প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:২০ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৫৪ পিএম
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘অবিস্মরণীয় এক দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা। প্রবা ফটো
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মানুষের আত্মত্যাগের ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ডাক, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল তার সবই ছিল স্বাধীনতার পথে ধারাবাহিক ঘটনা।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘অবিস্মরণীয় এক দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারের কথা বলতে গেলে ৭ মার্চের কথা আসবে। সেই ৭ মার্চের স্বাধীনতার ডাক পৌঁছে গিয়েছিল তখনকার অজপাড়াগাঁয়ের মেহেরপুরে। সেকারণেই আজকের ১৭ এপ্রিল। মার্চের ৩০ তারিখ থেকে ১৭ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত দেশের মুক্তিকামী মানুষের কোনো প্রকার স্বীকৃতি ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি কাছে নিতেন। এটা তার কোনো রাজনৈতিক কৌশল ছিল না। স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি মানুষকে কাছে নিতেন। আমি মনে করি, আমরাও যদি মানুষের কাছে থাকি তাহলে আমরা মানুষের সমস্যা এবং সুখ দুঃখকে ভালো করে বুঝতে পারব। তখনই কিন্তু এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ আজকে যে পর্যায় এসেছে তার জন্য অনেকেই যেমন বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন তেমন দুর্নামও করছে অনেক দেশ।
‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমারা প্রচুর রক্তচক্ষু দেখিয়েছিল। কিন্তু আমরা আমাদের নৈতিকতা, উৎসাহ ও উদ্দীপনায় সে সমস্ত রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জয় নিয়ে এসেছি। আজকেও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রক্তচক্ষু রাঙাবেন। আমাদের সে দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমরা আমাদের দেশের জন্য কাজ করলে এরাই থামতে বাধ্য হবে। আমরা সে কাজই করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এবারও আমরা বিজয়ী হব।’
প্রধান বক্তার বক্তব্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলা ও বাঙালির স্বপ্ন কখনই পূরণ হতো না। জাতির পিতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে শঙ্কা দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে রাখতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করার তাগিদ দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইাতিহাস যথাযথভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরতে না পারলে আগামী দিনের স্মার্ট বাংরাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিদের কলকাতা থেকে আসার জন্য ৪০টি গাড়ি ব্যবহৃত হয়। যে গাড়িগুলোর ব্যবস্থা করেছিলেন নিহার চক্রবর্তী। তিনি সাংবাদিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তি কেউই নন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। এই ৪০টি গাড়ি যাদের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন তাদেরকে তিনি বলে দিয়েছিলেন, দয়া করে ট্যাংকি ভরে তেল দিও যেন সারা দিন গাড়িটি চলতে পারে। ১৬ এপ্রিল রাতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এই গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর দর্শন সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে না।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, মুজিবনগরে গার্ড অব অনার প্রদানকারী মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. রাশিদ আফসারী ও সিনিয়র সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরীসহ প্রমুখ।