ফয়সাল খান
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২২ এএম
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৫ এএম
ফাইল ফটো
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে রাজধানীর বায়ুদূষণ। এর জন্য প্রধানত ইটভাঁটাকে দায়ী করা হলেও খোলা পরিবেশে নির্মাণকাজও বড় ভূমিকা রাখছে বলে এক গবেষণায় তথ্য এসেছে।
ঢাকা ও এর আশপাশে অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষিত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ অধিদপ্তর নামমাত্র কয়েক জায়গায় জরিমানা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না।
বাংলাদেশের বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষিত হচ্ছে অপরিকল্পিত নির্মাণযজ্ঞে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতায় কী পরিমাণ ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তা নিয়ে সর্বশেষ ২০১৬ সালের একটি জরিপ করে সংস্থাটি।
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি নির্মাণাধীন ভবন প্রায় ৯৫ হাজার। এরপর এ-সংক্রান্ত আর কোনো জরিপ না করলেও বর্তমানে নির্মাণাধীন ভবনের সংখ্যা এর কাছাকাছি হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়কে উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ চলছে। ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাস, বিটিআরসিসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের সার্ভিসলাইন সংস্কার ও স্থাপনের জন্য সড়ক কেটে থাকে। অনেক এলাকায় সড়ক কেটে মাসের পর মাস ফেলে রাখতে দেখা যায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল যেকোনো নির্মাণকাজ ঢেকে করার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। এমনকি কোনো ঢাকনা ছাড়াই খোলা ট্রাকে নির্মাণসামগ্রী পরিবহন করা হয়। অথচ নির্মাণসামগ্রী ও বর্জ্য ঢেকে পরিবহন করার নির্দেশনা ছিল।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নির্মাণ খাত থেকে ৩০ শতাংশ বায়ুদূষণ হচ্ছে বলে ক্যাপসের গবেষণা। খোলা পরিবেশে অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজের কারণে বায়ুতে ধূলিকণাসহ নানা ধরনের ধাতব পদার্থ মিশে যাচ্ছে। অবৈধ ইটভাঁটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় এ খাতে দূষণ কমে যাওয়ায় এর ওপরে উঠে এসেছে নির্মাণ খাত। আগে মোট বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশ হতো ইটভাঁটা থেকে। বর্তমানে তা ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে বলে ক্যাপসের গবেষণা।
ঢাকায় প্রায় ১৫ লাখ নিবন্ধিত যান চলাচল করছে। বিআরটিএর হিসাবেই এক-তৃতীয়াংশ ফিটনেস ছাড়া চলাচল করছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়ির কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের জন্য ১৫ শতাংশ দায়ী। তা ছাড়া গৃহস্থালির নানা কাজে ৯ শতাংশ, বর্জ্য পোড়ানো ৮ শতাংশ ও অন্যান্য ৯ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী বলে ক্যাপসের গবেষণা।
দূষণ ছড়াচ্ছে সারা দেশে
শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই ছড়াচ্ছে বায়ুদূষণ। বিশ্বের প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেট ২০১৭ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, পরিবেশ দূষণের ফলে মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনার মতো শহরে বায়ুদূষণ চরম আকার ধারণ করার পর এখনও মফস্বল শহরে মোটামুটি সে রকমই করুণ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কুমিল্লার বাতাস একসময় রাজশাহীর চেয়ে ভালো ছিল। এবার দূষিত শহরের তালিকায় কয়েকবার কুমিল্লার নাম এসেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুদূষণ রোধ করতে আইন করা হলো, কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়নি। আদালতের রায়ও যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতায় এ সংকট আরও বড় হচ্ছে।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্মাণকাজ থেকে যে ধুলাবালু উড়ছে, সেখানে তারা সরাসরি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে তারা অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করেছেন। তা ছাড়া জাতীয় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে তিনি জানান।