রাশেদ মেহেদী
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। গতকাল শুক্রবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি জানিয়েছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। সে বিষয়গুলো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নীতি গবেষণাবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’ বলছে, বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিকে যোগ দেওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং এ বিষয়ে ঢাকা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির একটি খসড়া তৈরি করেছে। গত ৩০ মার্চ সংখ্যায় ‘বাংলাদেশ টিল্ট টুওয়ার্ডস দ্য ইউএস ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক’ শিরোনামে প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য তুলেছে ম্যাগাজিনটি। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। তবে এই সময়ে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলে তার অংশীদারদের দ্বারা পরিচালিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যোগ দেওয়ার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে ঢাকা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এ ছাড়া মার্চ মাসেই যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক মন্ত্রী অ্যান মেরি ট্রেভেলিয়ান বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষেরে সঙ্গে তার এ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নয়াদিল্লি সফরের সময় বক্তব্যে এই অঞ্চলের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিককে একটি ‘নতুন পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং একটি নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিসহ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি মুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইঙ্গিত দিয়েছে যে, বাংলাদেশের অবশ্যই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ হওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কেন বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশ নিতে চাচ্ছে তা বোঝা সহজ। বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ভারতের সীমান্তবর্তী এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উভয়ের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। এরই মধ্যে অবকাঠামোগত ঋণের মাধ্যমে চীন বাংলাদেশে তার নিজস্ব প্রভাব বাড়িয়েছে, যাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ঢাকার জন্য খারাপ চুক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছে। চীন ভারত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে জিবুতিতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটিসহ তার বর্ধিত নৌ উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া চীন বাংলাদেশের অস্ত্রের একটি বড় সরবরাহকারীও। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে ঢাকার যোগদান একটি কৌশলগত বিজয় হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এখানে ঢাকা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কিংবা কোয়াডে যোগ দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী হবে তা নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ঢাকাকে মার্কিন শিবিরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও তুলেছেন।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শান্তিপূর্ণ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করা। বাংলাদেশ এ বিষয়গুলোর সঙ্গে একমত। কিন্তু এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং নিরাপদ ডাটা ব্যবস্থাপনায় যৌথ সহযোগিতার প্রসঙ্গও এনেছে। বাংলাদেশ এ দুটি বিষয় বিশ্লেষণ করছে। মূলত বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে অর্থ পাচারে উন্নত দেশগুলোই নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে। যেমন সহজ শর্তে তাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়। ফলে অর্থ পাচার বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়টি আরও গভীরভাবে দেখার বিষয় রয়েছে।
আবার নিরাপদ ডেটা ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক চীনের কোম্পানির পণ্যমুক্ত হতে হবে। এ বিষয়টি ঠিক কী সেটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অতএব এ বিষয়টিও বাংলাদেশ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছে। আর বাংলাদেশ তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী কোনোভাবেই সামরিক কৌশলগত কোনো অবস্থানে কোনো পক্ষ নেবে না। এরই মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করেছেন। অতএব ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে বাংলাদেশ আরও বিচার-বিশ্লেষণ করবে। এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।