× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভয়াল ২৫ মার্চ আজ

আজিজুল পারভেজ

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩ ০০:৩৩ এএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩২ এএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ; ভয়াল কালরাত। ১৯৭১ সালে এই দিনে ঘটেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিকৃষ্টতম গণহত্যা শুরু করে। এই গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত মানব সভ্যতার ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যার একটি।

২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে এই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত পাস হয়। তারপর থেকে ২৫ মার্চ প্রতি বছর জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দিনটি এখনও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হয়নি। একাত্তরের ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বাঙালি নিধনযজ্ঞের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশের বুকে যে নৃশংসতা চালিয়েছিল তার ক্ষতচিহ্ন চিহ্নিত করার কাজ এগিয়ে চলেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই জানা যাবে সারা দেশে কী পরিমাণ গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। কী পরিমাণ বধ্যভূমি, গণকবর ও নির্যাতনকেন্দ্র রয়েছে, সে তথ্যও জানা যাবে।

খুলনায় স্থাপিত ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’সারা দেশের ৬৪ জেলায় গণহত্যা-গণকবর, বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্র সম্পর্কে যে জরিপ পরিচালনা করছে তা এ বছরের ডিসেম্বর মাসে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। 

গণহত্যা জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ৩৯টি জেলায় একাত্তরের গণহত্যার জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপ অনুসারে, এসব জেলায় ১৬ হাজার ১৪৯টি গণহত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব জেলায় গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন মিলেছে ৩ হাজার ১৬৬টি। এর মধ্যে বধ্যভূমি ৮২৩টি, গণকবর এক হাজার ২৪৩টি ও নির্যাতনকেন্দ্র এক হাজার ১০০টি। 

গণহত্যার ঘটনা সম্পর্কে আগের ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে এই জরিপ। খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মুক্তিযুদ্ধ কোষ-এর দ্বিতীয় খণ্ডে দেশে ৯৫২টি গণহত্যার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন। এই সংখ্যা এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, গণহত্যা জাদুঘরের জরিপ সম্পন্ন হলে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন বলে যে ধারণা রয়েছে তাও হয়তো ছাাড়িয়ে যাবে। 

গণহত্যা জাদুঘরের জরিপের পরিসংখ্যান অনুসারে, সারা দেশে কী পরিমাণ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। ৩৯ জেলায় ১৬ হাজার ১৪৯টি গণহত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকলে প্রতি জেলায় গড়ে ৪১৪টি করে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা যায়। এই হিসাবে ৬৪ জেলায় ২৬ হাজার ৪৯৬টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা যায়। এই হিসাবে ৬৪টি জেলায় গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন ৫ হাজার ১৮৪টি রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

এ পর্যন্ত জরিপে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, সবচেয়ে বেশি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে খুলনা জেলায়। সেখানে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ১৫৫। আর সবচেয়ে কম গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলায়। সেখানে গণহত্যা হয়েছে ১৯। 

গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব ড. চৌধুরী শহীদ কাদের প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ২০১৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গণহত্যা জাদুঘর সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জরিপ অনুসন্ধান শুরু করেছে। আগামী অক্টোবর মাসে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে। 

জানা গেছে, গণহত্যা জাদুঘরের পক্ষ থেকে গণহত্যার স্মৃতিচিহ্নগুলোকে কেবল চিহ্নিতই করা হচ্ছে না, সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাক্ষী গণহত্যার স্থান, বধ্যভূমি, গণকবর, নির্যাতনকেন্দ্র ও স্মৃতিফলক চিহ্নিত করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রকাশ করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক জিপিএসের (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সহায়তায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয় করে নিখুঁতভাবে একাত্তরের স্মৃতিচিহ্নগুলো বিস্তারিত বিবরণসহ তুলে ধরা হয়েছে ইন্টার-অ্যাকটিভ ম্যাপে। ডিজিটাল ম্যাপে এ পর্যন্ত ৩৯টি জেলার একাত্তরের স্মৃতিচিহ্ন চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডিজিটাল ম্যাপের ঠিকানা হচ্ছে https://mapsgenocidemuseumbd.org. ওয়েবসাইটে গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর, নির্যাতন ও স্মৃতিফলক এই পাঁচটি বিভাগ (উইনডো) রয়েছে। ম্যাপে স্পটগুলোকে এমন ইন্টার-অ্যাকটিভভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে কেউ চাইলেই ওয়েবসাইটে গিয়ে চোখের পলকে সেই স্থানে প্রবেশ করে সেখানকার ছবি দেখতে পারবে; ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।

প্রচ্ছদের ম্যাপে গাঢ় লাল রঙের পিন দিয়ে গণহত্যার স্থান, কালো রঙের পিন দিয়ে বধ্যভূমি, লাল রঙের পিন দিয়ে গণকবর, খয়েরি রঙের পিন দিয়ে নির্যাতনকেন্দ্র ও সবুজ রঙের পিন দিয়ে স্মৃতিফলক চিহ্নিত করা হয়েছে। ম্যাপের যেকোনো পিনে ক্লিক করলে প্রথমেই ওই স্থানের ছবিসহ নাম আসে। নামের ওপর ক্লিক করলে আসে আরও একাধিক ছবি ও পরিচিতি। প্রতিটি লেখা বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় রয়েছে।

গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন চিহ্নিত করে ডিজিটাল ম্যাপ প্রকাশের এ রকম উদ্যোগ বিশ্বে এটাই প্রথম। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ রকম ম্যাপ আছে বলে আমাদের জানা নেই। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের ৬৪ জেলার গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন ও তথ্য ডিজিটাল ম্যাপে প্রকাশ করা হবে। কিছু দিনের মধ্যে গুগল ম্যাপেও এই ডিজিটাল ম্যাপ যুক্ত হয়ে যাবে। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে আমাদের এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

গণহত্যা জাদুঘরের পক্ষ থেকে প্রতিটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে স্থায়ীভাবে ফলক স্থাপনের কাজও চলছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবে স্মৃতিফলক স্থাপনের কাজ এগোচ্ছে ঢিমেতালে। এ পর্যন্ত মাত্র ৫১টি স্মৃতিচিহ্নে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রতিটি গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে একটি করে নির্ঘণ্ট গ্রন্থ। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা