প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৩ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৯:০২ পিএম
চারুকলা অনুষদে ভাস্কর শামীম সিকদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাবি পরিবার ও শিল্পাঙ্গনে যুক্ত তার বন্ধু-স্বজন-শুভাকাঙ্খী ও বিভিন্ন সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন একুশে পদক পাওয়া ভাস্কর শামীম সিকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১টায় নিয়ে আসা হয় ভাস্কর শামীম সিকদারের মরদেহ। তারপর চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ডুসকার উদ্যোগে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোন হয়।
বুধবার (২২ মার্চ) সকালে চারুকলা অনুষদে তাকে শ্রদ্ধা জানান ঢাবি পরিবার ও শিল্পাঙ্গনে যুক্ত তার বন্ধু-স্বজন-শুভাকাঙ্খী ও বিভিন্ন সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভাস্কর্য সারাদেশের সম্পদ। নান্দনিক মান বিচারে সেগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শামীম সিকদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাস্কর্যের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ করে ফেলেছিলেন। হাসপাতালের শয্যায় তিনি আমাকে সেই কথাগুলো বলে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘শামীম সিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। এর বাইরেও তার একটি পরিচয় আছে, যা তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তিনি এমন একটা সময়ে শিল্পকলার চর্চা করতেন, যখন সমাজের অনেকেই এগিয়ে আসেনি।’
উপাচার্য বলেন, ‘একজন নারী ভাস্কর হিসেবে তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বলিষ্ঠ ও স্পষ্টভাষী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মূল্যবোধে তিনি সমৃদ্ধ ছিলেন।’
চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে দেশে যখন প্রবল বিরোধিতা ছিল তখন শামীম শিকদার ঢাকা আর্ট কলেজে এ বিষয়ে পড়তে যান। পরে তিনি এ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনায় যোগ দেন। তার চরিত্রে একটা বিপ্লবী চেতনা ছিল, যা পরে তার কাজেও প্রভাব ফেলেছে। তখন ভাস্কর্য নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়া যেত না। শামীম সিকদার রড-সিমেন্ট দিয়েই কাজ শুরু করলেন। ভাস্কর্যে তিনি প্রতিকৃতির দিকে ঝুঁকেছিলেন। তার ভাস্কর্য ছিল রেখাধর্মী। একপর্যায়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘নব্বই দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে জন্ম হয় জাতীয় কবিতা পরিষদের। সেই পরিষদ গঠনের সময় শামীম সিকদারের অবদান ছিল। ৮৩-৮৪ সালের কথা, চারুকলায় শামীম সিকদারের ভাস্কর্য প্রদর্শনী হবে। এমন সময় গ্রেপ্তার হলেন চার তরুণ কবি। স্বৈরশাসক এরশাদ সেই প্রদর্শনীতে এলে শামীম সিকদার তাদের মুক্তির কথা বললেন। পরে এরশাদ তাদের মুক্ত করার আদেশ দেন।’
চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারপারসন নাসিমা হক মিতু বলেন, ‘তার অসমাপ্ত ভাস্কর্যগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি কাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, সে কথা আমরা জানি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যে ভাস্কর্যগুলো রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে একটি কমিটি রয়েছে। যদি অন্যান্য ভাস্কর্য সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়, তবে দায়িত্ব নিয়ে আমরা ওই ভাস্কর্যগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করব।’
শামীম সিকদারের বন্ধু ও প্রবীণ শিল্পী ফরিদা জামান বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিয়ে ওই ভাস্কর্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারে।’
শামীম সিকদারের ছোট ভাই নাজমুল হক শিকদার বলেন, ‘বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে। শুক্রবার তার দুই ছেলেমেয়ে দেশে ফিরলে মরদেহ দাফন করা হবে মোহাম্মদপুরের পারিবারিক কবরস্থানে।’