× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তিতাসের প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতির ফাঁদ

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:৩৪ পিএম

আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৫ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

প্রকল্প প্রস্তাব রয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। অর্থায়নের আশ্বাস মিলেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে। তবে কবে প্রকল্প পাস হবে, কবে কাজ শুরু হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু গ্রাহককে বলা হচ্ছে, ‘এই তো এলো! এলেই দিয়ে দেব।’ 

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্রাহককে নতুন মিটার স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে পুরোনো প্রিপেইড মিটার খুলে নিচ্ছে। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এলাকার এমন আট হাজার আবাসিক গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার খুলে নেওয়া হচ্ছে। তাদের সবাইকে নতুন মিটার দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তিতাসের কাছে কোনো মিটার নেই। জাইকার যে মিটারের কথা বলা হচ্ছে সেটি কবে হাতে পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

এখন দুই চুলার গ্রাহকের বিল মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা। গ্রাহকের চুলা জ্বলুক বা না জ্বলুক মাস শেষে এই বিল বাধ্যতামূলক তিতাসকে পরিশোধ করতে হয়। 

সম্প্রতি প্রিপেইড মিটার খুলে ফেলার উদ্যোগ নেওয়ায় মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডির আট হাজার গ্রাহককে চুলা পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করতে হবে। এতে প্রতি গ্রাহককে গড়ে ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত গ্যাস বিল দিতে হবে। 

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ঢাকা মেট্রো বিপণন ডিভিশন দক্ষিণের মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দিন আল আজাদ। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘নতুন মিটার দেওয়া হচ্ছে না।’

কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে বলেন, প্রিপেইড মিটারগুলো আমরা ১০ বছরের বেশি সময় রাখি না। এগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়ায় সফটওয়্যারে কাজ করে না। এজন্য খুলে ফেলা হচ্ছে। তাদের খুব শিগগিরই নতুন মিটার দেওয়া হবে। 

সেই শিগগিরইটা আসলে কবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জাইকার মিটার আসবে। এলেই লাগিয়ে দেব।’ কিন্তু কবে আসবে? উত্তরে বললেন, ‘এই তো চলে আসবে।’ 

মিটারের ব্যবস্থা না করে কেন পুরোনো মিটার খুলে ফেলা হলো এমন প্রশ্নের উত্তর নেই তিতাসের কাছে। তবে অনুসন্ধান বলছে, তিতাস প্রিপেইড মিটারে গ্যাস বিক্রি করতে চায় না। 

যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তারা বিল দেন গ্যাসের ব্যবহার হিসাব করে। যতটুকু ব্যবহার ততটুকু বিল। চুলা পদ্ধতিতে তিতাস যে পরিমাণ বিল নেয় প্রিপেইড মিটার পদ্ধতিতে আসে তার অর্ধেক। রাজধানীতে প্রিপেইড মিটার যারা ব্যবহার করেন গড়ে মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা তাদের বিল দিতে হয়।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সালেহা বেগম জানান, সম্প্রতি তার বাসার প্রিপেইড মিটার খুলে নিয়ে গেছে তিতাসের লোকজন। তাকে চুলা পদ্ধতিতে বিল দিতে বলা হয়েছে। 

তিতাস বলছে, তাদের মোট আবাসিক গ্রাহক ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬টি। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটারে বিল পরিশোধ করেন ৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক। অর্থাৎ ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন গ্রাহকই চুলা পদ্ধতিতে মাসিক বিল পরিশোধ করেন। তিতাস যদি গড়ে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে চুলা পদ্ধতিতে ৫০০ টাকা করে বেশি নেয় তাহলে মাসে ১২৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি নিচ্ছে। বছর শেষে এই অঙ্কটি দাঁড়ায় ১ হাজার ৫২২ কোটি টাকা।

সূত্র বলছে, তিতাসের এলাকায় যত গ্যাস চুরি আর অবৈধ ব্যবহার হয় তা ঢাকতেই এই দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যবহার হয়। কিন্তু এরপরও তিতাস প্রায় তিন থেকে পাঁচ ভাগ হারে সিস্টেম লস দেখায়। 

এবার প্রকৌশলী মো. সামছুদ্দিন আল আজাদের সেই ‘শিগগিরই’র উত্তর খোঁজা যাক। সেই জাইকার মিটার কত দূরে? যা দেখিয়ে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এলাকার গ্রাহকের মিটার খুলে আনছে তিতাস। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো হতাশার চিত্র। বোঝা গেল, গ্রাহকের সঙ্গে সংস্থাটি প্রতারণাই করছে। 

তিতাসের জাইকার মিটার প্রকল্প সূত্র বলছে, প্রকল্পটি অর্থায়ন করবে জাইকা। এজন্য প্রস্তাব তৈরি করে সরকারের অনুমোদনের জন্য একনেক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু জ্বালানি বিভাগের সম্মতি মিলেছে। একনেকে অনুমোদনের পর অর্থায়ন নিশ্চিত হলে ডাকা হবে দরপত্র। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনের পর দরপত্রে কাজ পাওয়া কোম্পানি প্রিপেইড মিটার সরবরাহ করলে সেগুলো স্থাপন করা হবে। এই হচ্ছে তিতাসের ‘শিগগিরই’র উত্তর। তবে বর্তমানে যেসব প্রকল্পে সরাসরি বৈদেশিক অর্থায়ন প্রয়োজন হচ্ছে, সেগুলোকে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। 

তিতাসের জাইকার মিটার প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) আবু নাসের মো. সালেহ। তিনি বলেন, মিটার কীভাবে আসবে? এখনও তো ডিপিপি-ই পাস হয়নি। তাহলে জাইকার মিটার ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরের গ্রাহকদের লাগিয়ে দেওয়া হবে বলা হচ্ছে কীভাবে? এমন প্রশ্নে সালেহ বলেন, সেই উত্তর তো যারা বলছেন তারা দিতে পারবেন। 

এবার সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এলাকার প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) ইমাম উদ্দিন শেখের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়ি মিটার লাগাব।’ কবে লাগাবেন? মিটার আছে আপনাদের কাছে? সরল উত্তর, ‘হ্যাঁ! আছে।’ কোথায় আছে জানতে চাইলে বললেন, জাইকার মিটার। 

এ বিষয়ে কথা বলতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা