× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আগুন-বিস্ফোরণ

তদন্তে রাজ্যের অনীহা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৪ এএম

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৭ এএম

বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাততলা ভবন। প্রবা ফটো

বিস্ফোরণের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাততলা ভবন। প্রবা ফটো

বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তদন্তই শেষ হয় না, সেখানে বিচার তো অনেক দূরের বিষয়। কোনো কোনো বড় অগ্নিকাণ্ডের পর করা জেনারেল ডায়েরির (জিডি) কপিও পরবর্তী সময়ে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইনগত বিষয়ের তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত শেষ করার বিষয়ে অনীহা রয়েছে। 

পুলিশ বলছে, দায়িত্বশীল অন্য যেসব সংস্থা রয়েছে তাদের রিপোর্ট না পাওয়ায় তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না। তবে ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে অন্য সংস্থার কাছ থেকে। তারা বলছে, পুলিশের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা কেন তদন্ত শেষ করতে পারেননি সেটা তারা বলতে পারছে না।

মগবাজার ট্র্যাজেডি : থমকে আছে বিস্ফোরক রিপোর্টে

মগবাজার ট্র্যাজেডির মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এক বছর আট মাসেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি। মগবাজার ওয়্যারলেস গেটের কাছে রাখি নীড়ে ২০২১ সালের ২৭ জুন ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১২ জন নিহত হন আর আহন হন ২০০-এর বেশি। ঘটনার পরদিন ২৮ জুন রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। 

মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি-এর পরিদর্শক মোদাচ্ছের কায়সার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিস্ফোরক পরিদপ্তর তাদের তদন্ত রিপোর্টটি পাঠায়নি। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া গেলে বিস্ফোরণের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। 

সিটিটিসি-এর পরিদর্শক মোদাচ্ছের কায়সারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক নায়েব আলি বলেন, এটি আমার যোগদানের আগের ঘটনা। তিনি উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। 

পরে আব্দুল হান্নান বলেন, পুলিশ প্রথম যখন প্রতিবেদনটি চেয়েছিল তখন তা দেয়া সম্ভব হয়নি। তখনকার প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে পুলিশ পরে আবারও তদন্ত রিপোর্ট চাইলে আমি নিজে তা তাদের দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, মগবাজার ঘটনায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরের গঠন করা তদন্ত কমিটির আমি প্রধান ছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, সেখানেও আমি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলাম। কাজেই বিস্ফোরক পরিদপ্তর পুলিশকে তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি এ কথাটি ঠিক নয়। 

মগবাজার ট্র্যাজেডিতে পুলিশ ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন তদন্ত করে। পুলিশ বলছে, কেবলমাত্র ফায়ার সার্ভিস ছাড়া আর কেউ তাদের তদন্ত রিপোর্ট পুলিশকে দেয়নি।

এ সম্পর্কে বিইআরসি সচিব ব্যরিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে বলেন, পুলিশ আমাদের কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছিল কি না তা সংশ্লিষ্ট কারও মনে পড়ছে না। বিষয়টি আরও বিশদভাবে খোঁজ নিয়ে আগামী রোববার জানাতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

নিমতলীর জিডি পর্যন্ত হারিয়ে গেছে

নিমতলীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বংশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল। তবে সেটির তদন্তের অগ্রগতি তো পরের কথা, ওই জিডির কপিও বংশাল থানায় মেলেনি। যদিও পুলিশের ভাষ্যমতে, ওই ঘটনার পর সরকারের তদন্ত কমিটির সঙ্গে জিডির তদন্ত সমন্বয় করা হয়েছিল। 

বংশাল থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া জিডির সূত্র ধরে ১২৪ জনের মরদেহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। যদিও জিডির কপি এখন থানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জিডির বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়েও পুলিশের কাছে কোনো তথ্য মেলেনি। 

থানায় জিডির কপির বিষয়ে বংশাল থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে আমি ঢাকায়ই ছিলাম না। এ ঘটনার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। নিমতলীর নবাব কাটারার ৪৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়া এ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় ১২৪টি তাজা প্রাণ। 

তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি 

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১৭ জন পোশাক শ্রমিক মারা যান। দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন। পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন। 

২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। ঘটনার এক বছর ২৮ দিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। 

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, কারখানা ভবনটি ইমারত নির্মাণ আইন মেনে করা হয়নি। ভবনটিতে জরুরি বহির্গমন পথ ছিল না। তিনটি সিঁড়ির মধ্যে দুটি নিচতলার গুদামের ভেতরে এসে শেষ হয়েছে। ওই গুদামে আগুন লাগার পর কারখানার ম্যানেজার শ্রমিকদের বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেন এবং বলেন, ‘আগুন লাগেনি। অগ্নিনির্বাপণের মহড়া চলছে।’ বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। 

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন আরও অনেকেই। ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা করেন মো. আসিফ। এরপর ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে মামলাটি। 

মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার ওসি আবদুল কাইউম। আসামিরা হলেন- ভবনের মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিক গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। বর্তমানে তারা সবাই জামিনে আছেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি এই ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দা হাফসা ঝুমা। আগামী ১৪ মার্চ বাদী আসিফের সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য রয়েছে।

বিএম কনটেইনার ডিপো 

২০২২ সালের ৪ জুন বিস্ফোরণ ঘটে সীতাকুণ্ডর বিএম কনটেইনার ডিপোতে। মৃত্যু হয় ৪৪ জনের। ওই ঘটনায় ৭ জুন মঙ্গলবার ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। শুরু হয় পুলিশের তদন্ত। তবে এ পর্যন্ত তদন্তের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি করে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু অগ্রগতি নেই তাদের তদন্তেও।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়। আসামিরা হলেন- বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেড ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা