প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ২০:২০ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩ ২২:১৬ পিএম
ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র। সংগৃহীত ফটো
দাম নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ভারতের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে আদানি পাওয়ার। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মুখপাত্র এ বি এম বদরুদ্দোজা সুমন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পিজিসিবির মুখপাত্র বলেন, ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সঞ্চালনের জন্য মোট ২৪৪ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে ভারতে ১০৮ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশে ১৩৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ দশমিক ৫ গিগাওয়াট। তবে আপাতত এর প্রথম ইউনিট ৭৫০ মেগাওয়াট চালু হয়। কেন্দ্রটির সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট আসতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
আদানির বিদ্যুতের জন্য বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কয়লা কিনতে গিয়ে দিনে প্রায় ১৬ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে বাংলাদেশকে। শুধু তাই নয় বেশি দাম দিয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কয়লা কেনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার জন্য বাংলাদেশকে যে দাম দিতে হচ্ছে তা অন্য যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি।
বিষয়টি দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তির ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এই কেন্দ্রে ব্যবহৃত প্রতি টন কয়লার জন্য বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৩৪৭ ডলার করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ব্যবহৃত কয়লার দাম পড়ছে ২৪৫ ডলার। সেই হিসাবে প্রতি টনে আদানিকে ১০২ ডলার (প্রায় ১০ হাজার ৯০৮ টাকা) অতিরিক্ত পরিশোধ করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় চললে এক দিনেই প্রায় ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। কেন্দ্রটির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার ২০ বছরের চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের।
আদানি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ২০১৭ সালে বিনা দরপত্রে কেন্দ্রটি নির্মাণ করে। এরই মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল গত ২ জানুয়ারি ভারত সফর করেন। মূলত এর পরই কয়লার এই বাড়তি মূল্য পরিশোধ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মাধ্যমে দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার দাম এবং ক্যাপাসিটি পেমেন্টের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে দেখা গেছে, আদানির কেন্দ্রকেই সব চেয়ে বেশি দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আদানিকে অতিরিক্ত কয়লার দাম পরিশোধ করার এই পরিস্থিতি কীভাবে বেরিয়ে আসা যায় তার পথ খোঁজার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আদানির সঙ্গে এই চুক্তি সুইসাইডাল বা আত্মহত্যার শামিল। তাদের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যে কয়লার দাম ধরিয়ে দিয়েছে তা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করবে।
ভারতে আদানির এই মুহূর্তে আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, কর্নটক, ছত্রিশগড় এবং মহারাষ্ট্রে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আদানির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের একটি মহারাষ্ট্রে অন্যটি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায়। শেষের এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এককভাবে বাংলাদেশের জন্যই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।