হুমায়ূন কবীর
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ফাইল ফটো
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য তদবির শুরু হয়েছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার ভয়ে আছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি চাপের মধ্যে গত সপ্তাহে সীমানার খসড়া প্রকাশ করার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিশন। খসড়া প্রকাশ করার সময়ও বসে নেই। মামলার ভয়ের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে খসড়া প্রকাশ হতে পারে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘সীমানা-সংক্রান্ত বিষয়ে সংসদ সদস্যরা যোগাযোগ করছেন। তাদের কেউ বর্তমান সীমানা বহাল রাখার তদবির করছেন। কেউবা সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য চাপ দিচ্ছেন।’
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কয়েক ধরনের জটিলতা রয়েছে। এক হচ্ছে জনসংখ্যার অনুপাতে সীমানা নির্ধারণ। আরেক হচ্ছে প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা। অখণ্ডতা বলতে বোঝায় একটা উপজেলার পুরোটা একটা আসনের মধ্যে থাকা। বর্তমানে এমন ৪৫টি আসন রয়েছে যেখানে একই উপজেলা দুটি আসনের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিতে গেলে শুধু ঢাকাতেই ১০টি আসনে হাত দিতে হবে। তাই আমরা জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দেব না। আমরা শুধু প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দেব।’ তবে এসব বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কমিশনে যে সভা হয়েছে সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সভা সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, কমিশন সভায় সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে যাবতীয় তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে কোনো বিধিমালা না থাকায় এ বিষয়ে আর তেমন আলোচনা হয়নি।
শুধু বলা হয়েছে, এ বিষয়ে এখন আর হাত দেওয়ার দরকার নেই। প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রাখতে হলে ৪৫টি আসনে কমবেশি পরিবর্তন আনতে হবে। এতে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার ভয় রয়েছে বলে একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে আলোচনার পর বিতর্কে না জড়িয়ে বিদ্যমান সীমানাকে খসড়া আকারে প্রকাশের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। প্রকাশের পর সীমানা বিষয়ে আপত্তি-আবেদন আমলে নেওয়া হবে এবং শুনানি শেষে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে সভা শেষে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান।
ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দাবি-আপত্তি-সুপারিশের শুনানি নিষ্পত্তি করে জুনে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন শতাধিক সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনে। এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে। সর্বশেষ কেএম নূরুল হুদা কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৫টি আসনে অল্পবিস্তর পরিবর্তন আনে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা আইন-২০২১-এ বলা হয়েছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্তসংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং আদমশুমারির ভিত্তিতে যতদূর সম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়।
সেখানে বলা হয়, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার আলোকে নির্বাচন হবে।