× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুই বই প্রত্যাহারে গচ্চা ৪৪ কোটি টাকা

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:১৫ এএম

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:১৮ এএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

নানা বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটি প্রত্যাহারে সরকারের প্রায় ৪৪ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। তাছাড়া আরও তিনটি বই সংশোধনের কাজ চলছে। বেশি সংশোধনী থাকলে সেগুলোও পাল্টে নতুন করে ছাপানো লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) খামখেয়ালিপনায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫ লাখের কাছাকাছি। প্রত্যাহার করা বই দুটি তাদের দেওয়া হয়েছে। একটি বই ছাপাতে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা খরচ ধরলেও মোট ৫৫ লাখ বই ছাপাতে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। তবে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ সমিতির একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ৩০ টাকা করে কোনোভাবেই বই ছাপানো সম্ভব নয়। ছাপার পর জেলা পর্যায়ে পাঠানো পর্যন্ত খরচ আছে। একেকটি বইয়ে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা খরচ পড়েছে। এর বাইরে কারিকুলাম তৈরির কর্মশালা, স্টেকহোল্ডারদের সম্মানী ভাতা, মনিটরিং খরচ- এসব বাবদ প্রতিটি বইয়ের পেছনে কমপক্ষে ১০ টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কয়েকটি বইয়ের কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্বীকার করেন, বিতর্কিত বইগুলোতে কিছু ছবি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। বিতর্কিত বই প্রত্যাহারের দাবিতে বিশেষ করে ইসলামি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জোরালো আন্দোলন করে। এমন পরিস্থিতিতে গত ৩০ জানুয়ারি বিতর্কিত বইগুলোর ভুল যাচাই করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সংশ্লিষ্টদের কেউ দায়ী থাকলে তা খুঁজে বের করতে একটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি দুটির তদন্তকাজ চলমান থাকা অবস্থায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনে (শুক্রবার) আকস্মিকভাবে বই দুটি প্রত্যাহারের কথা জানায় এনসিটিবি। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি বইগুলো না পড়ানোর নির্দেশনা দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর আগে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ে নয়টি ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন করে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। পরে সেগুলো বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা হয়।

শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন শিক্ষক প্রত্যাহার করা দুটি বইয়ের ভুলের কারণ জানিয়েছেন এভাবেÑ মাধ্যমিক স্তরের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে গত বছরই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন বইও দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে চলা শিক্ষাক্রম মূল্যায়নের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পূর্ণমাত্রায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার কথা। বেশিরভাগ বইয়ের ক্ষেত্রে এই কাজ করা হলেও প্রত্যাহার করা দুটি বই এবং সংশোধনের তালিকায় থাকা বইগুলো পর্যাপ্ত পর্যালোচনা করা হয়নি। শেষ সময়ে তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে।

এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের দুটি অংশ : একটি অনুশীলন বই, আরেকটি অনুসন্ধানী পাঠ। আগে এ বিষয়ের একটি বই থাকলেও এখন দুটি। এর মধ্যে দুই শ্রেণির অনুসন্ধানী পাঠ অংশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ এতে শিক্ষার্থীদের পড়ায় ব্যাঘাত ঘটবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মূলত যে বইটিকে তাদের মূল পাঠ্য হিসেবে পড়বে সেটি হচ্ছে তার অনুশীলন বই। অনুশীলন অংশে শুধু সংশোধন হবে, প্রত্যাহার নয়। শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বইয়ে যা পড়বে, তার সঙ্গে যেন নিজেদের চিন্তাকে মেলাতে পারে সেজন্য তৈরি করা হয়েছিল অনুসন্ধানী পাঠ।’

তবে তার এই বক্তব্য মানতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বই দুটি প্রত্যাহারের পর তিনিসহ (মশিউজ্জামান) যারা কারিকুলাম তৈরি করেছেন তারা বলে বেড়াচ্ছেন, বই দুটি প্রত্যাহার করলে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না। এখন আমার প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে নাÑ তাহলে বই দুটি ডেভেলপ করা হয়েছিল কেন? এমনি এমনি কি বই দুটি প্রণয়ন করা হয়েছিল?’ তিনি বলেন, মূলত এবার কারিকুলাম তৈরিতে অপরিপক্ব, অনভিজ্ঞ, আনকোরা মানুষের সমাহার বেশি থাকায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। 

বইয়ের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানে বইয়ের লেখক, সম্পাদক ও মুদ্রণের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির অবহেলা রয়েছে। তারা যদি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে দায়িত্ব নিয়েছে কেন?’ পাঠ্যবইয়ের ভুল যাচাইয়ের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের যাচাই-বাছাই কাজ চলছে। এখনও সময় শেষ হয়নি। আমরা পুরো কাজ শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেব।’

পরবর্তী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘দুটি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর যেসব বই সংশোধন হবে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। তাদের মতামত অনুযায়ী বইগুলো সংশোধন হলে আমরা দেখব এর আকার কেমন হচ্ছে। সংশোধনী খুব ছোট হলে আমরা তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেব। আর বেশি সংশোধনী আসলে আমরা পুরো বই পাল্টে দেব।’

এর আগে ২০১৭ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠনের দাবি অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা