× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভূমিকম্প মোকাবিলা

যন্ত্রপাতি সবই আছে, সংকট জনবলের

রাশেদুল হাসান

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০৬ এএম

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪২ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ভৌগোলিক কারণে ঢাকা অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। এদিক বিবেচনায় নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি), কেনা হয়েছে উদ্ধার সরঞ্জামও। তবে এসব পরিচালনার জন্য নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। ফলে ইওসি ও জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ওয়্যারহাউস পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্থার উত্তরণ না ঘটালে ভূমিকম্পে চরম মূল্য দিতে হবে জনবহুল এ নগরীর বাসিন্দাদের। 

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ২০১৫ সালে আরবান রিজিলিয়েন্স নামক প্রকল্প নেয় সরকার। ৮১৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় দুই সিটি করপোরেশনে স্থাপন করা হয়েছে দুটি ইওসি ও আটটি জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ওয়্যারহাউস।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি ইওসিতে আছে ডেটা সেন্টার, ভিডিও ওয়ালসহ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি, যা ব্যবহার করে ঘরে বসে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করা যাবে। প্রতিটি ওয়্যারহাউসে আছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য বিদ্যুৎচালিত হাতুড়ি, পাথর কাটার যন্ত্র, অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রসহ ৫৩ ধরনের যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া ওয়্যারহাউসেই থাকবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যা যুক্ত থাকবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে। আর এখানেই হবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ।

গত বছরের ১ অক্টোবর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আপৎকালীন জরুরি সাড়াদান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গুলশান-২ নগর ভবনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইওসি উদ্বোধন করা হয়। এতে রয়েছে ভিডিও ওয়াল সিস্টেম, পিসি স্ক্রিন, ভিডব্লিউএসের জন্য কন্ট্রোলার, ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার, ওয়াল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইওসি প্রিমাইজ ভিডিও নজরদারি সুবিধা, ৩২ আইপি ক্যামেরা, নেটওয়ার্ক ভিডিও, রেকর্ডার, ভিডিও ডেটার স্টোরেজ, ভিডিও মনিটরিং স্টেশন, ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ৭০ টেরাবাইট স্টোরেজ ক্ষমতাসহ স্টোরেজ এরিয়া নেটওয়ার্কসহ অনেক যন্ত্রপাতি। 

উদ্বোধনের কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও জনবল ও পরিচালনা পদ্ধতির নীতিমালার অভাবে এটি এখনও অকার্যকর বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, ইওসি পরিচালনায় একজন পরিচালক এবং একজন উপপরিচালক পদে কর্মী নিয়োগ প্রয়োজন। নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি, নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সমন্বয়, সরঞ্জাম ও পরিচালনা, তথ্য ও প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, জনসংযোগ, অর্থ ইত্যাদি খাতে জনবল দরকার। যা এখনও নিয়োগ হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সেন্টারে জনবল নিয়োগ না দিয়ে এ সেন্টার আইসিটি ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। এখানে যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তা আমাদের মতো কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী দিয়ে চালানো সম্ভব নয়। আমরা লোকবলের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন সেবা দিতে পারছি না।’ 

ডিএসসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন বলেন, ‘আমাদের কাজ ৮৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি মার্চের মধ্যে ইওসি চালু করা যাবে।’ 

পড়ে আছে জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সরঞ্জাম 

খিলগাঁওয়ের ওয়্যারহাউসটি বানানো হয়েছে কবরস্থানে, উত্তরায় মহাসড়কের ওপর, সায়েদাবাদে বাসস্ট্যান্ডের সামনে, কারওয়ান বাজারে ঘিঞ্জি এলাকায়। তালতলা কবরস্থানে গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে একটি সরু রাস্তার সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়্যারহাউসটি, যেখান দিয়ে মানুষই ঢোকা দায়। সেখান থেকে এ জরুরি সরঞ্জাম বের করাও দুরূহ ব্যাপার। তা ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ঢোকানো বা বের করা এবং প্রশিক্ষণ নেওয়ার কোনো উপযুক্ত জায়গা নেই। 

কবরস্থান ও খিলগাঁও আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, এখানে কোনো লোকজন আসেন না। এ রকমই পড়ে থাকে। গত বছর একবার উদ্ধার সরঞ্জাম চুরির ঘটনাও ঘটেছে। 

দক্ষিণ সিটির খিলগাঁও অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো জানান, জনবল ও ওয়্যারহাউস সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি নির্বাহী প্রকেীশলীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের কাছে জনবল ও ওয়্যারহাউসে চুরির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। 

সায়েদাবাদ ও আজিমপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ওয়্যারহাউসের জন্য কোনো লোক নেই। সব সময় তালাবদ্ধই থাকে। আর উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লোকজন না থাকায় সম্প্রতি মিরপুর-২ কার্যালয়ে চুরি হয়। আর উত্তরা অঞ্চলের ওয়্যারহাউসটি নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝে। এখানে প্রশিক্ষণ তো দূরের কথা কোনো কার্যক্রমই করা যাবে না।

কর্তৃপক্ষ কী বলছে 

ভূমিকম্পে সাড়াদানের জন্য জরুরি অবকাঠামো ইওসি কার্যকরী করা ও ওয়্যারহাউসের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাছে। তারা জানান, ইওসি সেন্টার পরিচালনা ও ইমারজেন্সি অপারেশন প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য করপোরেশনের ২৫ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে নিজ দায়িত্বের সঙ্গে আরও কমপক্ষে একটি করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ইওসি পরিচালনার জন্য দরকার আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি, যা এখনও প্রণয়ন করা হয়নি। 

এ বিষয়ে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট ডিএনসিসি পার্টের প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘এটা কার্যকরী আছে, এটার প্রয়োজনীয় লোক পেলে আরও কার্যকরী হবে। আর এটা পরিচালনার জন্য এসওপি (আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি) এটা প্রক্রিয়াধীন এটা পেলেই কাজ শুরু হবে।’ 

এ বিষয়ে প্রকল্পের উপপরিচালক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট আছে। সবাই একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন। এখন কর্তৃপক্ষ চাইলে করতে হবে।’ 

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

প্রকল্পের সঙ্গে শুরু থেকে জড়িত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে প্রথমে সাড়াদান করে কমিউনিটি। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দল থাকা দরকার। কিন্তু এগুলো কিছুই হয় না। প্রকল্পের টাকা খরচ করে যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তাদেরও খোঁজ-খবর নেওয়া হয় না। ফলে দুর্যোগ এলে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর পথ থাকবে না। বিশেষ করে ভূমিকম্পে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন থেকে আগুন লাগলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা