স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:০৩ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০৬ এএম
ফাইল ফটো
সময়ের হিসেবে প্রকৃতিতে এসেছে ফাল্গুন। একই সঙ্গে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের মাতাল সমীরণে মেতে উঠেছে সবাই। গলায় গলা মিলিয়ে গাইছে, ‘বাতাসে বহিছে প্রেম/ নয়নে লাগিলো নেশা/ কারা যে ডাকিলো পিছে/ বসন্ত এসে গেছে।’ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের আড়ালে হারিয়ে গেছে বাঙালি জাতির অন্যতম বিষাদের স্মৃতি। আনন্দের বার্তা নিয়ে বসন্ত এলেও ইতিহাসে লুকিয়ে রয়েছে জাতির কলঙ্কিত এক দিন।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’। ১৯৮৩ সালের এই দিনে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে ছাত্রসমাজ। তাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। এরপর থেকে দেশের ছাত্রসংগঠনগুলো দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। সে বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের নেতৃত্বে ‘মজিদ খান শিক্ষানীতির’ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ নীতিতে প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলার সঙ্গে আরবি এবং দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তিনটি ভাষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষানীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও যারা ৫০ শতাংশ শিক্ষার ব্যয়ভার দিতে সমর্থ, তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এই নীতিতে দরিদ্ররা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে ছাত্ররা এর প্রবল বিরোধিতা করেন। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ধর্মভিত্তিক ও বাণিজ্যিকীকরণ শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্রসংগঠনগুলো; শুরু হয় আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ওই দিন সমাবেশ ডাকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন দীপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চনসহ নাম না জানা অনেকে। শিক্ষার্থীরা কলাভবন ও উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকলে তাদের সেখান থেকে টেনে বের করে পিটিয়ে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ কলেজের সামনে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুই তরুণকে। তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। সদরঘাটে এক শিশুকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। এই আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছিল চট্টগ্রামেও। সেখানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন কাঞ্চন নামের একজন।
সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণা করে সাবেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের তাৎপর্য ম্লান হয়ে গেছে। স্বৈরাচার পতনের পর যে দুটি দল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে তারা গণতন্ত্রের অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। ফলে এখনও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া ও একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
সেদিন কতজন নিহত হয়েছিলÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা পুলিশের গুলিতে সেদিন অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাকি মৃতদেহ গুম করে ফেলে। আমরা দেখেছি অনেক মৃতদেহ পুলিশ ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু জয়নাল, মোজাম্মেল ও আইয়ুব নামের তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহা নামের একটি ছোট বাচ্চাসহ অনেকে নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের পরে আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
বর্তমান বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন তখন ছিলেন ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, এখন স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসকে ঠিকমতো পালন করা হয় না। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পাল্টে যায়, গুরুত্ব হারায়।
সাবেক ছাত্রনেতাদের কর্মসূচি
আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বৈরাচারবিরোধী দিবস পালনের জন্য ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী এবং সারা দেশের ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর হাইকোর্ট গেটে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে।