প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:০৬ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১২ পিএম
ভারতীয় পুরাণে সৃষ্টিকর্তা বসন্ত ঋতুকেই তার ঐশ্বর্যের, শক্তির (বিভূতি) আধার বলেছেন। কারণ! ফুলের সৌরভসমৃদ্ধ বসন্ত ঋতু নবপ্রাণের উন্মেষ ঘটায়; এই ঋতু সুখদায়ক। তাই হয়তো মদনদেব এই বসন্ততেই তসরিফ আনেন, নর-নারীর মধ্যে সৃষ্টি করেন চিত্তচাঞ্চল্য; বিদ্ধ করেন প্রেমবাণে।
মদনদেবের সঙ্গী-সাথি কারা- কোকিল, পারাবত, ভ্রমর, বসন্ত ঋতু ও মলয় বা দখিনা বাতাস। এই অর্থে বসন্ত আর প্রেম সমার্থক। একই কথা শব্দতত্ত্বেও। বসন্তের ‘বস্’ ধাতু থেকেই তো ভালোবাসা। মহাকবি কালিদাস তার ঋতুসংহার কাব্যে বসন্তের সঙ্গে প্রণয়ীযুগলের যে বর্ণনা দিয়েছেন, বিশ্বের আর কোনো কবি এমনটা পেরেছেন!
প্রকৃতি তার কোরক মেলে, নবপল্লবে প্লাবিত করে, ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে আবারও বসন্ত নিয়ে এসেছে, এই বাংলায়। সঙ্গে এনেছে ভালোবাসা। আজ (বরাবর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হলেও গত বছর বাংলা একাডেমির সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হবে) তাই বসন্তের দিন, ভালোবাসার দিনও। এই ভেবেই হয়তো কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘বসন্ত বন্দনা’ কবিতায় বলেছেন, ‘আকাশে মেলিয়া আঁখি/তবুও ফুটেছে জবা,/–দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।’
বসন্ত তার সব রঙ ছড়িয়েছে মনে
বসন্ত মানে ফুলের উৎসব। দিকে দিকে ফুটে থাকা নানা রঙ আর গন্ধে মাতোয়ারা করা ফুলেরা যখন দল মেলে ফুটে তখন নিসর্গবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো বলেন, ‘মনেরও রঙ লেগেছে।’ বসন্তের রূপ-রস গ্রহণে উন্মুখ বাঙালির বসন্ত বন্দনার প্রাক্কালে প্রবীণ এই নিসর্গবিদ বলেন, ‘চারিদিকে নানা রঙের ফুল ফুটে উঠেছে, তাই মন আনচান করে উঠেছে। ঋতু তার সব রঙ মনের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য আমরা বলি আমরা প্রকৃতির সন্তান। বসন্তের এই রূপকে অবহেলার কোনো যুক্তি নেই। সেই বসন্তকে বরণ করে নিব আমরা।’
পয়লা ফাল্গুনে নগরে যত উৎসব-আয়োজনই হোক না কেন, তা যেন কেমন ফিকে লাগে নিসর্গবিদ মোকাররক হোসেনের চোখে। বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী এ লেখক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জনঘনত্বের এই শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে দালানকোঠা। অপ্রশস্ত সড়কে উড়ছে ধুলোবালি। এরই মধ্যে নগরে যে বসন্ত উৎসব আসে, তাতে আমি আলাদা আকর্ষণ দেখি না সেই গ্রামের মতো। গ্রামে এই বসন্ত উপভোগের কত উপলক্ষ, কত আয়োজন!’ তিনি বলেন, ‘এই শহরেও কিন্তু ছয়টি ঋতুর বৈচিত্র্যকে ধরে রাখা যেত, যদি আমাদের সঠিক পরিকল্পনা থাকত, যদি খালগুলো উদ্ধার করা যেত। তাহলে কত জলজ উদ্ভিদে শোভামণ্ডিত হতো আমাদের এই শহর!’
নগরে যেসব আয়োজন
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় থাকছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের নানা অনুষ্ঠান। প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে গান, কবিতা ও নৃত্যের সঙ্গে থাকবে সাঁওতাল, মারমা ও গারো সম্প্রদায়ের নৃত্য পরিবেশনা। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বেলা ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৯টায় সমগীতের আয়োজনে কলাভবনের সামনে বটতলায় থাকছে একক ও সমবেত সংগীত, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা।