নিরাপদ খাদ্য দিবস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০৬ পিএম
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করে থাকে। দেশের ১০টি পরীক্ষাগারে তারা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে সার্টিফিকেট দিলেও তাদের নিজস্ব কোনো পরীক্ষাগার নেই। তাই এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা কতটা নির্ভুল সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে। এসব প্রশ্ন নিয়েই বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ষষ্ঠবারের মতো দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যে সার্টিফিকেট দিচ্ছে তার নিশ্চয়তা কী। তারা যেসব পরীক্ষাগারে মান পরীক্ষা করেন তা কতটা সঠিক?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুল কাইউম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কোনো পরীক্ষাগার নেই। আর নিজস্ব পরীক্ষাগারে মান দেখা হলেও প্রশ্ন উঠতে পারে যে নিজেরাই নিজেদের পরীক্ষাগারের ফলাফল দিচ্ছি। আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরীক্ষাগার নেই। তারাও অন্যান্য পরীক্ষাগারে কার্যক্রম পরিচালনা করে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে যৌথভাবে একটি পরীক্ষাগার করতে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আর বাজার থেকে আমরা যেসব স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে পরীক্ষা করি তার ব্যয় আমরাই বহন করি। আমাদের ফলাফলে কেউ প্রশ্ন তুললে তা অন্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করলে সেই ব্যয় ওই প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে।’
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে। সেখানে মানসম্মত নমুনা ছিল ১ হাজার ১৩০টি এবং মানহীন নমুনা ছিল ১৫২টি। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে মানসম্মত নমুনা পাওয়া যায় ৭৫৫টি এবং মানহীন নমুনা ছিল ৯৯টি। পাউরুটি ও বেকারিতে ক্ষতিকর পটাসিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি যাচাই করার লক্ষ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে পরীক্ষিত ১২২টি নমুনার মধ্যে ২৭টি নমুনায় ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে মানহীন পণ্যসমূহ বাজার থেকে প্রত্যাহার ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া, পরীক্ষা করে গুড়ে বিষাক্ত হাইড্রোজের উপস্থিতি, ভেজাল দুধ ও ভেজাল মধু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মোবাইল ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ঢাকার ৩৫৩টি বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ল্যাবরেটরির মাধ্যমে তাৎক্ষণিক নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) এবং ১৮(১)-এ অনুসারে জনগণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
সূত্র জানায়, খাদ্যে ভেজালকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ১৬৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৪১ জন ব্যক্তি দণ্ড দেওয়া হয়। মামলা দেওয়া হয়েছে ১৪১টি এবং সর্বমোট অর্থদণ্ড করা হয় ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটদের দ্বারা ৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৮৩ জনকে দণ্ড এবং ৮৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।