× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্রেনেড হামলার দিন রশীদ ডালিম ঢাকায় ছিল : শেখ হাসিনা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৪ পিএম

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২ ১৭:১৩ পিএম

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বর্ষপূর্তিতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : প্রবা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বর্ষপূর্তিতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : প্রবা

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি খন্দকার আব্দুর রশীদ ও শরীফুল হক ডালিম দেশে ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া সেই সময় যেভাবেই হোক তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে। এটা তো বাস্তব কথা।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ কাজ ঘটানো সম্ভব নয়। লক্ষ্যটা ছিল আমাকেই হত্যা করা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের; মানে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা।’ 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বর্ষপূর্তিতে রবিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। ঠিক হামলার স্থানেই সভার আয়োজন করা হয়। সভার শুরুতে ওই বর্বর হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। অল্পের জন্য সেদিন প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেদিন ডালিম যে ঢাকায় ছিল, রশীদ যে ঢাকায় ছিল, এটা অনেকেই জানে। যখন দেখল আমি মরি নাই, বেঁচে আছি, তখনই তারা ভেগে গেছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কারা তাদের দেশে নিয়ে এসেছিল? যদি বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে তারা কীভাবে আসল, আবার ভেগেও গেল। তাহলে সেগুলোকে কি গুম বলবেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঘাত আসবে আরও, আমি জানি।’ কোটালীপাড়ায় বোমা পেতে রাখার ঘটনার আগে খালেদা জিয়ার বক্তব্য লক্ষ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া আগের দিন বলেছিল আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে খালেদা জিয়া বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে। সেই বক্তৃতা আগাম দিল কীভাবে? বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। তার মানে আমাকে হত্যা করবে! সেই পরিকল্পা তারা নিয়ে নিয়েছে। হত্যা, ক্যু তাদের চরিত্র।’ 

বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন তাদের (বিএনপি) সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের খাতির করতে হবে। ইলেকশনে আনতে হবে। এত আহ্লাদ কেন আমি তো বুঝি না! বাংলাদেশে কি আর মানুষ নেই? অনেকে বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে। সেখান থেকে এসে রিকোয়েস্ট করে, কোনোমতে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না। জায়গা দেবে কি দেবে না, সেটা ভাববে জনগণ। সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ, তারা আবার সেই সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে নাকি বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে, এই সিদ্ধান্ত তো জনগণকে নিতে হবে।’

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় বিএনপি সরকারের জড়িত থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সেই সময় তারা অফিস-মিটিং করতে পারতেন না। সব সময় পুলিশ ঘিরে রাখত। কিন্তু ঘটনার দিন পুলিশ ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিএফআইর একজন অফিসার বোধ হয় বিষয়টা (ষড়যন্ত্রের) জানত না। সে হেডকোয়ার্টারে ফোন করে বলেছিল, এখানে এ রকম ঘটনা হচ্ছে। তাকে ধমক দেওয়া হয়েছিল, তুমি ওখানে বসে কী করছ? তোমার ওখানে কোনো দায়িত্ব নাই, তুমি ওখান থেকে সরো। তার মানে কী? 

সে সময়কার বিএনপি সরকার আহতদের উদ্ধার না করে, আলামত সংরক্ষণ না করে উল্টো কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আক্রমণকারীরা যাতে জনরোষে না পড়ে সরে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। যখন দেখল আমি মরি নাই, তখন ওই খুনিদের কয়েকজনকে সেদিন রাতেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে করে বিদেশে পাঠিয়ে দিল। আলামতগুলো ধ্বংস করতে সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়ি এনে রাস্তা ধোয়া শুরু করল। গ্রেনেডগুলো কোথায় পড়েছিল সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য আমাদের তরফ থেকে লাল পতাকা টানানোর ব্যবস্থা করা হলো; কিন্তু সেখানে বাধা এলো। ধুয়ে মুছে তারা সাফ করে ফেলল সব আলামত।’ 

গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, সেদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ছিলেন না। আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরাই সেদিন সেবা দিয়েছিলেন। বিএনপিপন্থি কোনো চিকিৎসককে সেদিন পাওয়া যায়নি।

সভায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তথ্য সামনে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে গুম-খুনের কথা বলেন। আমি তো মনে করি আমাদের আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার, যাদের জিয়ার আমলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর যত অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, সবাইকে সামনে নিয়ে আসা দরকার। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কারও কারও চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে, পিটিয়ে মেরেছে। হাত কেটে ফেলা, বাড়ি দখল, পাকিস্তানি হানাদাররা যেভাবে অত্যাচার করেছিল ঠিক সেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। অর্থাৎ আমাদেরকে একেবারেই নিঃশেষ করে দেবে।’

নির্বাচন নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, আমি তাদের বলব, বেশিদূর যাওয়া লাগবে না, খোঁজ নেন, জিয়াউর রহমান কীভাবে নির্বাচনকে কলুষিত করেছিল। জিয়া, এরশাদ, খালেদা সবাই কলুষিত করেছিল। আমি বলব, বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই। ২০০১ ইলেকশনটা দেখেন না, কেমন হয়েছিল? মানুষকে ভোট দিতে যেতে দেওয়া হয়নি। তারপরও আমরা বেশি ভোট পেয়েছিলাম কিন্তু আমাদের সিট পেতে দেওয়া হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-এ আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। তারা কী করে ইলেকশন করবে, যে দলের নেতা নেই। তাদের নেতা তো সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক। তারা ইলেকশন করবে কীভাবে, জনগণ কাকে দেখে ভোট দেবে? তারপরও নানা ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। ইলেকশন এলেই চক্রান্ত শুরু হয়। কিন্তু আমার এই দেশের মানুষের ওপর আস্থা রয়েছে, মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। হয়তো এটাই বড় অপরাধ। ১৯৯৬ সালে কাজ করেছিলাম বলেই হয়তো ২০০৪ সালে মারার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বারবার আঘাতের শিকার হয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পরে তো কোনো প্রতিশোধ নেইনি। কারও ঘরবাড়িতে হামলা চালাইনি। কারাগারেও রাখিনি, কিছুই করিনি। অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 

করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বপরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। যত রকম যা করার করে যাচ্ছি। কোথাও আমরা পিছিয়ে নেই। তারপরও আমরা চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি চাই না মানুষ কষ্ট পাক। রাজনীতি করি মানুষের জন্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ আগস্ট, আমরা যারা সেদিন র‌্যালিতে ছিলাম তাদের জন্য নতুন জন্ম। তাই একটা কথাই বলব, যতক্ষণ নিশ্বাস আছে জনগণের জন্য দায়িত্ব পালন করে যাব। সেটি আজকের প্রতিজ্ঞা। সবার সহযোগিতা দরকার। শুধু সমালোচনা করলেই চলবে না। কীভাবে মানুষকে এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা যায়, তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’ 

আবারও ১৫ আগস্টের মতো আঘাত আসার শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। তিনি বলেছেন, আঘাত আরও আসবে জানি। যখন আমার আব্বা দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। আজকেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় জয় বাংলা ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে। সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাব।

সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্ট স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। সেদিনের নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। আহতদের অনেকে এখনও শরীরে গ্রেনেডের  স্প্লিন্টার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

প্রবা/আরএম/জেআই

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা