× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্প

১ বর্গমিটার বেড়া নির্মাণে খরচ ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২০ পিএম

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

মাত্র এক বর্গমিটার (প্রায় ১১ বর্গফুট) সীমানাপ্রাচীর ও বেড়া নির্মাণে খরচ দাঁড়াবে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা! পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট সিকিউরিটি গার্ড শেড নির্মাণে খরচ হবে ৫ হাজার ৩০৪ টাকা। ঢাকার তুরাগ থানা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের সংশোধনীতে এই তুঘলকি প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা। এ প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন।

স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাবনায় দেখা যায়, দুই হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছে ৪১ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এই ব্যয় ছিল ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে ৪০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে সীমানাপ্রাচীর ও কাঁটাতারের বেড়া তৈরিতে প্রতি বর্গফুটে খরচ দাঁড়াতে চলেছে ১৭ হাজার ৩২০ টাকা।

অন্যদিকে মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ২৪০০ বর্গফুট গার্ড শেড নির্মাণে অনুমিত ব্যয় ছিল ২৯ লাখ টাকা; সংশোধিত প্রস্তাবে এ ব্যয় এক লাফে ৯৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে  প্রস্তাব করা হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা । ফলে প্রতি বর্গফুট গার্ড শেড নির্মাণে খরচ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩০৪ টাকা। প্রস্তাবে এসব কাজ সমাপ্তির সময় জুন ২০২৩ থেকে এক বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৪ পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবনার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. উবায়দুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখনও এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়নি। সভা হলে জানা যাবে, কোন যুক্তিতে এত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সচিব এসেছেন, শিগগির পিইসি সভা হবে।

এই অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক শওকত মাহমুদ বলেন, যে খরচ ধরা হয়েছে সেটা বেশি নয়। সরকারের রেট শিডিউল অনুযায়ী এই খরচ ধরা হয়েছে। আর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে নিচে পাইল করে দেয়াল দেওয়া হবে। তার ওপর তোলা হবে বেড়া। পুরো খরচ হিসাব করেই এই প্রস্তাব করা হয়েছে।

জমির দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ব্যয় ঢাকা ডিসি অফিস যে মৌজা রেট দিয়েছে, সে অনুযায়ী ধরা হয়েছে। এখানেও মূল দামই ধরা হয়েছে।

কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, জমি অধিগ্রহণের কাজ সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদন পেলে সেই টাকা দিয়ে সম্পন্ন হবে। এরপর সীমানাপ্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন ও গার্ড শেড নির্মাণের মতো অন্যান্য কাজ করা হবে।

প্রস্তাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ভূমি উন্নয়নের জন্য কোনো অনুমিত খরচ ছিল না। সংশোধনী প্রস্তাবে ১ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়নের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার ভূমি উন্নয়নে ১০০ টাকা করে খরচ ধরা হয়েছে।

এ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ৫২ দশমিক ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২২০০ মিটার সীমানাপ্রাচীরসহ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, ২৪০০ বর্গমিটারের আবাসিক ভবন নির্মাণ ও দেড় লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তুরাগ থানা এলাকায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত প্রকৃত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ; খরচ হয়েছে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। 

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটির মূল প্রস্তাবে ৫৩ দশমিক ৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৯৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। সংশোধনী প্রস্তাবে ভূমির পরিমাণ ১ দশমিক ৪৫ একর কমানো হয়েছে। তবে অধিগ্রহণ খাতে ৬১২ কোটি ৭৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় এর যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর মাত্র ২০ শতাংশ এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে। বাকি ৮০ শতাংশে এ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকাগুলোর লেক, খাল ও নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাবের বিষয়ে গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতি বর্গমিটার সীমানাপ্রাচীর ও বেড়া নির্মাণে যদি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ধরা হয়, তাহলে তা অবাস্তব এবং অযৌক্তিকই বলতে হবে। এতে জনগণের অর্থের অপচয় হবে। কোন মাপকাঠিতে এই ব্যয় ধরা হয়েছে সেটা দেখা দরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িতদের কোনো সুবিধা দেওয়া হয়েছে কি না, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা