প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২২ ১০:২৬ এএম
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২ ১১:৪০ এএম
ফাইল ফটো
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির কারণে বাজারে ডিম এবং মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল-বিপিআইসিসি।
বিপিআইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে খোলা বাজারে ডিম ও মুরগির হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ায় একই সঙ্গে উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছে কাউন্সিল।
‘এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিমান্ড-সাপ্লাই গ্যাপ ও সুযোগ সন্ধানী মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা লোফার অপপ্রয়াস প্রধানত দায়ী।’
গত সপ্তাহজুড়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকায় হয়। আর ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছায়।
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য পরবর্তীতে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকানে কারসাজি চিহ্নিত করে জরিমানা করা শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এর পরই শুক্রবার হঠাৎ করে ডিমের দাম ডজনে ৩০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা করে কমে যায়। এদিন প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকা এবং প্রতি কেজি মুরগি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
বিবৃতিতে সংগঠনটি আরও জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিপিআইসিসির সমন্বয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
গত ১৬ অগাস্ট বিপিআইসিসির জরুরি বৈঠকে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ অগাস্ট পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মুরগির দর ছিল ১৩৬ টাকা।
বাদামি ডিম প্রতিটির দর ছিল ৯ টাকা ১০ পয়সা ও সাদা ডিম ৮ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু ওইদিন রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের নতুন বর্ধিত দাম কার্যকরের ঘোষণা আসে।
এর পরদিন অর্থাৎ ৭ অগাস্ট থেকে বাস-ট্রাক-পিকআপসহ পরিবহনের সংকট দেখা দেয়। অনেক মালিক পরিবহন বন্ধ করে রাখে, অনেকে আবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ডিম ও মুরগির ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের জোগান দেন গ্রামীণ খামারিরা, তাই পরিবহন সংকটে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ কমে যায়, বাড়ে দাম।
১৩ ও ১৪ আগস্ট মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। পাইকারি পর্যায়ে লাল ডিম ১০ টাকা ৯০ পয়সায় এবং ব্রয়লার মুরগির দর ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায় ওঠে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা হয়ে ওঠে।
বিপিআইসিসি বলছে, ‘এ দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ খামারিদের কোনো হাত নেই। পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এলে ১৫ আগস্ট থেকে দর পুনরায় কমতে শুরু করে।’
গত বৃহস্পতিবারের তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দর প্রতি কেজিতে প্রায় ৪০-৪৫ টাকা কমে ১৩০-১৩৫ টাকায় নেমে এসেছে।
এ ছাড়া লাল ডিমের দর প্রতি ১০০-তে ১৩০ টাকা কমে ৯৬০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৬০ পয়সা) ও সাদা ডিম ১৪০ টাকা হ্রাস পেয়ে ৯৫০ টাকায় (প্রতিটি ৯ টাকা ৫০ পয়সা) বিক্রি হয়েছে।
বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান জানান, বর্তমান সময়ে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খামারির খরচ পড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং ডিমের খরচ ন্যূনতম ৯ দশমিক ৫০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, পণ্য আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত জাহাজ ভাড়াসহ লোডশেডিংয়ের কারণে ‘ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে’।
মসিউর রহমান বলেন, “উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে খামারিরা লোকসান গুনলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা অন্যায্য মুনাফা লুটছে। ফলে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
তিনি জানান, গত ৬ অগাস্টের আগে খামারিরা ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি গড়ে ১২৮ থেকে ১৩১ টাকায় অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ১২-১৪ টাকা লোকসানে বিক্রি করলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেছে কেজিতে ২৭-৩২ টাকা।
‘বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকবেই। তবে লাভের পরিমাণটা যৌক্তিক হতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায় সরকারের প্রতি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে বলেন বিপিআইসিসি সভাপতি।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) এর সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, ‘পোলট্রির’ সাপ্লাই সাইড দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ লোকসানের ভয়ে অনেক খামারি এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন।’
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন বয়সী সাদা ব্রয়লার বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন যেখানে ছিল ১ কোটি ৮০ লাখের ওপরে বর্তমানে তা ১ কোটি ৩০-৩৫ লাখে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
ব্রিডার খামারগুলো লোকসানে বাচ্চা বিক্রি করার পরও খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। যা উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি)-এর সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বেই খাবারে সংকট তৈরি হয়েছে।
যেহেতু ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা, সয়াবিনসহ অধিকাংশ উপকরণই আমদানিনির্ভর। তাই কাঁচামালের দর বৃদ্ধি ছাড়াও জাহাজ ভাড়া ও ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না।
‘শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোও রপ্তানিতে মাঝে মধ্যেই রাশ টেনে ধরছেন। তাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে।’
ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাষি এবং খামারিদের বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানান এফআইএবির সভাপতি।
প্রবা/এনএস /এসআর