বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার বান্ধবী আয়াতুল্লাহ বুশরা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার।
তিনি বলেন, ‘রাতেই জামিনের কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে আজ দুপুরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
এর আগে রবিবার (৮ জানুয়ারি) গ্রেপ্তার আয়াতুল্লাহ বুশরাকে জামিন দেয় আদালত। ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার ওই আদেশ দেন।বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওইদিনই তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার আগে সেদিন ফারদিনের সঙ্গে ছিলেন তার বান্ধবী আয়াতুল্লাহ বুশরা। পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
ফারদিনকে খুন করা হয়েছে দাবি করে রামপুরা থানায় করা মামলায় ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগ আনেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন। ওই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় বুশরাকে। ১০ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাঁচ দিন রিমান্ডে রাখার পর আদালতের মাধ্যমে বুশরাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫ জানুয়ারি সপ্তম অতিরিক্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখারের আদালতে বুশরার জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদালত বুশরার জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার দিন ধার্য করেন। ওইদিন আসামির পক্ষে জামিন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল।
শুনানিতে তিনি বলেন, ‘এটি চাঞ্চল্যকর মামলা। ডিবি, র্যাব তদন্ত করে জানিয়েছে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে, পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও এসেছে আত্মহত্যার বিষয়টি।’
মোখলেছুর রহমান আরও বলেন, ‘বুশরা মেধাবী শিক্ষার্থী। বিতর্ক করার সময় তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। দুই তদন্ত সংস্থা তন্নতন্ন করে দেখেছে, ঘটনা কী। বুশরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় মর্মে তদন্তে জানা গেছে।’
শুনানিতে ওই আইনজীবী আরও বলেন, ‘বুশরাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাদের (ফারদিন ও বুশরা) মধ্যে সম্পর্ক ছিল, এটার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমরা মানবিক কারণে এসেছি জামিন চাইতে। দয়া করে, তাকে জামিন দিন।’
বাদীপক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট শামীম হাসান জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘বুশরা এজাহারনামীয় আসামি। মামলার তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় আসামি জামিন পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারে। এজন্য তার জামিনের বিরোধিতা করছি।’ শুনানির ওইদিনও ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা আদালতে হাজির ছিলেন।
৭ নভেম্বর ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, ‘তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
মামলার অভিযোগে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বলেন, ‘ফারদিনকে রামপুরা এলাকায় বা অন্য কোথাও হত্যাকারীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ হত্যার পেছনে তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার ইন্ধন রয়েছে।’
মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এরপর মাদক সংশ্লিষ্টতা, মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে খুন, কিশোর গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয় সামনে আসে। সর্বশেষ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশ ও র্যাব তদন্ত অগ্রগতি নিয়ে এক ধরনের ‘সমঝোতা’য় পৌঁছে জানায়, ফারদিন স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ বা আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ তথ্য চূড়ান্ত নয়।