প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৮ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৮ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। ছবি : প্রবা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব-হানাহানিতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ঐক্য পরিষদের নেতারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৭ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর শাহবাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐক্যমোর্চা। সেই পদযাত্রা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘অতীতের প্রায় সব নির্বাচনে এ দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে খেলা হয়েছে, যার কারণে নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে অহেতুক এরা নির্যাতিত হয়েছেন। প্রায় সবাই এদের গণিমতের মাল হিসেবে বিবেচনা করার চেষ্টা করেছে। এক পক্ষ ভেবেছে, ওরা আমাদের নয় ওরা ওদের। আরেক পক্ষ ভেবেছে, আমাদের ভোট না দিয়ে এরা যাবে কোথায়? রাজনীতির এ রশি টানাটানিতে সংখ্যালঘুরাই অহেতুক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে এখানেই সংখ্যালঘুদের অস্বস্তি ও শঙ্কার কথা উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলসমূহ ও তাদের জোট পৃথক পৃথকভাবে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু করেছে। রাজনীতির মাঠে 'খেলা হবে' বলে একটি ধ্বনি প্রধান দলগুলোর মধ্যে বারংবার উচ্চারিত হতে আমরা লক্ষ করছি। এ ধ্বনি এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের শঙ্কিত করে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের অধিকারবিষয়ক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে তারা ভোট দিতেও অনাগ্রহী হয়ে পড়বে বলে জানান রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশাহীনতা ও আস্থাহীনতার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও বাহাত্তরের সংবিধান সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারেনি।’
লিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি হিসেবে ফিরে এলেও রাষ্ট্র ও রাজনীতির চর্চায় তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আজও মেলেনি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণনার দিক থেকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। অথচ এহেন রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হবার জন্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করার পর যখন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, দেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই তখন তা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।’
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে রানা দাশগুপ্ত জানান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা একই দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখী রোডমার্চ করবে। পরে আগামী ৭ জানুয়ারি ঢাকার শাহবাগ চত্বরে দুপুর বেলা জমায়েত হবে এবং সেখান থেকে বিকাল ৪টার দিকে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, সুব্রত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী ও পদ্মা দেবী, সদস্য শম্ভুনাথ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।