× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চলতি বছরে রাজনৈতিক সংঘাতে নিহত ৭০ : আসক

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:০৮ পিএম

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১৬ পিএম

চলতি বছরে রাজনৈতিক সংঘাতে নিহত ৭০ : আসক

চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংতায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৯১৪ জন। দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায়।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এদিন বার্ষিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সংস্থাটি। এতে সভাপতিত্ব করেন আসকের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান। সংবাদ সম্মেলনে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আসকের পরিচালক (কর্মসূচি) নিনা গোস্বামী ও জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।

আসক জানিয়েছে, ২০২২ সালে ঢাকা জেলায় ২৯টি নির্বাচনি সহিংসতার ঘটনায় ৪৫৯ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন তিন জন। ২০২১ সালের মতো ২০২২ সালেও নাগরিকের মতপ্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমবেত হওয়ার ও প্রতিবাদ করার সাংবিধানিক অধিকার বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। বছরটিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংখ্যাগত দিক থেকে কমে আসলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একেবারে বন্ধ হয়নি। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়নি।


আসক বলছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে না। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ বার্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে সংগৃহীত আসকের তথ্যসংরক্ষণ ইউনিটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। বিদায়ী বছরে কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, কক্সবাজার ও নারায়গঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন চার জন।

 

রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে উল্লেখ করে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব কয়টিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লা জেলায় ২৮টি ঘটনায় প্রায় ২৬৯ জন আহত হয়েছেন এবং নিহত হয়েছেন দুই জন। চট্টগ্রাম জেলায় ২৫টি ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৩৩২ জন এবং নিহত হয়েছেন সাত জন। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতায় বগুড়া জেলায় ১০টি ঘটনায় সাত জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৭৬ জন।

 

হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শারীরিক নির্যাতনে চার জন, হার্ট অ্যাটাকে একজন এবং গ্রেপ্তারের আগে শারীরিক নির্যাতনে চার জন মারা গেছেন। এছাড়া থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন দুই জন এবং অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন চার জন।

 

আসক বলছে, থানা হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগের পর নানা সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ওই সময়ে কার্যকর ছিল না বলে দাবি করে, যা তাদের দায়িত্বশীল আচরণের পরিপন্থি। এ বছর দেশের কারাগারগুলোর মধ্যে ২১টি কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন ৬৫ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৮ এবং হাজতি ৩৭ জন। এর মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে সর্বাধিক ১৬ জন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৪ জন এবং চট্টগ্রাম কারাগারে ১২ জন মারা গেছেন। 

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছেন পাঁচ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে চার জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ফিরে এসেছেন এক জন। এছাড়া সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকের ঘটনা ঘটছে এবং পরিবার ও স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার বা আটকের কোনো তথ্য না দিয়ে সরাসরি নাকচ করছে। এরপর বিভিন্ন অভিযোগে উল্লিখিত আটক ব্যক্তিদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরবর্তীতে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। আটক এবং গ্রেপ্তার দেখানোর সময়কালের মধ্যে যে যথেষ্ট ফারাক তার কোনো ব্যাখ্যা আমরা লক্ষ্য করছি না। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট ব্যত্যয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’ 

 

সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন

 

আসক জানিয়েছে, ২০২২ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৬ জনসহ মোট ২৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক লালমনিরহাট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সাত জন, কুড়িগ্রাম জেলায় তিন জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তিন জনসহ দেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী জেলায় আরও ১০ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক ১৫ জন নাগরিক মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ বছরেও গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৬ জন।

 

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত বছরের মতো এ বছরও ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক নির্যাতন, সালিশ ও ফতোয়াসহ নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিদায়ী বছরে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৩৬ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। ধর্ষণের ঘটনা সর্বাধিক ৮৮টি ঘটেছে ঢাকা জেলায়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ৮৩টি, চট্টগ্রামে ৫২টি, গাজীপুরে ৪৯টিসহ বাকি সব জেলাতেই ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে।

 

আসক বলছে, ২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন মোট নারী ১ হাজার ৩২১ জন নারী। ২০২২ সালে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২৪৭ জন নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন ৭৮ জন পুরুষ। এ বছর উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন সাত নারী। এছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটজন পুরুষ খুন হয়েছেন। এ বছর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪৭৯ নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা যান ২৯২ জন এবং আত্মহত্যা করেন ৯৭ জন।

 

আসকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  এ বছরে ২৬ জন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পরবর্তী সময়ে মারা যান ১২ জন নারী। অন্যদিকে এ বছরে অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী। হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাৎকার, অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ শিশুর প্রতি নানা সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত থেকেছে ২০২২ জুড়ে, যা ছিল হতাশাজনক।

আসক তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় ৫১৬ জন শিশু। নিহতদের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ৬৪, গাজীপুরে ৩৬ এবং নারায়ণগঞ্জে ৩৩ শিশু নিহত হয়েছে। ২০২১ সালে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৯৬ জন। এছাড়া ২০২২ সালে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১ হাজার ৮৮ শিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ৫৬০ শিশু, ধর্ষণ চেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ১০০ শিশু এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৫২ ছেলেশিশু। বিভিন্ন মাদ্রাসায় ছেলে শিশু বলাৎকারের অভিযোগ ছিল উদ্বেগজনক। এ বছরে বলাৎকারের শিকার ৫২ ছেলে শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ৩৪ জন ছেলে শিশু বিভিন্ন মাদ্রাসায় বলাৎকারের শিকার হয়েছে।


সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি 


২০২২ সালে বছরজুড়ে ২২৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এদের মধ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৭৯ জন সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন এক জন সাংবাদিক। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক লাঞ্ছিত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদানের শিকার হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বছর এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ এবং বাড়ি-ঘর, ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান ও মন্দির ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটেছে।এসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে পাঁচ জন আহত হয়েছেন।



শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা