× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:০৮ পিএম

আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩১ পিএম

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্কে হঠাৎই কিছুটা অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের ২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপির এক নেতার বাসায় গেলে সেখানে ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের কিছু লোক তার গাড়িবহরের পথ রোধ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে।

পশ্চিমা একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) ঢাকায় কর্মরত পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রধানরা সচেতন রয়েছেন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণও করছেন। অবশ্য কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বাংলাদেশের উচিত সতর্কতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখার বিষয়টিতে নজর দেওয়া। 

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশে গত দুই দশকে একাধিকবার কূটনৈতিক এবং বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সে সময়ও বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃশ্যমান অবনতি হয়নি, যদিও সাময়িক অস্থিরতা ছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আনোয়ার চৌধুরী। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ওই মেয়াদের পুরো পাঁচ বছর বাংলাদেশ অনেকটা জঙ্গি সংগঠনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। একের পর এক গ্রেনেড, বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে হামলা, গাজীপুরে আদালতে হামলা, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়ার ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাজশাহী অঞ্চলে ‘বাংলা ভাই’ নামে এক জঙ্গির নেতৃত্বে জঙ্গিদের গা শিউরে ওঠা বর্বরতার ঘটনা অবাধে চলে বছরজুড়ে। ফলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষসহ কূটনীতিকদের জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতার সময় ছিল।

২০০৯ সালে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা একেবারেই কমে আসে। তবে ২০১৩-১৪ সালে রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে গণপরিবহনে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ভয়াবহ সহিংসতা দমনেও সফল হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময় জঙ্গি হামলায় একের পর প্রগতিশীল ও মুক্ত চিন্তার লেখক, গবেষক, ব্লগারদের হত্যার ঘটনা ঘটে। পরবর্তী সময়ে রাজধানীতে ইতালির একজন নাগরিক, সৌদি আরবের একজন নাগরিক এবং রংপুরে একজন জাপানি নাগরিক আততায়ীর হাতে নিহত হন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গি দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ছয় বছরের অভিযানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। ওইদিন রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের দুজন কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের ৭ জন, ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন এবং ভারতের একজন নাগরিক নিহত হয়। কাছাকাছি সময়ে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠেও ঈদের দিন জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। একাধিক ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে নানাভাবে ফতোয়ার মাধ্যমে দেশে মুক্ত চিন্তার মানুষ ও বিদেশি নাগরিকদের হত্যার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির পর সরকার জঙ্গি দমনে কঠোর অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের পর জঙ্গিবাদ দমনে সরকার সফল হয় এবং সন্ত্রাসী ও আততায়ী হামলার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহরে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সন্ধ্যায়। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহর আক্রান্ত হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তদন্তে ওই হামলার জন্য স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের নেতৃত্ব দেওয়ার তথ্য উঠে আসে। সে সময়ও এই ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে তদন্ত করে প্রকৃত হামলাকারীদের চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে। 

এরই মধ্যে গত ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহীনবাগে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহর আটকানোর চেষ্টার ঘটনা ঘটল। ওইদিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের আমন্ত্রণে ৯ বছর ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় গিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে ফেরার সময় একদল লোক তার গাড়ি গতিরোধ করে। তারা ‘মায়ের কান্না’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য এবং তারা রাষ্ট্রদূতকে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এটা কোনো হামলা কিংবা হেনস্থার ঘটনা ছিল না। তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে একজন কূটনীতিকের পথ রোধ করে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত। 

সাবেক একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা সেদিন স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলেই জানা যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে দল ক্ষমতায় আছে, সে দলের পক্ষ থেকে যেকোনো দেশের কূটনীতিককে যেকোনো বিষয়ে অবহিত করা, তথ্য জানানোর নির্দিষ্ট একাধিক প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়া দলীয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও সম্পন্ন করা সম্ভব। তাহলে রাস্তায় গাড়ি আটকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘটনা ঘটবে কেন? এটা অবশ্যই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। কারণ এ ঘটনা কোনোভাবেই একটি দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে না।

ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে ঘটনা অবহিত করেন এবং নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ঘটনার পরের দিনই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবীর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সামগ্রিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, বিশেষ একটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা টানাপড়েনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের টানাপড়েন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের জন্যই সুখকর নয়। এ কারণে অনড় অবস্থানে না থেকে নিজেদের স্বার্থরক্ষা ও চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। সুসম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিতেই প্রাধান্য দিতে হবে। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, শাহীনবাগের ঘটনায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ এটা কোনো হামলার ঘটনা নয়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার ঘটনাও নয়। তবে এভাবে একজন রাষ্ট্রদূতের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা যেন আর না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেরও উচিত বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিবেচনার পরিচয় দেওয়া। কোনো একটি তথ্য পেয়েই সে বিষয়ে মন্তব্য করা হলে তা বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। বরং ভুল বা খণ্ডিত তথ্য উভয় দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্থিরতরার সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আশা করেন সরকার কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সব বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় সফল হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা