× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাইবার অপরাধ: অভিযোগকারীদের বেশির ভাগ বুলিংয়ের শিকার

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২ ১৮:৩৮ পিএম

আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২ ১৯:৫৮ পিএম

সাইবার অপরাধ: অভিযোগকারীদের বেশির ভাগ বুলিংয়ের শিকার

দেশে সাইবার অপরাধ নিয়ে অভিযোগকারীদের ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশই নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারি-পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা বাড়ছে। এ অবস্থায় সচেতনতামূলক প্রচারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান এসেছে। তবে পুলিশ বলছে, নানা কারণে এ বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন না। ফলে তাদের কিছুই করার থাকে না। 

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শনিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা ২০২২’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মনিরা নাজমীন জাহান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির পরিচালক সাকিফ আহমেদ, সাবেক অডিটর জেনারেল ও প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোকলজ্জার ভয়সহ বিভিন্ন কারণে অপরাধের বিষয়ে অনেকেই কোথাও অভিযোগ করেন না। সার্বিক পরিস্থিতিতে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের ওপর জোর দেয়া জরুরি। ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২ মার্চ পর্যন্ত ব্যক্তি পর্যায়ে ১৯৯ জনকে ১৮টি প্রশ্ন করা হয়। সেই মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

মনিরা নাজমী জাহান বলেন, করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বাড়ছে। অভিযোগকারীদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর, এই হার ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ। হয়রানির পর শতকরা ৭৩ জনের মতো আইনের আশ্রয় নেন না। এ ছাড়া আইনের আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আইনি সেবার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

সাকিফ আহমেদ বলেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেশির ভাগর মানুষ কোনো-না কোনোভাবে আক্রান্ত। শিশুদের পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক। একটা ইন্টারনেট সংযোগ একই সময়ে পরিবারের ১৩-১৪ জন্য ব্যক্তিও ব্যবহার করেন। কিন্তু সবাই ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন নন। এ ধরনের অপরাধ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। দেশে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের লগ সংরক্ষণ করে না, এটি জরুরি।

অভিযোগকারী ও অভিযুক্তরা প্রায় একই বয়সী। আর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ঘটা অপরাধের তথ্য পাওয়া যায় না বলে মত ইকবাল হোসাইনের। তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা শুধু অভিযোগকারী নয়, অপরাধীরাও বেশির ভাগ এই বয়সী। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যেসব সাইবার অপরাধ ঘটে সেসবের তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে গুজবও একটা মারাত্মক বিষয়। আন্তর্জাতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকাশিত সংবাদের ৮০ শতাংশ অসত্য। এজন্য সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

অনেকে সাইবার অপরাধের শিকার হয়েও অভিযোগ করেন না বলে জানান এডিসি সুলতানা ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে আইন মেনেই কাজ করতে হয়। তাই আইনি প্রতিকারের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং অপরাধের শিকার হলে দ্রুত কাছের থানায় অথবা সিআইডি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে আইনি প্রতিকার মিলবে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং বা তথ্য চুরি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো এবং অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারিতের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।

সাইবার অপরাধের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রথমে রয়েছে অনলাইন একাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা, যার হার ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০২১ সালের প্রতিবেদনে এই হার ছিল ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা এবারের তুলনায় ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। তবে চিন্তার বিষয় এই হলো, গতবারের প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা ছিল ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। কিন্তু এবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গতবারের তুলনায় ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি/ভিডিও ব্যাবহার করে হয়রানি এবং ফটোশপে অভিযোগকারীর ছবি বিকৃত করে হয়রানির ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। যৌন হয়রানিমূলক হয়রানির পরিমাণ গতবার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিল। কিন্তু এবার তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে এবং ছবি বিকৃত করে হয়রানির ঘটনা গতবারের প্রতিবেদনে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ পাওয়া গেলেও এবার তা ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। নারী ও পুরুষের মধ্য সাইবার অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রায় ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীরা সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হয়েছেন। লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য করলে দেখা যায়, অভিযোগকারীদের মধ্য পুরুষের সংখ্যা ৪৩ দশমিক ২২শতাংশ এবং নারীদের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অভিযোগকারীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আইন সম্পর্কে জানেন ৪৩ দশমিক ২২ শতাংশ। বাকি ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ অভিযোগকারীর দেশে বিদ্যমান আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা কম। এক হিসাবে দেখা গেছে, ১৯৯ জনের মধ্যে মাত্র ৫৩ জন সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ করেছেন। এটা মোট অভিযোগকারীর মাত্র ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২১ এর পরিসংখানের তুলনায় মাত্র ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।

সমস্যা নিয়ে পুরুষ অভিযোগকারীর ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেছেন। তবে সহায়তা নেননি বা অনিহা প্রকাশ করেছেন ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ পুরুষ। পরিসংখ্যানে এও লক্ষণীয়, পুরুষের তুলনায় নারী অভিযোগকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। নারী অভিযোগকারীর মধ্যে মাত্র ১১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গেছেন। আইনের আশ্রয় নিতে অনিহা প্রকাশ করেছেন নারীদের ৪৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ

করোনা-পরবর্তী সময়ে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরজাহান খাতুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের সব কিছু অনলাইন নির্ভর হয়েছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব কিছু অনলাইনে হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রটা বেড়ে গেছে। যে বাচ্চাটা কখনই নেট ব্যবহার করতো না, সে বাচ্চাটি ক্লাশ টু থ্রিতে নেট ব্যবহার করছে। এটা একটা বিষয়। 

‘অন্য একটা বিষয় হলো, করোনার আগে শিশু-কিশোররা যে সময়টুক বাইরে কাটাতে পারত, করোনাকালীন বা করোনা-পরবর্তীতে তাদের কিন্তু ওই সময়টা ঘরে থাকতে হচ্ছে। ফলে রিক্রেশনের অন্য দিকগুলো না থাকায় নেট দুনিয়ায় তাদের আগ্রহের জায়গা তৈরি হয়েছে। যে কারণে গ্রামপর্যায়ে থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগার কারণে সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।’

এই অপরাধপ্রবণতা কীভাবে কমতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ থেকে প্রতিকার পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যারা সাইবার ক্রাইম করছে তাদের আইনের আওতায় এনে বা এ জাতিয় মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিচারকার্য দ্রুত হলে সাইবার অপরাধ কমে আসবে। সাইবার আইনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া কাউন্সেলিং ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও তার সন্তানের প্রতি সচেতন হতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা