প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২২ ১৩:০২ পিএম
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২২ ১৪:২৭ পিএম
গোলাম সারওয়ার (ফাইল ছবি)
আজ (১৩ আগস্ট) দেশের আধুনিক সংবাদপত্রের অন্যতম কারিগর, মেধাবী ব্যক্তিত্ব সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের আজকের দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দৈনিক যুগান্তর ও সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের তিন দশকের বার্তা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মা মরহুম সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজীবন।
গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এই পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন।
গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে তার সাংবাদিকতা পেশার সূচনা। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নিজ এলাকা বানারীপাড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সত্তর দশকের প্রধমার্ধে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক পূর্বাণীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। পূর্বাণীতে তারই সম্পাদনায় এদেশে ম্যাগাজিন আকারে বৃহদায়তনের ঈদসংখ্যা প্রকাশের রীতি শুরু হয়।
দীর্ঘ কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক এবং এর ৬ বছর পর ২০০৫ সালে আরেকটি নতুন দৈনিক সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার; ষাট ও সত্তরের দশকে অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে এক সময় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ছড়া গ্রন্থ ‘রঙিন বেলুন’ ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় গরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাক’ ইত্যাদি। সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
বরেণ্য এই সাংবাদিকের মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষ্যে গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্মস্থান বানারীপাড়ায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে বানারীপাড়া বায়তুল আমান এতিমখানা ও বানারীপাড়া উত্তরপাড় বেগম ফজিলাতুন্নেছা এতিমখানায় কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। পরে দুই এতিমখানার শিশুদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া একই দিন এশার নামাজের পর বানারীপাড়া হাইস্কুল জামে মসজিদে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রবা/আশা/এসআর