× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি এখনও ‘প্রাথমিকে’

দীপক দেব

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৮ এএম

ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি এখনও ‘প্রাথমিকে’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চললেও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিলের যে সময়ের কথা প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, সেটা ধরেই আপাতত প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার জন্য সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা তথা জুলাই সনদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইসিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে একটি খসড়া রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় ও সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা না পাওয়ার কারণে সেই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংস্কার সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কিছু কিছু দল বলেছে, সংস্কারের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তারা সেটা মেনে নেবে না। এই অবস্থায় রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা তথা জুলাই সনদের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর ইসির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে।

এদিকে গত বুধবার চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ প্রকাশ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তাই সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়ার পর ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরেশোরে শুরু করতে পারবে। 

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির বিষয়টি চলমান রাখা হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো সুরাহা হয়নি। বিশেষ করে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি এবং সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়গুলো এখনও ঝুলে আছে। তবে গত বুধবার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। যে কমিটি ইসিকে সহযোগিতা করবে। তবে ভোটার তালিকা আইন ও বিধি পরিবর্তনের কাজ এখনও বাকি। এছাড়া ভোটের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনসহ অনেক ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয় এখনও রয়ে গেছে। 

তবে এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে নির্বাচন কমিশনের খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. আবদুল আলীম। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, যেহেতু সনদটা চূড়ান্ত হওয়ার দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি এবং আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি এটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছলে তাদের স্বাক্ষরের পর জুলাই সনদ ঘোষণা হবে। আমার ধারণা, জুলাই সনদ ঘোষণা হওয়ার পরই নির্বাচন কমিশন একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারবে। আর সেটা হলেই রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের কাছে নির্বাচনের সময় ও তারিখ পরিষ্কার হয়ে যাবে। দূর হবে সব সন্দেহ ও অবিশ্বাস। এজন্য আমার মনে হয় সবার ফোকাস হওয়া উচিত জুলাই সনদ। 

ইসিও কি তাহলে জুলাই সনদের দিকে তাকিয়ে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ আগামী নির্বাচনটা একটা ভিন্ন কনটেস্টে হচ্ছে। এই নির্বাচন অন্যান্য সময়ের মতো না। এই নির্বাচনের আগে সংস্কার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু বলেছেন, সংস্কারে যথাযথ অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো সমস্যা নেই। সেজন্যই তো আমরা ওই সনদের দিকে তাকিয়ে আছি। রাজনৈতিক দলগুলোও তাকিয়ে আছে, ইলেকশন কমিশন তো বটেই। কারণ তারা তো ওই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই রোডম্যাপ ঘোষণা করবে। রোডম্যাপ মানে তো শুধু নির্বাচনের তারিখ নয়, তার মধ্যে অনেক কিছু থাকবে। অনেক ধরনের সংস্কার থাকবে। ইসি কীভাবে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে, সেই বিষয়ও থাকবে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কি সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি এরই মধ্যে রুটিং ওয়ার্ক হিসেবে কিছু কাজ করেছে, এখনও করে যাচ্ছে। যেমন ভোটার তালিকা হালনাগাদ। এটা চলমান রয়েছে, যথাসময়ে ঘোষণা করে দেবে। সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি যদি বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে হয়, তাহলে এটাও খুব অল্প সময়ের ব্যাপার। সরকারের পক্ষ থেকে একটা অধ্যাদেশ করে কয়েকদিনের মধ্যে এটা করে ফেলা সম্ভব। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়াও চলমান। যেহেতু সবগুলো কাজই চলমান, তাই আমার কাছে মনে হয় না বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হলে তো সবাই ইসিকে সহযোগিতা করবে। তাই এই কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করতে কোনো ধরনের সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

৫ আগস্টের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু রাজনৈতিক দল। এই অবস্থায় গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন। তবে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকে। এই অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরকালে ১৩ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। ‌দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে।’ 

যদিও সেই সময় এই বিবৃতি প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ওই বৈঠকের পর দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আর কিছু জানানো হয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনকেও কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় গত ২৬ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তাদের আলাপের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পরে গত ১ জুলাই এ প্রসঙ্গে সিইসি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন, পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে বলে তাকে অবহিত করা হয়েছে। ভোটের প্রস্তুতি এখন ফুল গিয়ারে চলছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময় ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যথাসময়ে নির্বাচনের তারিখ এবং শিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।’ 

অনেকেই মনে করছেন, লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সৌজন্য সাক্ষাৎ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা না আসায় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। যেহেতু অভ্যুত্থানের পক্ষের কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সংস্কার ও জুলাই সনদ ঘোষণার আগে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করার জোর দাবি জানানো হয়েছে; সেজন্য এসব বৈঠকের পরও রোডম্যাপের বিষয়টি পরিষ্কার করা হচ্ছে না। 

এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়Ñ এমন কোনো ইস্যু সামনে আনা ঠিক হবে না বলে মনে করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য দ্রুত নির্বাচন হওয়া জরুরি। এমন কোনো বিষয় সামনে আনা ঠিক হবে না, যেটা নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়, নির্বাচন প্রলম্বিত হয়। আমার মতে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকার, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও জনগণের আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা