প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫ ০৯:৫১ এএম
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা যেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ না পান সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতেই কঠোর বার্তা দিয়েছিল। সে বার্তা যথাযথ প্রতিপালিত হলেও কোথাও কোথাও উপেক্ষিতও হয়েছে। কেউ কেউ রাতারাতি ভোল পাল্টে সরকারের আস্থাভাজন হয়েছেন। কেউ কেউ নিজেদের প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বাগিয়ে নিয়েছেন লোভনীয় পদপদবি। তাদের অন্যতম অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ জহিরুল কাইয়ুম।
গত সরকারের আমলে প্রায় পাঁচ বছর বেলজিয়ামের ব্রাসেলস-এ বাংলাদেশ দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদে ছিলেন মোহাম্মদ জহিরুল কাইয়ুম। সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সুইজারল্যান্ড জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে। গত ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সরকারের নীতিনির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে এই কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ বছর ১১ মাস ১ দিন ব্রাসেলস দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ছিলেন। এরপরও তাকেই জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের খবর জানাজানি হলে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা সুবিধাভোগীদের পরিবর্তে দলনিরপেক্ষ বা গত সরকারের সুবিধা নেননি এমন কর্মকর্তাকে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সে আপত্তি উপেক্ষা করে এই কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে নিয়োগ দেওয়ার সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে।
সূত্রে বলছে, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এই পদে বেশকিছু সংখ্যক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ মে চূড়ান্তভাবে ছয় যুগ্ম সচিবকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দীন (তৎকালীন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান।
বাণিজ্য উপদেষ্টার কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রার্থীদের এই মৌখিক পরীক্ষায় বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উনয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
সরকারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের জেনাভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও)-এর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় করাসহ ইউরোপীয় দেশসমূহের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ উইংয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এজন্য পদটিতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের প্রজ্ঞা সম্পন্ন ইউরোপীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া অবশ্যক। কারণ তাদের বাণিজ্যিক-কূটনৈতিক তৎপরতায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এরপরও অতীত পর্যালোচনা না করে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের চরম সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।