জটিলতায় উদ্যোক্তা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৫ ১৮:৩৩ পিএম
সরকারের কাস্টমস বিভাগের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশে প্রথমবারের মতো আমদানি করা সর্বাধুনিক সেচযন্ত্র সেন্টার পিভট ইরিগেশন (সিপিআই) চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়েছে। এ কৃষিযন্ত্রকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে চারগুণের বেশি শুল্কায়ন করা হয়েছে। পণ্য খালাস না করতে পেরে প্রতিদিন অতিরিক্ত বন্দর চার্জও গুণছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
শনিবার (২৮ জুন) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ভূক্তভূগি প্রতিষ্ঠান শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের এ সময় বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি প্রকল্পের যন্ত্র এ সিপিআই। দেশের ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ ও উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিএডিসি প্রথমবারের মতো একটি প্রকল্পে এ সিপিআই সিস্টেম চালু করা উদ্যোগ নেয়। সরকারের ওই ' পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্প' এর দরপত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এ কার্যাদেশ পাই।
কার্যদেশ অনুযায়ী পণ্য এনে এখন আমরা পণ্য ছাড় করতে পারছিনা। কাস্টমস নানা জটিলতা তৈরী করেছে।
আবু তাহের বলেন, সিপিআই সিস্টেমটি একটি সম্পূর্ণ সিস্টেম। যার একটি যন্ত্রাংশকে যদি সিস্টেম থেকে বিযুক্ত করা হয়, তাতে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি অকার্যকর হয়ে যাবে। যে কারণে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই যন্ত্রটিকে একক সিস্টেম হিসেবে রপ্তানি করে থাকে। বিএডিসির কার্যাদেশ এবং চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছে পাঠানো চিঠিতেও সিপিআই সিস্টেমকে একক সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে এখন যন্ত্রটি আমদানির পরে জটিলতা তৈরী করেছে কাস্টম হাউজ। এটি প্লান্ট হিসেবে একাধিক যন্ত্রের শুল্কায়ন করা হচ্ছে।
কৃষিযন্ত্র হিসেবে এর প্রকৃত ডিউটির হওয়ার কথা ছিল ১২ লাখ সাড়ে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস সিস্টেমটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে আলাদা করে, বিশেষ করে সিস্টেমটির যন্ত্রাংশ ওয়াটার ডিস্ট্রিবিউশনও টাওয়াবে ব্যবহৃত ৫ টন পাইপকে আলাদা করে শুল্কায়ন করছে। এই পদ্ধতিতে শুল্কায়ন করা হলে শুল্ক ও জরিমানাসহ কমবেশি ৪২ লাখ টাকা দিতে হবে। এছাড়া খালাস না করতে পারায় প্রতিদিন আমাদের দেড়শো ডলার অতিরিক্ত বন্দর চার্জও গুণতে হচ্ছে।
আমরা এ বিষয়ে বিএডিসির পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ ও ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ বি এম মাহমুদ হাসান খানকে অবহিত করেছি। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার বরাবর সিস্টেমটিকে একক কৃষিযন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছেন। তারপরেও সেটা মানা হয়নি। এছাড়া এ বিষয়ে অবহিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কমিশনারের কাছেও একটি চিঠি জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি।
আবু তাহের বলেন, যদি কাস্টমস বিভাগের এই সিস্টেমটি সম্পর্কে ধারণাগত অস্পষ্টতা থাকে, তবে তারা এ বিষয়ে বিএডিসির মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটা না করে এককভাবে ভূল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। যা হয়রানি করা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
তিনি বলেন, কাস্টমস বিভাগের অসহযোগিতা অব্যাহত থাকলে পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠান সীমাহীন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশও কৃষির ক্ষেত্রে একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হবে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে শেরপা পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।