× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পুলিশ সদস্যরা

তানভীর হাসান

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:২৭ পিএম

আপডেট : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:২৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মারণাস্ত্র জমা দিয়ে লাঠি বা শটগান নিয়ে সতর্ক দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা নিয়ে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে পুলিশ বাহিনীর মাঠপর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে। এমনকি পুলিশ সদস্যদের মনোবল কমা ছাড়াও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে অভিযান চালাতে নিরুৎসাহিত হবেন মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে অপরাধীরা। গতকাল বৃহস্পতিবারও মাদকবিরোধী একটি অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশের ডিবির একজন সহকারী কমিশনারসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আবারও পুলিশের ভেতর আলোচনার ঝড় ওঠে। দেশের চলমান এমন পরিস্থিতিতে পুলিশকে মারণাস্ত্রবিহীন না করে বরং অস্ত্র ব্যবহার প্রবিধান মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশকে মারণাস্ত্রবিহীন করার সিদ্ধান্ত জানানোর দুদিনের মাথায় গত মাসের মাঝামাঝিতে স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন-২ একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে ডিউটিকালে হাতিয়ার হিসেবে লাঠি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়। পাশাপাশি কনস্টেবলদেরও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা জারির পর থেকেই পুলিশ সদস্যদের মধ্যে লাঠি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের প্রকাশ ঘটতে শুরু করে। নিজেদের আলোচনার বাইরে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা শুরু হয়। এমন সিদ্ধান্ত মনোবল দুর্বল করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে পুলিশ সদস্যদের মাঝে। অনেকেই অপরাধী ধরতে বিশেষ অভিযানে যেতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। চাকরি বাঁচানোর জন্য গা বাঁচিয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছেন। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশের দায়িত্বশীলরা।

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে আরও ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে। একই সঙ্গে অভিযানেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। ফলে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্র ব্যবহার প্রবিধান সংস্কার করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও দায়িত্ব পালনের সময় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হলে পুলিশ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিক্রমেও অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে এই অস্ত্র ও গুলি ব্যবহারের বিষয়ে একটি তদন্ত হয়। ওই তদন্তে কোন পরিস্থিতিতে তিনি গুলি ছুড়লেন তা উঠে আসে। সেখানে অতিরঞ্জিত কিছু পাওয়া গেলে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বিষয়টি আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করা গেলে বিনা কারণে গুলি ছোড়ার প্রবণতা কমে আসবে। এ বিষয়টিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ৫ আগস্ট এবং এরপর পুলিশের ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮২৬ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট হয়েছে। এর মধ্যে এখনও ১ হাজার ৩৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৫১ হাজার ৮২৬ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার না হওয়া এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছেÑ ২৯৬টি চায়না রাইফেল, ৮টি বিডি রাইফেল, চায়না এসএমজি ৬০টি, এলএমজি ১১টি, চায়না পিস্তল ৫৪টি, ৯ বোরের পিস্তল ৬৫৩টি, এসএমজি একটি, ১২ বোরের শটগান ৬৫৩টি, সিঙ্গেল গ্যাসগান ১১৭টি, ৩৮ মিমি টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ৫টি ও সিগন্যাল পিস্তল ২টি। এমনকি শেখ হাসিনার পলায়নের পর গণভবন থেকে এসএসএফের ৩২টি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রও খোয়া যায়। এসএসএফের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ওই অস্ত্রগুলো সেখানে ফেলে দিয়ে দেয়াল টপকে চলে যান। খোয়া যাওয়া এসএসএফের এসএমজি টি-৫৬, অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন গান, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ও বেতার যোগাযোগের ডিভাইসও ছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী সময়ে পুলিশের ৫ হাজার ৭৫৩টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র লুট হয়। পরে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪ হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত লুণ্ঠিত অস্ত্রের ১ হাজার ৩৬৯টি উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র উদ্ধারে বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রাধিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে যেকোনো পুলিশি কার্যক্রম যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অস্ত্রের প্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়। কাজেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা তৈরি হওয়ার বিষয়টি অমূলক। চিহ্নিত দুর্ধর্ষ অপরাধী, চরমপন্থি বা সশস্ত্র বিদ্রোহ (ইনসার্জেন্সি) প্রবণ এলাকায় পুলিশি কার্যক্রমের সময় অবশ্যই যথাযথ অস্ত্র ব্যবহারের জন্য পুলিশ প্রাধিকারপ্রাপ্ত।

এআইজি বলেন, ৫ আগস্ট-উত্তর নতুন বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের প্রাধিকারের বিষয়টি শুধু জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অর্থাৎ মিছিল-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নেই গভীরভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মিছিল-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে লং আর্মস অর্থাৎ জীবনবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা স্বভাবতই প্রশ্নবিদ্ধ। এই বিষয়টিই বর্তমানে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তবে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যেকোনো সময়ের তুলনায় অপরাধীরা এখন অধিকমাত্রায় বেপরোয়া। তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রও রয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি সামান্য মোটরসাইকেলের কাগজ যাচাই করতে গেলেও হামলার ঘটনা ঘটছে। সেখানে দাগী অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখছেন তারা। 

সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ এখনও হামলার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশেরও আত্মরক্ষার ব্যাপার রয়েছে। দুর্ধর্ষ আসামি ধরতে গিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। এমন সময় এই সিদ্ধান্ত খুবই উদ্বেগজনক। অবশ্যই পুলিশের কাছে অস্ত্র রাখার প্রয়োজন আছে। পুলিশের নিজের কাছেই যদি অস্ত্র না থাকে, তাহলে তারা অস্ত্রধারী আসামিদের গ্রেপ্তার করবে কীভাবে? আর কোনো অভিযানে গিয়ে আত্মরক্ষার প্রয়োজন পড়লে কী করবে?

সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ অনেক আগে থেকেই এলএমজি, এসএমজির মতো অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে। ২০০৫ সালের দিকে যেমন রাজশাহী এবং খুলনা অঞ্চলে চরমপন্থিদের সাথে পুলিশের নিয়মিত গোলাগুলি হতো। আবার জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে পুলিশের গোলাগুলি হতো। এখনও অপরাধীদের হাতে ভারী অস্ত্র রয়েছে। আবার বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার হতে হয়েছে। যখন-তখন গুলি ছুড়তে হয়েছে। এভাবে পুলিশের মধ্যে এক ধরনের ট্রিগার হ্যাপিনেস তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কেবল শটগান নিয়ে মোকাবিলা করা পুলিশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। তবে আমি মনে করি, সরকার যেহেতু একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অবশ্যই অনেক চিন্তাভাবনা করেই নিয়েছে। বিকল্প কোনো পন্থা অবশ্যই তাদের পরিকল্পনাতে রয়েছে।

মানবাধীকার কর্মী এএসএম নাসির উদ্দিন বলেন, পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। তার কাছে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের অস্ত্র থাকা মানেই দেশের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন হওয়া। মব না রাজনৈতিকÑ যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো মেনে পুলিশকে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিগত সরকার যেমন পুলিশ দিয়ে নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেই সুযোগ যেন আর কেউ না পায়। সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা