প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫ ১৩:৫০ পিএম
দেড়শ টাকার নিচের প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও সাধারণ জুতার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখায় ধস নেমেছে দেশের ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্পে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন কমেছে বিক্রি ও উৎপাদন, তেমনি কর্মসংস্থান হারিয়ে দুর্দশায় পড়েছেন অনেক শ্রমিক। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, এই সুযোগে সস্তা বিদেশি জুতা দখল করছে বাজার, বিশেষ করে ভারতের পণ্য। ফলে স্থানীয় শিল্প পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে।
দেশীয় পাদুকা শিল্পের অন্যতম কমদামি ও রিসাইকেলযোগ্য পণ্য- প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও সাধারণ জুতার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান। পরে ডিআরইউ ভবনের সামনে মানববন্ধনও করেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য মতে, গত অর্থবছরের মাঝামাঝি এনবিআর একটি বিশেষ আদেশ (এসআরও) জারি করে দেড়শ টাকা পর্যন্ত দামের পাদুকার ওপর দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও ভ্যাট বহাল রাখা হয়েছে, যা তাদের ক্ষুদ্র কারখানার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ফজলু বলেন, ‘এই খাতের মূল উপকরণ হলো পরিত্যক্ত রাবার, প্লাস্টিক ও পলিথিন। এগুলো রিসাইকেল করে আমরা স্বল্পমূল্যের জুতা তৈরি করি। কিন্তু ভ্যাট আরোপের ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কমেছে। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিকেরা কর্মহীন হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জুতার ক্রেতা মূলত হকার, রিকশাচালক, দিনমজুর ও প্রান্তিক মানুষ। ভ্যাটের কারণে দাম বাড়ায় তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে।’
ব্যারিস্টার মো. তাইফুল সিরাজ, যিনি সমিতির আইন উপদেষ্টা হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে এ পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বড় সহায়তা ছিল। এখন তা তুলে দেওয়ায় জনগণের ওপর চাপ বাড়ছে। পাশের দেশ ভারতে যেখানে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জুতায় ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে আমাদের এখানে দেড়শ টাকার পাদুকাতেও ভ্যাট বসানো অন্যায্য।’
পাদুকা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশীয় উৎপাদকরা এই খাতে টিকতে না পারলে বিদেশি পণ্যে নির্ভরতা বাড়বে, যার ফলে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটবে। একইসঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানান, গ্রামীণ অর্থনীতি, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, শ্রমঘন শিল্প এবং নিম্নআয়ের মানুষের জীবনমানের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে পূর্বের মতো অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহাল করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতির সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন, সচিব ইমরুল কায়েস ও সদস্য জাহেরুল ইসলাম।