কর্মস্থলে ফেরা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ২১:৫৩ পিএম
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আজ থেকে চালু হচ্ছে অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শনিবার (১৪ জুন) ছুটির শেষ দিনে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য ফিরেছেন হাজার হাজার মানুষ। শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায় ঢাকা ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টির কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীদের পড়তে হয় বিপাকে। এদিকে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় সৃষ্টি হয় যানজট, যা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়।
মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে উত্তরের যাত্রীদের ৮ ঘণ্টার রাস্তায় পৌঁছতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন ও লঞ্চ সঠিক সময়ে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর রেলওয়ে স্টেশনে এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে পৌঁছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, সঠিক সময়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেশিরভাগ ট্রেন। তবে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা কালনি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকায় আসতে ঘণ্টাখানেক দেরি করে। যাত্রীরা বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কারণেও ট্রেনের তেমন কোনো শিডিউল বিপর্যয় হয়নি।
এদিন সকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাÑ বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনাসহ বহু স্থান থেকে ঢাকামুখী লঞ্চগুলো সদরঘাটে এসে ভিড়তে থাকে। প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন, কেউবা একা। কেউ ছাদের ওপর, আবার কেউ ডেকে বসে রাজধানীতে ফিরেছেন।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চে ভাড়া নিয়ে তেমন সমস্যা না থাকলেও যাত্রীর চাপ ছিল অনেক। গরমের কারণে কিছুটা অস্বস্তি পোহালেও লঞ্চযাত্রায় অন্য কোনো সমস্যা ছিল না।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল এসে নামছেন হাজার হাজার মানুষ। যাত্রীরা বলছেন, শুক্রবার রাতে রওনা দিয়ে শনিবার দুপুরে এসে ঢাকায় পৌঁছলাম। ঢাকামুখী গাড়ির চাপের কারণে যানজটে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানীতে আসার আগেই যমুনা সেতু, টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় যানজটে ভোগান্তির তথ্য মিলেছে। এতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার যাত্রায় ১২ থেকে ১৭ ঘণ্টা লেগেছে ঢাকায় প্রবেশ করতে।
শনিবার ছুটির শেষদিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে বাড়ে গাড়ির চাপ। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। শনিবার ভোর থেকে মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে যমুনা সেতু থেকে পুংলি পর্যন্ত এ যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে যানজট নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্ট পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন।
যমুনা সেতু কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে চলেছে ৩০ হাজার ৮১৭টি এবং ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন। এ সময় টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন যমুনা সেতুর পশ্চিমের কড্ডার মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজট চলছে। নলকা সেতু থেকে ঝাঐল উড়াল সড়ক হয়ে যমুনা সেতুর পশ্চিম টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে এই যানজট দেখা গেছে। এ কারণে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে থেমে থেমে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।
নাহার কলি শুক্রবার রাতে কুড়িগ্রাম থেকে পরিবারে সবাইকে নিয়ে রাত ৯টায় রওনা দেন। সকাল ৭টায় যখন ঘুম ভাঙে তখন গাড়ি যমুনা সেতুর ওপর। তিনি জানান, একে ভ্যাপসা গরম আর অন্যদিকে যানজট সব মিলেই ভোগান্তি ছিল চরমে। তিনি জানান, বিশেষ করে আমার পাঁচ বছর বয়সি ছেলে ও আমার দুই বছরের মেয়ে গরমে ছটফট করে পুরো রাস্তায়।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী দেশ ট্রাভেলসের সুপারভাইজার জয়নাল আবেদিন বলেন, শুক্রবার রাত ১২টায় রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। এখন সকাল সাড়ে ৯টায় সিরাজগঞ্জের যানজটে আটকে আছি। কখন ঢাকায় পৌঁছাব, তা বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে নাটোর বনপাড়া থেকেই গাড়ি ধীরগতিতে চলছে।
ট্রাকচালক মাহবুব হোসেন বলেন, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে শুক্রবার রাত ১০টার সময় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। দুপুর ১টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এসেছি।
নাইম হোসেন রাজশাহী থেকে শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি জানান, গাড়ির চালক আগে থেকেই জানতেন রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। সে কারণে যমুনা সেতুর দিকে না গিয়ে নাটোরের বনপাড়া হয়ে পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাটের দিকে আসতে থাকেন। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে দেখেন এই রাস্তাতেও গাড়ির চাপ প্রচণ্ড। ফেরিঘাট পৌঁছাতে তখন ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ৬টায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি পাবনার ফেরিঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কিন্তু আজ ৮ ঘণ্টা হয়ে গেছে এখনও নদী পার হতেই পারিনি।
এ ব্যাপারে যমুনা সেতু পূর্ব থানার (ওসি) ফয়েজ আহমেদ বলেন, সেতুর ওপর সড়ক দুর্ঘটনায় কারণে সারা রাতই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের ধীরগতির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও সিরাজগঞ্জ অংশে যানজট ছিল। যার কারণে টাঙ্গাইলের অংশেও যানবাহনের জটলা বাঁধে। তবে যানজট নিরসনে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে ধীরগতিতে চলে গাড়ি। ফলে এসব এলাকায়ও সৃষ্টি হয় যানজটের।
এ ছাড়া শনিবার ছুটির শেষ দিনে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে দৌলতদিয়া ঘাটে। তবে খুব একটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের পারাপারে এবার ২০টি লঞ্চ ও ছোটবড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। ফলে নদীতে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও ফেরি থাকায় দৌলতদিয়া প্রান্তে দীর্ঘ অপেক্ষা বা ভোগান্তি ছাড়াই স্বাভাবিক সময়ের মতোই নদী পার হয়েছেন যাত্রীরা। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।
ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল লঞ্চঘাটে গেলে অভিযোগ পাওয়া যায় বাড়তি ভাড়ার। যাত্রীদের অভিযোগ, আগে ঢাকা বরিশাল রুটের ডেক ভাড়া ৩০০ টাকা থাকলেও তা বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা থেকে ২০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। আর ডাবল কেবিন ২ হাজার টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোতে ভাড়া বেড়েছে প্রকারভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা
প্রতিবেদক]