× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডেঙ্গু রোগীর স্বজনদের কান্নায় ভারী বরগুনা

রাসেল মাহমুদ

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ০৯:২৮ এএম

ডেঙ্গু রোগীর স্বজনদের  কান্নায় ভারী বরগুনা

বরগুনা এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। জেলার ১২ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র বরগুনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চরম জনবল সংকট, ওষুধের ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যেখানে থাকা উচিত ৫৫ জন চিকিৎসক, সেখানে বর্তমানে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৭ জন। ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশের মোট ডেঙ্গু রোগীর এক-চতুর্থাংশ এখন বরগুনায়, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। জনসচেতনতা, চিকিৎসাসেবা এবং কার্যকর প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাবে জেলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে ডেঙ্গু, আর মানুষের অসহায় আকুতি পৌঁছায়নি সংশ্লিষ্টদের কানে। এমন সংকটকালে বরগুনা জেলাকে ‘ডেঙ্গু হটস্পট’ ঘোষণা ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ, সামাজিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো। এই মৃত্যুর মিছিল আর কতদূর যাবে, সেই প্রশ্নই বরগুনাবাসীর।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন ভর্তি হয়েছে ৪৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৭১৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৭২ জন, যার মধ্যে ৩১ জন শিশু। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮ জন, তবে বেসরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ জন।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিঘরে ১ থেকে ২ জন করে ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন। যারা হাসপাতালে সেবা না পেয়ে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে গড়ে ২ থেকে ৩ জনের মৃত্যু হলে বরগুনা শহর স্বজনহারার কান্নার আহাজারিতে পরিণত হবে।বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭২ জন। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ৪টি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। রক্তে সঞ্চালন স্যালাইনসহ বাকি সব ওষুধ কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অনেক রোগী চিকিৎসা ব্যয় মেটাচ্ছে ধারদেনা করে।হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত সফিক বলেন, ৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি কোনো সেবা পাচ্ছি না, ডাক্তারের দেখাও পাই না, শুধু স্যালাইন আর কিছু ওষুধ চলে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন মৃত্যু রোগী নামছে, জানি না কবে আমাদের নামাতে হবে।ডেঙ্গু রোগে নিহত জেরিনের স্বামী রাজন বলেন, আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের আগের দিন বাসায় আসি। কারণ সেখানে মাত্র ১ জন চিকিৎসক ছিলেন। সেবা নেই, ওষুধ নেই, এই সংকটের সময় ডাক্তাররা সবাই ঈদের ছুটিতে। পরিবার নিয়ে ঈদ করে, আর আমাদের কোল খালি হলে তাদের কী?রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অনেকে মাসে ১৫-১৬ দিন হাসপাতালে হাজিরা দিয়েও তুলছেন পুরো মাসের বেতন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


১২ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে’ ডাক্তার সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ১০ জন। তার মধ্যে ছুটিতে আছেন পাঁচ জন। এসব নানা কারণে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। সম্প্রতি বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের কন্যা মোনালিসা জেরিনসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের অকালমৃত্যুতে রাস্তায় নেমেছে স্থানীয় জনগণ। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। জেলাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করা এবং জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় তারা।


বরগুনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী শিমু জাহান বলেন, বরগুনার জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে আমাদের সহকর্মী মোনালিসা জেরিন এবং কিশোরী উপমাসহ ১০ জনেরও বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এখনই প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শত শত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।এসব বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজয়ানুল আলম বলেন, সারা দেশের মধ্যে বরগুনা জেলায় সব থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের চেষ্টা করছি। তবে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ জানান, এবার থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, আবার ভ্যাপসা গরম। এটা ডেঙ্গুর এডিস মশা বৃদ্ধির একেবারে আদর্শ অবস্থা। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৩। এর মধ্যে শুধু বরগুনার রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭১৩ জন। এ হিসাবে দেশে ডেঙ্গু রোগীর ২৫ শতাংশই বরগুনা জেলায়। তবে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা