প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ২১:৩৭ পিএম
আপডেট : ২২ মে ২০২৫ ২১:৩৯ পিএম
দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায়ের ফলে রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নামজারী, ভূমি উন্নয়ন করা, পর্চা ও নকশা সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা শতভাগ অনলাইন ভিত্তিক ও ক্যাশলেস করা হয়েছে এতে করে প্রতিদিন সার্ভারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সচল থাকলে দিনে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি মেলা-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এবারের ভূমি মেলার প্রতিপাদ্য ‘নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি’। মেলাটি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভূমি ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় মোট ১৯টি স্টল হতে নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত সকল সেবা দেওয়া হবে। এবারের ভূমি মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে উদ্বুদ্ধ করা এবং সচেতন করা।
সিনিয়র সচিব বলেন, বাংলাদেশের ভূমি সেবা ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভূমিসেবায় ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম নাগরিকদের জন্য স্বস্তিদায়ক। হয়রানী মুক্ত ও জনবান্ধব ভূমি সেবাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ভূমি মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য অর্জনে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিগতভাবে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নামজারী, ভূমি উন্নয়ন করা, পর্চা ও নকশা সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা শতভাগ অনলাইন ভিত্তিক ও ক্যাশলেস করা হয়েছে। যে কোন নাগরিক পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময় (২৪/৭) সপ্তাহের সাতদিনে দিবারাত্রি চব্বিশ ঘণ্টাই কল সেন্টার ও নাগরিক ভূমিসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছে।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর শতভাগ অনলাইনে আদায়ের ফলে রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে প্রতি মাসে প্রায় ৫ লক্ষ নামজারি মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। সারাদেশের মোট ৫১৬ টি উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিস এবং ৩ হাজার ৪৬৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি চালু হয়েছে। এই সিস্টেম গতবছরের জুলাই ২৪ থেকে চলমি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ২৯০ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়ন কর হতে প্রতিদিন ৩-৪ লাখ টাকা এবং অনলাইন খতিয়ান হতে প্রতিমাসে গড়ে ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে। বর্তমানে ৬ কোটি ৫০ লাখের অধিক খতিয়ান অনলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। প্রতিদিন সার্ভারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা সচল থাকলে দিনে (১০ থেকে ১২ কোটি টাকা) ভূমি উন্নয়ন কর আদয় করা সম্ভব।
সালেহ আহমেদ আরও জানান, প্রতিদিন ই-পর্চা থেকে সরকারের কোষাগরে প্রায় ১৪-১৮ লাখ টাকা জমা হয়। জুলাই-২৪ থেকে মে-২৫ পর্যন্ত ই-পর্চা হতে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ৪৫ কোটি টাকা। ডাক বিভাগের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ খতিয়ান এবং ১১ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ জনগণের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহের কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ, রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধিকরনের লক্ষ্যে সারাদেশে ১ হাজার ৩৩০ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ করা হবে এবং ১৫০টি সমন্বিত উপজেলা ভূমি কমপ্লেক্স নির্মাণকল্পে ডিপিপি প্রণীত হয়েছে।
২০২৬ সাল নাগাদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য উল্লেখ করে সিনিয়র সচিব বলেন, ভূমি জরিপ একটি জটিল কাজ। এই কাজটি কম সময়ে নির্ভুলভাবে করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করে করা হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ভূমি অফিসে যেতে হবে না। এনআইডি দিয়েই পাওয়া যাবে জমির সকল তথ্য। কৃষি ও বণভূমি রক্ষায় নিতীমালা প্রণয়নের কথাও জানান সিনিয়র সচিব।
রাজস্ব মামলা ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাগ্রতা সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নাগরিকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব এজেএম সালাউদ্দিন নাগরী; ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মুহম্মদ ইব্রাহিম;ভুমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।