প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫ ২২:৫১ পিএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৫ ২২:৫৭ পিএম
দেশের তিন জেলায় শুক্রবার (১৬ মে) বজ্রপাতে ৩ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন একজন। আমাদের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও কিশোরগঞ্জের প্রতিবেদকরা এ খবর জানিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের ৮ বিভাগেই বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে।
অন্যদিকে ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রে ৫ দিন এবং সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানিপ্রবাহ বাড়তে পারে বলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আভাস দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের উলিপুরে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে চামেলি রাণী (৪০) নামে এক নারী মারা গেছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নের মধুপুর ক্লিনিকের পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। উলিপুর থানার ওসি জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ওই গ্রামের মদন চন্দ্রের বউ চামেলী রাণী খড়ের গাদা থেকে গরু গোয়াল ঘরে তুলতে যান। তখনই বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ সময় বজ্রপাতে একটি বকনা গরুও মারা যায়। মৃত চামেলী রাণী দুই সন্তানের মা।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় শুক্রবার সকালে ভুট্টা খেতে কাজ করতে গিয়ে আব্দুল করিম (৫০) নামে এক কৃষক বজ্রপাতে মারা গেছেন। উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের সফিরহাট রসুলপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আব্দুল করিম ওই এলাকার মৃত কফিলুদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় সফিরহাট বাজারে পান-সুপারির ব্যবসা করতেন।
পাটগ্রাম থানার ওসি স্বপন কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সকালে (শুক্রবার) আব্দুল করিম ছেলেসহ ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে তিনি মারা যান। ছেলে লেবু মিয়া আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ইটনায় বাড়ির সামনে হাওরে খোলা জায়গায় শুক্রবার বিকালে ধান শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে নিরোদ দাস (৬২) নামে এক কৃষক মারা গেছেন। এতে তার স্ত্রী আহত হয়েছেন। উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের দৈলং গ্ৰামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নিরোদ দাস ধনপুর ইউনিয়নের দৈলং নতুন হাটি গ্রামের মৃত বিষ্ণু দয়াল দাসের ছেলে।
ইটনা উপজেলা ইউএনও রায়হানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন বাড়ির সামনে হাওরে ধান শুকানোর সময় বজ্রপাতে একজন মারা গেছেন।
৮ বিভাগে আড়াইশ মিলিমিটার বৃষ্টি
শুক্রবার ঢাকায় মৃদু তাপপ্রবাহের পর রাত সাড়ে ৮টা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। এতে নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করেছেন। রংপুরে ৩০, ময়মনসিংহে ২৯, সিলেটে ৫, ঢাকায় ৯, রাজশাহীতে ২, খুলনায় ৮১, বরিশালে ১১ ও চট্টগ্রামে ৪৯ সহ সারা দেশে ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে ৫৪ মিলিমিটার।
অন্যদিকে শুক্রবার ঢাকা, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, বান্দরবান, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও ঝিনাইদহে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। আজও তা অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নদনদীতে পানিপ্রবাহ বাড়ার আভাস
এ দিকে শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাসে বলেন, ‘আগামী ৫ দিন যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় পানিপ্রবাহ বাড়বে। তা ছাড়া আগামী ৩ দিন সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় পানিপ্রবাহ বাড়বে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। শুক্রবার রাজশাহীতে ৯০ ও ফরিপুরে ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের সিকিমে ৫৫ ও অরুণাচলে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।’
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জুন মাস থেকে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঐতিহাসিকতায় তা ১৬ মে থেকে ধরা হয়। এর আগে ১৬ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের জন্য বিশেষ বুলেটিন ধরা হয়।’ তিনি বলেন, আমাদের ১১৬টি পানি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৮টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ও ৩৪টিতে কমেছে এবং ৮টিতে অপরিবর্তিত রয়েছে।