× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন সংশোধনের অনুমোদন

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ২২:০৩ পিএম

আপডেট : ০৬ মে ২০২৫ ২৩:৪৮ পিএম

উপদেষ্টা পরিষদ। ফাইল ছবি।

উপদেষ্টা পরিষদ। ফাইল ছবি।

জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, এ আইনের গেজেট প্রকাশের পর তারা তা করতে পারবে। ইসির সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের ৮ এর ৩ ধারায় মুদ্রণজনিত ভুল ছিল। উপদেষ্টা পরিষদ সেটা সংশোধন করেছে। 

৮ এর (৩) কমিশন, উপ-ধারা (১) বলা ছিল। এখানে উপধারা (২) হবে। ফলে সংশোধীত অধ্যাদেশে রয়েছে ৮ এর (৩) কমিশন, উপ-ধারা (২) এর অধীন উল্লিখিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকাসমূহের আয়তন, অবস্থান, ইত্যাদি হুবহু ঠিক রাখিয়া কেবল প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ, যদি থাকে, অন্তর্ভুক্ত করিয়া আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকাসমূহের তালিকা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, চলতি মাসেই সংসদীয় আসনগুলো সীমানা নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিভিন্ন ও দল ব্যক্তির কাছ থেকে চার শতাধিক আবেদন এসেছে। সেই আবেদনগুলোর ভিত্তিতেই আমরা সীমানা নির্ধারণ করবো। এক্ষেত্রে আমরা নিজে থেকে কোনো সীমানায় হাত দেবো না। আমরা কেবল আদম শুমারির রিপোর্ট প্রকাশের পর ও সংসদ নির্বাচনের আগে নিজে থেকে করতে পারি। যেহেতু এই আইনের বলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয়েছে। তাই এটা করতে গেলে আবার পরবর্তী আদম শুমারির রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর সেই অপেক্ষা যাতে না করতে হয়, সেজন্যই আমরাই আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলাম। এখন কতটুকু সরকার থেকে রেখেছে সেটা গেজেট হয়ে আসলে বলা যাবে। ইসির সচিব বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন সেই কমিটির ভিত্তিতে করবো, নাকি নথির মাধ্যমে করবো সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে। 

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ইচ্ছামত নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ আছে। সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত যে আইন আছে, সেখানে একটা জটিলতার কারণে নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারছিল না। কমিশনের অনুরোধে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সংশোধনী করে দিয়েছি। এখন সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেটা তারা ইচ্ছা করলে দুই চার দিনের মধ্যে এই অধ্যাদেশ গেজেট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা শুরু করতে পারবে। 

সাইবার সিকিউরিটি আগের আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল::

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি আগের আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল করে আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন কার্যকর হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই ৯টি ধারা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আগের সাইবার সিকিউরিটি আইনে যেসব মামলা হয়েছে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর। কেউ মিথ্যা মামলা করলে এবং তা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলেও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

আসিফ নজরুল জানান, এছাড়া আইনের কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে কঠোরভাবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বুঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যদি কোনও সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দুটি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন এই মামলায় কোনও সারবক্তা বা যৌক্তিকতা নাই, তাহলে প্রি ট্রায়াল স্টেজে তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনও ভিত্তি নাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।

আসিফ নজরুল বলেন, বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দণ্ড দেওয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধানে অনেক হয়রানিমূলক মামলা হতো। মানহানিকর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। 

উপদেষ্টা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক মামলাগুলোকে দ্রুত আমলে নেয়ার ব্যাপারে নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে সাইবার সিকিউরিটি আইনে। তিনি বলেন, তিনটা আইনের অনুমোদন হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। সীমানা পুন:নির্ধারণ আইনের খসড়া অনুমোদন। সিভিল প্রসিডিউর কোর্ট-সিপিসি আইনের অনুমোদন। এর ফলে সিভিল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। 

আইন উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো ধরনের বড় সংস্কার রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া হবে না। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে অনেকে বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন। ভিন্নমতের প্রকাশ শালীনভাবে হওয়া প্রয়োজন। নারী সংস্কার কমিশন শুধুমাত্র তাদের সুপারিশ দিয়েছে।

দ্রুত নিস্পত্তি হবে দেওয়ানী মামলা: 

সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, সিভিল প্রসিডিউর অ্যাক্ট বা দেওয়ানি কার্যবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে জমি-জমা বা সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে বছরের পর বছর আদালত চত্বরে কাটাতে হবে না। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে। তিনি বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা আইন। কারণ, সিভিল প্রসিডিউর অ্যাক্টের মামলা (দেওয়ানি মামলা) নিষ্পত্তি করতে বছরের পর বছর লেগে যেত। আমরা অনেকগুলো পরিবর্তন এনেছি। আগে যখন তখন বা ইচ্ছেমতো মামলার শুনানি মুলতবি করা যেত। এখন সেটা করা যাবে না। সর্বোচ্চ চারবার পর্যন্ত করা যাবে। আগে আরজি যেটা বা রিটেন স্টেটমেন্ট দেওয়া হতো, যেটা আইনজীবীরা বলতেন আর আদালত শুনতেন। এমনও হতো ওই আরজি বা রিটেন স্টেটমেন্ট মৌখিকভাবে শুনতে-শুনতেই দুই থেকে তিন বছর কেটে যাওয়ার নজির আছে। আমরা বলেছি লিখিত আকারে যেটা দেওয়া হবে সেটা আর মৌখিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে না। সমন জারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহজসাধ্য পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। আশা করি সিভিল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে এই আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এখন সমন জারির পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল, মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানো যাবে।

তরুণদের প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে সরকার:

সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে এআইসহ (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেবে অন্তর্বর্তী সরকার। তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আগামী জুন-জুলাই থেকে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হতে পারে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা