প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৫২ পিএম
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের অনুরোধে ‘মানবিক করিডোর দিতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে’- পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের সমালোচনা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তা ছাড়া সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শর্তগুলো প্রকাশের দাবিও জানানো হয়।
সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সভায় রাত ৮-১০টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে বলা হয়, রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ সুবিধা দেওয়ায় দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। যে শর্তসাপেক্ষে করিডোর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা প্রকাশ করতে হবে।
মঙ্গলবার বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে এসব বিষয় জানা যায়।
বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অংশ নেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, এই সরকার অনির্বাচিত সরকার, তারা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়ে এত বড় চুক্তির করার কে? করিডোর চুক্তি করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই সরকার কোনো রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রের বিষয়ে কথা বলা তো কোনো সরকারের বিরুদ্ধে বলা নয়, এটা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বিষয়। মৌলিকভাবে আমাদের প্রতিশ্রুতি- বাংলাদেশের ভূখণ্ড তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। ৬০টি শর্তসাপেক্ষে করিডোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
বৈঠকে দুজন সদস্য বলেন, যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম থেকে রাখাইন রাজ্যে করিডোর দেওয়া বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছে না। এটার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর ফলে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ রাখাইন রাজ্য নিয়ে আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে থেকেই বিদেশি শক্তির একটা পরিকল্পনা রয়েছে। ওই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার ভাবনা রয়েছে তাদের। একদিকে আমরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ফেরত দেব, অন্যদিকে রাখাইনে করিডোর সুবিধা দেব। এটা তো হতে পারে না। করিডোর ইস্যুতে শিগগিরিই সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি সোমবার নিজের ফেসবুক পোস্টে রাখাইনের মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করার আহ্বান জানান। পোস্টে তিনি লিখেন, রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তা বিষয় জড়িত থাকতে পারে।
এদিকে একই বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ নিজের ফেরিভায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তামূলক নীতি গ্রহণে অবশ্যই ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। তিনি আরও লেখেন, আলোচনা ব্যতীত এ ধরনের সিদ্ধান্তে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ইন্টিগ্রিটি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানাই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাবে।
মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত মানবিক করিডোর এই অঞ্চলে মার্কিন এজেন্ডারই অংশ- এমনটাই মনে করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। দলটি বলেছে, এতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।
গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বাসদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা বলা হয়। মিয়ানমারের জন্য তথাকথিত মানবিক করিডোর দেওয়ার খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।