× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অযত্ন-অবহেলায় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ

ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৫ এএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬ এএম

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর অবহেলা-অযত্নে পড়ে রয়েছে

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর অবহেলা-অযত্নে পড়ে রয়েছে

কুশিয়ারা নদীর বহমান স্রোতধারার এপার মৌলভীবাজার ও ওপার সিলেট। স্বাধীনতাযুদ্ধের উত্তাল তরঙ্গে ভেসেছিল ১৯৭১ সালে এই অঞ্চল। সেই যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এখন অবহেলিত। পড়ে রয়েছে অযত্নে।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে শেরপুরের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন দুই বীর বাঙালি। আর শেষ সপ্তাহের যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন অনেক মুক্তিসেনা।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এপ্রিল মাসের প্রথম ও শেষ সপ্তাহে মৌলভীবাজারের শেরপুরে অবস্থানরত মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর দুই দফা এবং শেরপুরের ঠিক পাশেই কুশিয়ারা নদীর পূর্বপাড়ে সিলেটের সাদিপুরেও হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে শেরপুর এলাকায় মুক্তিকামী শত শত মানুষ সমবেত হন। খবর পেয়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী সেখানে হানা দেয়। বিমান হামলায় শেরপুর ফেরিঘাটের কাছে শহীদ হন প্রবাসী সুনীল ভৌমিক ও স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী মো. আকলু মিয়া। সুনীল ভৌমিক মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রবাস থেকে দেশে এসেছিলেন। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরে অর্থাৎ পশ্চিমপাশে মৌলভীবাজারের শেরপুরে ও পূর্বপাশে সিলেটের সাদিপুরে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সে যুদ্ধে নাম না জানা বেশ কয়েকজন শহীদ হন। পাশাপাশি আহত হন অনেকে। ওই সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর সিআর দত্ত এবং সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর সেক্টরে সৈন্য, অস্ত্র, খাদ্য সরবরাহসহ ভারতের খোয়াই ও কৈলাশহরের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী শেরপুর এলাকা পরিদর্শন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর সঙ্গে শেরপুরের যে স্থানে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সে স্থানে অর্থাৎ তিন জেলার মোহনা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌলভীবাজারের শেরপুরের গোল চত্বরে বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথাকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৪ সালে ‘প্রজন্ম ৭১’ ও ‘স্পন্দন থিয়েটার’ নামের দুটি সংগঠন শেরপুর বাজারের চৌমোহনা চত্বরকে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ঘোষণার দাবি জানায়। সংগঠন দুটির অব্যাহত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু যাদের স্মরণে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে তাদের নাম, পরিচায় এখানে লিপিবদ্ধ বা সংরক্ষণ করা হয়নি। এ ছাড়া নির্মাণের পর এ স্মৃতিস্তম্ভে সংযুক্ত করা হয় অসাধারণ পানির ফোয়ারা। এ ফোয়ারা দিয়ে নানা রঙের পানি ঝরত; যা এ সড়কে চলাচলকারীদের আনন্দে আন্দোলিত করত। সেই মনোমুগ্ধকর পানির ফোয়ারা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায়। নির্মাণের পর থেকে প্রতি বছর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, এপ্রিল মাসের প্রথম ও শেষদিকে এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের আগে স্মৃতিস্তম্ভটি ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হলেও এসব দিবসের পর সারা বছর এটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। কেউ খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিনের অযত্ন আর অবহেলায় স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশের স্টিলের বেষ্টনী ভেঙে গেছে। উঠে গেঠে ফুটপাতের বিভিন্ন স্থানের ব্লকও। সারা বছর বাজারের ময়লা আবর্জনা এনে ফেলা হয় স্মৃতিস্তম্ভের পাশে। এ ছাড়া স্মৃতিস্তম্ভের আশপাশে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জমে ওঠে বখাটেদের আড্ডা।

শেরপুরের বাসিন্দা প্রবীণ ব্যক্তি ইয়াওর মিয়া বলেন, ‘মহান মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শেরপুর গোলচত্বরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর বিশেষ দিবসগুলোকে সামনে রেখে এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। বাকি সময় এটি অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে থাকে। এখানে সন্ধ্যার পর আড্ডা জমায় বখাটেরা। বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় স্মৃতিস্তম্ভের পাশে। এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

প্রবীণ গণমাধ্যমকর্মী ও শ্রীহট্ট সাহিত্য সংসদের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঐতিহাসিক শেরপুর যুদ্ধের কথা তৎকালীন দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিল। এ যুদ্ধের কথা বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার হয়। এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেরপুরের যুদ্ধ অবিস্মরণীয়। যেখানে ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ সংগঠিত হয় সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ২০০৪ সালে দাবি জানায় প্রজন্ম ৭১ ও স্পন্দন থিয়েটার নামের দুটি সংগঠন। এরপর জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০০৬ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এটি এখন অযত্ন ও অবহেলায় ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যাগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা