ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৫৬ এএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর সরকারি পর্যায়ের পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ (এফওসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠককে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অন্যতম ধাপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলছেন, যেহেতু দুদেশের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে। কথাবার্তা শুরু হয়েছে, এতে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে। তাতে করে অনেক অমীমাংসিত ইস্যু সমাধান হবে। এই বৈঠক উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন মোড় হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা- বৈঠকে বিশেষ করে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়া ও দেশটির কাছে পাওনা ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়া প্রধান দাবি হলেও পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে প্রচুর আমদানি করলেও তারা আমাদের দেশ থেকে আমদানি কম করছে। সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানির দ্বার পাকিস্তানকেই খুলে দিতে হবে।
অর্থ ফেরত দেওয়ার স্বীকারোক্তি আগে দরকার
পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব অর্থ ১৯৭০ সালে ভোলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান এসেছিল। তা ছাড়া পাকিস্তানে সরকারি চাকরি করা বাঙালিদের বেতন, পেনশন ও বিভিন্ন বন্ডের টাকা রয়েছে। এসব টাকা ফেরত দেবে এই স্বীকারোক্তি দেশটিকে আগে দিতে হবে।
পাকিস্তানের কাছে স্বাধীনতার আগের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে বাংলাদেশের, এসব পাওনা সহজে কীভাবে আদায় করা সম্ভব এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাকিস্তানের কাছে পাওনা টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার দাবি আমরা অনেক বছর যাবৎ করে আসছি। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে অর্থ এসেছিল তা খরচ করা হয়নি। অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি চাকরি করেছে তাদের বেতন, পেনশনসহ অন্যান্য টাকাও সেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব টাকার একটি হিসাব স্বাধীনতার পর করা হয়েছিল। সেগুলোর বর্তমান মূল্য যা দাঁড়িয়েছে, সেটি হচ্ছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, এর আগেও আমরা পাকিস্তানকে বলেছিলাম সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যে কয়েকটি পূর্বশর্ত রয়েছে তার মধ্যে পাওনা অর্থ ফেরত দেওয়া অন্যতম। এটি আমাদের দেশের জনগণের পাওনা। এসব ফেরত দিতেই হবে। এখন যেহেতু পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হচ্ছে, বাংলাদেশও তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। তারা সরাসরি জাহাজে পণ্য সরবরাহ করার আলাপ হচ্ছে। এসবের ইতিবাচক পরিবেশ-প্রতিবেশ তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় এ দাবি আমরা করতেই পারি। সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো, পরবর্তীতে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে সফরে আসবেন। তখন আরও বিস্তারিতভাবে তুলতে হবে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান দু’দেশের মধ্যে বড় ধরনের বাণিজ্যঘাটতি আছে। তারা আমাদের দেশে অনেক কিছু রপ্তানি করে। তাদেরকে এখন যেসব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আরও বেশি পরিমাণে অনেক কিছু রপ্তানি করতে পারবে। এসব বিচার বিশ্লেষণ করে পাওনা ফেরত দেওয়ার যে দায় আছে সেটি তাদের পূরণ করতে হবে।
আগে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আগে তাদের দায়বদ্ধতা থেকে স্বীকারোক্তি দিতে হবে তারা পাওনা অর্থ ফেরত দেবে। তারপর কোন ভাবে দিবে সেটি নিয়ে কথা হবে। তবে এখন পাকিস্তানের অর্থনীতির যে অবস্থা এটা কী একবারে ফেরত দেবে না কয়েক কিস্তিতে দেবে সেটা আলোচনা করে ঠিক হবে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারা যে অর্থ ফেরত দেবে সেই স্বীকারোক্তি নেওয়া।
তিনি বলেন, এসব পাওনা ফেরতের বিষয়টি সরাসরি অর্থে হতে পারে। তা ছাড়া পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ সরকারিভাবে যেসব পণ্য আমদানি করে তা দিয়েও পরিশোধ হতে পারে।
বিশ্বে এ ধরনের ফেরত দেওয়ার প্রচলন কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অর্থ ফেরতের ব্যাপারে নীতিগত কিছু বিষয় আছে। আফ্রিকার অনেক দেশকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ শোষণ করেছে। অতীতে শোষণের অর্থ তারা পুরোপুরি বা আংশিক ফেরত চেয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া।
ঔপনিবেশিক শাসকরা যখন প্রাকৃতিকসহ বিভিন্ন সম্পদ নিয়ে গেছে তখন এসব ফেরত দেওয়ার দাবি কিন্তু উঠেছে। এটা খুব সরল কিছু না। পদ্ধতি খুবই জটিল। তবে বাংলাদেশের উচিত হবে অবশ্যই পাওনা আদায় করা। সারা পৃথিবীতেই এমন দাবি উঠছে।
সম্পদের ভাগাভাগির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সম্পদের ভাগাভাগি ও একটি বড় বিষয়, যদিও আর্থিক হিসাবের দিক থেকে ঢাকার দাবির চেয়ে এটা যথেষ্ট নয়। এই সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক আরও দ্রুতগতিতে বিকশিত হতে পারে। তিনি বলেন, এটিও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে দুটি সংশ্লিষ্ট দেশের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেবল দুই দেশের জনগণ এবং অর্থনীতির স্বার্থে হওয়া উচিত এবং ‘আমাদের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের স্বার্থ।’
তিনি বলেছেন, পারস্পরিকভাবে উপকারী অর্থনৈতিক সম্পর্ক কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। যদিও ঘটনাক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে পাকিস্তানের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ জানান, এটি মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে, তারা বাংলাদেশি পণ্যের জন্য তাদের বাজার কতটুকু উন্মুক্ত করবে। কারণ, কেবল ভালো রাজনৈতিক ইঙ্গিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারে না।
পাকিস্তান কী আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইবে
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তাদের সেই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি করে আসছে। দেশটি এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়নি।
আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া সম্পর্কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ইতিবাচক হওয়াটাই ভালো দিক। যেকোনো রাষ্ট্র যদি তার ভুল বুঝতে পারে যে আমি অপরাধ করেছি, সেটি খুব বড় বিষয়। এটি ব্যক্তি পর্যায়ে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিরা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারছে না। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। এসব লোকের পাকিস্তানে নিয়ে পুনর্বাসন করা উচিত। তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, বাংলাদেশ যে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করে তাহলে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হবে। এটি দুই পক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ, এ প্রসঙ্গে সাবেক কূটনৈতিক রাশেদ চৌধুরী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, যদি ইমরান খানের সরকার বা গণতান্ত্রিক সরকার থাকত তাহলে একটি কথা। পাকিস্তানে বর্তমান যে সরকার আছে তা সিভিলিয়ান হলেও তারা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। সেই সেনাবাহিনী গণহত্যার কথা স্বীকার করবে বলে আমি মনে করি না। তবে আমরা নিজেদের দাবি অব্যাহত রাখব যতক্ষণ না পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার আসে। আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ৫০ বছর আগের বিষয়। এই সময়ের মধ্যে অনেকেই বড় হয়ে গেছে। অনেকেই পড়ালেখা শিখে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন এটি কতটা সফল হবে বলা মুশকিল।
বেসরকারি বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পরিচালনাকারী এম হুমায়ুন কবির বলেছেন, যেহেতু আলোচনায় পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং যদি ক্ষমা চাওয়াতে একটি পুরোনো ক্ষত দূর করতে পারে, তাহলে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ইসলামাবাদের তাতে কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়। তিনি বলেছেন, ‘এটা করার জন্য এখনই তাদের উপযুক্ত সময়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যদিও ফ্রান্স এবং জাপানের মতো অনেক দেশ অন্যান্য দেশে তাদের নৃশংসতার জন্য ক্ষমা চেয়েছে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।
অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে রাজনৈতিকভাবে
এদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ে এর পরবর্তী অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে কূটনীতিকরা আলোকপাত করেছেন। এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেন, বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব এফওসি’তে তার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি বলেছেন, এফওসি’তে যখন উত্থাপিত বিষয়গুলোর কিছু ফলাফল আসতে পারে এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেছেন, দৃশ্যত পাকিস্তান এফওসি আয়োজন করতে আগ্রহী ছিল, যা ১৫ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এতে ৫৪ বছর আগে উদ্ভূত সমস্যাগুলো উত্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, এফওসি পর্যায়ে আলোচনার ফলোআপ রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় দিকনির্দেশনা পেতে পারে। যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন।
বাংলাদেশের ৩ দাবি নেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৫ বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠকটি ঢাকায় সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেখানে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি দাবির কথা উল্লেখ করা হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় দেশই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেছে। পাশাপাশি দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দায় সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ওইসব যোগাযোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্তকরণ, নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাকিস্তান তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির প্রস্তাবে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
সংযোগকে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ওই বৈঠকে দুই পক্ষ করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি নৌযান চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানায়। দুই পক্ষ সরাসরি আবার আকাশপথে যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে। ভ্রমণ ও ভিসা সহজীকরণে অগ্রগতির প্রতিও উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সম্প্রতি ঢাকায় প্রখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে পাকিস্তান। ক্রীড়া, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিতে বড় পরিসরে সহায়তায় বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তারা আরও বলেছে, বৈঠকে উভয় দেশ সার্কের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে মত দিয়েছে। এ সময় কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও সেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো হয়েছে।