× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্লেষকদের অভিমত

ইউনূস-মোদির বৈঠক উষ্ণতা বাড়াবে দুই দেশের সম্পর্কে

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩৫ এএম

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০২ এএম

ইউনূস-মোদির বৈঠক উষ্ণতা বাড়াবে দুই দেশের সম্পর্কে

অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ব্যাংককে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটিকে দুদেশের সম্পর্কে ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থমকে গিয়েছিল সম্পর্কের গতি। তারপর থেকে দুদেশের মধ্যকার টানাপড়েন কূটনৈতিক পরিসর ছাপিয়ে রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এমনকি অনেক সাধারণ মানুষের বয়ানেও ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে দুই নেতার গত শুক্রবারের বৈঠকটি নতুন উষ্ণতা ছড়াবে দুদেশের সম্পর্কে। এমনটাই মনে করেছেন বিশ্লেষকরা।

গত ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হলো ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)’ সম্মেলন। বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার- বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ৭টি দেশ এতে অংশ নেয়। সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৩ থেকে ৪ এপ্রিল দেশটিতে অবস্থান করেন। তিনি ভারত, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ ৫টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেন। বক্তব্য রেখেছেন বিমসটেকের সম্মেলন, ব্যবসায়ী ও তরুণদের দুটি সমাবেশেও।

সম্মেলনে আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে আগামীতে সংগঠনটিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের সাফল্য ও অর্জন নিয়ে দেশের কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। এই সম্মেলনটিকে অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের জন্য ভালো একটি সুযোগ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। কূটনীতিবিদরা সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠককে নতুন করে শুরু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্জন

সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর বিমসটেকের ওপর জোর দিয়েছেন। এ সময় তিনি আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার উপস্থাপন করেছেন। তা ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। 

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার কাছ থেকে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মুক্ত বাজার বা এফটিএ সংক্রান্ত বিমসটেক ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি বাস্তবায়নের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্পর্কিত বিমসটেক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিমসটেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে আরও দৃশ্যমান ও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তা নাহলে এটি এ অঞ্চলের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।

মোদি-ইউনূস বৈঠক আশার সঞ্চার করেছে

সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক। গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে বাংলাদেশ থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতের তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। অপরদিকে ছাত্র-জনতার অভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো জবাব মেলেনি। এদিকে নতুন করে আগুনে ঘি ঢালে সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভারতের সেভেন সিস্টারকে স্থলবেষ্টিত অঞ্চল ও বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের সমুদ্রের অভিভাবক বলে মন্তব্যকে ঘিরে। এ নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তাতে উভয় দেশের মধ্যে নতুন করে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম হয়। এরই মধ্যে দুদেশের শীর্ষ নেতার বৈঠকটি আশার সঞ্চার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকটির জন্য অপেক্ষা ছিল দীর্ঘদিনের। অবশেষে অল্প সময়ের জন্য হলেও বৈঠকটি হয়েছে, তাতে অন্তত কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে। 

এম এম আকাশ আরও বলেন, বিমসটেকের ৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভারতই সবচেয়ে এগিয়ে। তা ছাড়া থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল এগুলো বাংলাদেশের সমপর্যায়ের। তাই ভারতের গুরুত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি। 

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের নাজুক এই পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার বুঝতে পেরেছে তাকে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমান সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। সে লক্ষ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি নতুন একটি দিক উন্মোচন করেছে। 

থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এম এম আকাশ বলেন, প্রত্যেকটি দেশের আলাদা কিছু সমস্যা থাকে, আবার সমমানের কিছু বিষয়ও থাকে। এই তিনটি দেশে দুর্নীতি সমমানের সমস্যা আর শ্রীলঙ্কা থেকেও বিগত সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। তারা সেসব অর্থ কীভাবে ফিরিয়ে এনেছে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে আসবে। তবে এজন্য শুধু কথা বললে হবে না বরং কাজে পরিণত করতে হবে। 

তিনি বলেন, বিমসটেক মূলত বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে একটি সংগঠন। এক্ষেত্রে এখানকার খনিজ সম্পদ আহরণে অন্যদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে আমাদের পাশেই মিয়ানমার সাগর থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। তাদের গ্যাসফিল্ডের পাশেই আমাদের গ্যাসফিল্ড, অতএব তাদের অভিজ্ঞতাটা আমরা নিতে পারি। তা ছাড়া সাগরে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান করছে। এখানে আমাদের জন্য যা ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি- এসব বিষয়কে ইতিবাচক দিক বলে উল্লেখ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আকাশ-সড়ক ও সমুদ্রপথে যাতায়াত বৃদ্ধির ব্যাপারে যেসব আলাপ-আলোচনা হয়েছে তা আমাদের জন্য ইতিবাচক। এই সম্মেলনের মাধ্যমে ৭টি দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির যে প্রস্তাব এসেছে তা এই মুহূর্তে খুবই দরকার ছিল। তা ছাড়া থাইল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কথা হয়েছে। এসব উদ্যোগ যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব। তিনি বলেন, বিমসটেকের পক্ষ থেকে প্রতি দুই বছর পর পর বিজনেস সামিট হওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন একটি পথ খুলবে। 

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে থাইল্যান্ডের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পর্কে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং থাইল্যান্ডের জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (এনএসিসি) মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। এটি তত বড় বিষয় নয়। কেননা আমাদের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ তো থাইল্যান্ডে যায়নি, গেছে কানাডা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। তাই থাইদের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায় কিন্তু আমাদের মূল আলোচনাটি হতে হবে যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে তাদের সঙ্গে। অবশ্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তারা ইতিবাচক সাড়াও দিচ্ছে। 

‘থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশ অংশ নিতে চায়’- প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য নিয়ে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটি অসাধারণ একটি প্রস্তাব ছিল। আমরা এ সড়কে যুক্ত হতে পারলে পণ্য পরিবহন ব্যয় কমবে। অর্থনীতির আরেকটি পথ খুলবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা দরকার

বাংলাদেশে ২০১৭ সাল থেকে নতুন করে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার লোককে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউ থান শিউ ও প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে সম্মেলনের ফাাঁকে এক আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ছবি ও নাম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্মেলনে এটি বাংলাদেশের জন্য বড় একটি অর্জন বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, মিয়ানমার প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮০ হাজার ও পরবর্তীতে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কথা দিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা করা দরকার। কেননা বর্তমানে রাখাইনে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেখানের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য এখন সেই পরিবেশ সেখানে নেই। কারণ জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের নিল কিন্তু আরাকান আর্মি তাদেরকে জায়গা দিল না তাহলে পরিস্থিতি তো ভিন্ন ধরনের হবে। তাই প্রত্যাবর্তনের আগে রোহিঙ্গা, জান্তা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা হওয়া দরকার। 

তিনি বলেন, বিমসটেকের চেয়ার প্রতি দুবছর পরপর সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বদল হয়। সেই স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশ চেয়ারপারসন হয়েছে, এটি বড় কিছু না। তবে বড় করে যে জিনিসটি দেখতে হবে তা হলো, এটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অর্থনৈতিক দিক উন্মোচন করতে পারব। এই ৭টি দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে হবে। 

ভারত-বাংলাদেশের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে এ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। ভারত এ ব্যাপারে চুপ ছিল। তা ছাড়া উভয় দেশের সীমান্ত হত্যা বন্ধ, সংখ্যালঘুদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পেয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টনসহ অন্যান্য প্রসঙ্গও এসেছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয় বরং দুদেশের মানুষের মধ্যে। এ থেকে আমরা ধরে নিতে পারি, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত মনোযোগী। কেননা ভূ-রাজনৈতিক দিক বড় ফ্যাক্টর। ইচ্ছা করলেই প্রতিবেশীকে পাল্টানো যাবে না কিন্তু সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব। 

শুরুটা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। এখন যেহেতু আলোচনা শুরু হয়েছে এই শুরুই শেষ নয়। এক বৈঠকে সব সমাধান হয়ে যাবে সেই চিন্তাও করা যাবে না। কিন্তু শুরুটা ধরে রেখে এগোতে হবে। 

ভারত-বাংলাদেশের নতুন বোঝাপড়া নিয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ এক নতুন বাস্তবতায় নিজেদের তৈরি করার চেষ্টা করছে। ফলে প্রতিবেশী, বন্ধু, সহযোগী সবার সঙ্গে নতুন করে আন্ডারস্ট্যান্ডিং দাঁড় করানোর ব্যাপারে তারা আন্তরিক। নতুন সম্ভাবনায় সহযোগীদের তারা পাশে পেতে চায়। তিনি বলেন, শীর্ষ পর্যায়ে পারস্পরিক আলোচনা হলে এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। তারপরও একটা সাধারণ জায়গা তৈরি করতে হবে। দুই পক্ষই কিছু কিছু ছাড় দিলে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে পৌঁছানো সম্ভব। 

এদিকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। আমরা আশাবাদী, হাসিনাকে একদিন ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হবে এবং আমরা শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত বিচার দেখতে পাব।

বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারপ্রধানের বৈঠক ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছেন মেক্সিকোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি এটিকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের জন্য একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশ সার্বভৌম ও সাহসী পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে তার ন্যায্য স্থান পুনরুদ্ধার করছেÑ যা প্রত্যক্ষ, কেন্দ্রীভূত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং সূক্ষ্ম। তিনি লেখেন, বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর বোঝাপড়ার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিচ্ছে, এটি উৎসাহব্যঞ্জক। আশা করি ভারত সরকার বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে পারছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা