× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যানবাহনে নিম্নমানের সিলিন্ডার বাড়াচ্ছে বিস্ফোরণের ঝুঁকি

সুজন কৈরী

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৪ এএম

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৬ এএম

যানবাহনে নিম্নমানের সিলিন্ডার বাড়াচ্ছে বিস্ফোরণের ঝুঁকি

মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার ও সচেতনতার অভাবে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্বল তদারকি ও অব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার। নিম্নমানের সিলিন্ডার বাড়াচ্ছে বিস্ফোরণের ঝুঁকি। ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জামের ব্যবহারে গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে কখনও কখনও ঘটাচ্ছে প্রাণহানিও। প্রতি পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট না করাসহ নানা কারণে বিপজ্জনক বোমায় পরিণত হচ্ছে সিলিন্ডারগুলো। যানবাহনে বৈধ বা অবৈধভাবে সংযোজিত সিএনজি সিলিন্ডার জানমালের জন্যও বড় হুমকি। অথচ সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার সচরাচর বিস্ফোরিত না হলেও এতে ব্যবহৃত ত্রুটিপূর্ণ বা নিম্নমানের সরঞ্জামের কারণে তা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ তাদের। 

এদিকে ব্যাপক চাহিদার কারণে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অননুমোদিত সিএনজি কনভারসন প্রতিষ্ঠান। সেখানে অদক্ষ কারিগর দিয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, যা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের কম পুরুত্বের সিলিন্ডার। দীর্ঘদিন ব্যবহারে সিলিন্ডারের ভেতরে ক্ষয় হয়ে যেগুলো হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ। 

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরের গ্রিন লিফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রিফিলের সময় আল মদিনা বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় দুজন নিহত হন। আহত হন তিনজন। এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার। বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দুর্ঘটনার শিকার বাস দুটির সিলিন্ডারে জোড়া দেওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। গ্যাসের জন্য তৈরি সিলিন্ডারে এমন জোড়া থাকে না। এসব সিলিন্ডার যানবাহনে ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।’ নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার করায় বাসমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা।

এর আগে, গত ১৪ অক্টোবর একই স্টেশনে গ্যাস রিফিলের সময় আরেকটি বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরও ১০ জন। 

সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ ১০ থেকে ২০ বছর হয়ে থাকে। এই সময়ের পর সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার তাজা বোমার মতো কাজ করে।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার সাহা জানান, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা সিলিন্ডারগুলো উচ্চ তাপমাত্রা ও হাইড্রোলিক চাপ সহনীয় করে তৈরি। এগুলোতে জোড়া থাকে না। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে দুর্ঘটনার শিকার বাসের সিলিন্ডারে জোড়া দেওয়ার আলামত দেখা গেছে।’ 

পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে বাংলাদেশে যানবাহনে সিএনজি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। যানবাহনে ব্যবহৃত সিলিন্ডারসহ সব ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার অনুমোদন দেয় বিস্ফোরক অধিদপ্তর। পেট্রোল ও ডিজেলচালিত ইঞ্জিনগুলোকে সিএনজিতে চালানোর উপযোগী করতে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। গাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের মেয়াদ এবং কার্যক্ষমতা আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে ২০১৬ সালের ২৮ জুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিআরটিএ। এতে বলা হয়, ‘আরপিজিসিএল অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করে তা ব্যবহারের উপযুক্ত কি না, সে বিষয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া আবশ্যক।’

গত ৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী (৫৯) ও তার গাড়িচালক আফজাল আহমেদ (৩৫) দগ্ধ হন। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার ধামরাইয়ে হায়েচ গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ফারুক হোসেন (৫০) নামের চালক নিহত হন। আহত হন একজন সিএনজি চালকও। 

যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. মো. আসাদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত বিস্ফোরিত হয় না। তবে সিলিন্ডার মেয়দোত্তীর্ণ হলে বা জোড়াতালি দেওয়া হলে অথবা এতে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামের (গ্যাস ভালভ, হোসপাইপ, রেগুলেটরসহ নানা ইকুইপমেন্ট) দুর্বলতার কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে। ভালো মানের গ্যাস সিলিন্ডার ও এতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ভালো মানের হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।’ তিনি আরও জানান, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সিলিন্ডার পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সাধারণত গ্যাস ভরা অবস্থায় সিলিন্ডারগুলোয় তিন হাজার পিএসআই চাপ থাকে। আর পরীক্ষা কেন্দ্রে ৪ হাজার ৫০০ পিএসআই চাপ প্রয়োগ করে দেখা হয় সিলিন্ডার তা সহ্য করতে পারে কি না। সেই পরীক্ষায় টিকে গেলে সিলিন্ডারটি আরও পাঁচ বছরের জন্য ছাড়পত্র পায়।’ 

সিলিন্ডারের পরীক্ষার (রিটেস্ট) সনদ দেখে সিএনজিচালিত যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া হয় জানিয়ে বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে দেশে ৫ লাখের বেশি যানবাহন চলাচল করছে। প্রতিনিয়তই এ সংখ্যা বাড়ছে। সিলিন্ডার সাধারণত ভারত বা ইউরোপের দেশ ইতালি থেকে দেশে আনা হয়। দেশে সিলিন্ডার তৈরি করা হয় না। আমদানি করা সিলিন্ডারে ভালো মানের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হলে তা কখনও বিস্ফোরিত হয় না।’

সিলিন্ডার সাধারণত বিস্ফোরণ হয় না জানিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী ফেরদৌসী বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশে সরকারি দুটি ও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা সিএনজি করভারশন করে। বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। যেগুলোকে আবার নিয়মিত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা রোধে সিএনজি রিফুয়েলিং সেন্টারগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে থেকে রিফুয়েলিং করছে কি না তা দেখা হয়। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া দুর্ঘটনা রোধসহ সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে আমরা পত্রপত্রিকায় নিয়মিত গণবিজ্ঞপ্তি দেই।’ 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকি খুবই কম। তবে সিলিন্ডারের গ্যাস লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এ ছাড়া সিলিন্ডারের হোসপাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের দুর্বলতার কারণে লিকেজ থেকেও অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের সামগ্রী ভালো মানের ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহারকারীকেও সচেতন হতে হবে।’ 

অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞরা জানান, সিলিন্ডার ভালো হলেও গ্যাস লিক হতে পারে যদি এর পাইপ, রেগুলেটর নিম্নমানের হয়। দেশের বাজারে ভালো-খারাপ দুই মানের যন্ত্রাংশই আছে। কিন্তু অনেকে না বুঝেই কম দামের মানহীন পণ্য কেনেন। আবার অনেকে অর্থ বাঁচাতে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করেন। আর এসব কারণেই সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার ভয়ংকর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা