ঈদযাত্রা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৮ পিএম
প্রবা ফটো
ঈদের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়ছে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল। সড়কপথে ভিড় থাকলেও অনেকটা নির্বিঘ্নেই ঢাকা ছাড়ছেন নগরবাসী। শেকড়ের টানে সড়কের মতো নদীপথেও যাত্রা করছেন ঘরমুখো মানুষ। রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাটেও ফিরেছে প্রাণ। সারাবছর যাত্রীর খড়া চললেও ঈদ আসার সাথে সাথেই চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানীর প্রধান ও একমাত্র নদী বন্দর। ঘরে ফিরতে লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদযাত্রার শুরুর দিনগুলোতে জৌলুসহীন সদরঘাটের চিত্র দৃশ্যমান হলেও শুক্রবার ছুটির দিনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পুরোনো সেই জৌলুস ফিরিয়ে এনেছে। অফিস-আদালতে ঈদের ছুটি হয়ে যাওয়ায় বাড়ির দিকে ছুটছে মানুষ। এতে ঢল মানুষের ঢল নেমেছে সদরঘাটে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো টার্মিনাল এলাকাজুড়েই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ছিল যাত্রীতে পূর্ণ। প্রতিটি লঞ্চের কেবিনই ছিল পূর্ণ। লঞ্চগুলোর ডেকেও ছিল যাত্রীতে ভরপুর। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ে কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুরো টার্মিনাল এলাকা। নৌপথে ঘরমুখো মানুষের চাপে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তায় ছিল তীব্র যানজট। এজন্য ঘরে ফিরতে আগেভাগেই অনেককে টার্মিনালে এসে টিকিট কেটে লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। মূলত শুক্রবার থেকে সব বেসরকারি অফিসসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ভিড় বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনের শুরুতেই পন্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা গেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই বেড়েছে যাত্রীর চাপ। এতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো টার্মিনাল এলাকা। যাত্রীর ভিড় বেড়ে তৈরি হয় জনসমুদ্র। এদিন সবচেয়ে ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। ভোলা রুটের লঞ্চগুলোতেও যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালে চাঁদপুর রুটে ভিড় বেশি থাকলেও বিকালে বরিশালগামী লঞ্চগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। এদিকে টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও অনেকটা স্বস্তিতেই ঘরে ফিরছেন যাত্রীরা। যাত্রীর চাপ থাকলেও পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায় নির্বিঘ্নেই নৌ পথে ঘরে ফিরেছে ঘরমুখো মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ঈদের সময় সদরঘাট থেকে বরিশালগামী প্রতিটি লঞ্চের একটি অগ্রিম টিকিট পাওয়ার জন্য যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকত। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কেবিনের টিকিট না পেয়ে অনেকের মুখ মলিন হতো। একপ্রকার নিরুপায় হয়ে পরিবার নিয়ে ডেকে বসে যেতেন অনেকে। কেউ কেউ ডেকে জায়গা না পেয়ে লঞ্চের ছাঁদে উঠতেন। আবার কেউ নিজ থেকেই টিকিটের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে চাইতেন। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ হয়ে যাওয়ায় সে চিত্র এখন আর নেই। এখন টিকিটের কোনো বাড়তি চাপ নেই। ঘাটে এলেই টিকিট পাওয়া যায়। এখন খুব বেশি প্রয়োজন হলে যাত্রীরা ফোনে যোগাযোগ করেন। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বেড়েছে টিকিটের চাহিদাও। তবে আগের মতো ভোগান্তি না থাকায় নির্বিঘ্নেই ঘরে ফিরছেন যাত্রীরা।
বরিশালগামী সুন্দরবন-১০ লঞ্চের স্টাফ নাসিম খান বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসায় যাত্রী বেড়েছে। আমরা যাত্রীদের সেবায় প্রস্তুত আছি। টিকিটের কোনো সংকট নেই। আমাদের ফোন দিলেই যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। আবার ঘাটে এসেও টিকিট নিতে পারছেন।
সদরঘাটে আসতেও টিকিট পেতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সামাদ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, সদরঘাটে এসেছি জ্যাম ঠেলে। এছাড়া আর কোনো ভোগান্তি নেই। কেবিন পেতে সমস্যা হয়নি। অভিযান-৫ লঞ্চের একটি সিঙ্গেল কেবিন নিয়েছি। অনেকটা স্বস্তিতেই এবার বাড়ি যাচ্ছি।
এদিকে অলস সময় পার করা শেষে এবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নৌ শ্রমিকরা। তড়িঘড়ি করে মালামাল ওঠানামা করতে দেখা যায় তাদের। যাত্রিদের সেবা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারাও। এ বিষয়ে কবির হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে লঞ্চে কাজ করছি। আমার ভাইও এখানে ছিল কিন্তু করোনার পর বাড়ি চলে গেছে। এখন কাজ একেবারেই কম। ঈদের সময় হওয়ায় এখন একটু ভিড় দেখা যাচ্ছে। তাই চাপ সামলাতে ঘাটে কিছু সিজনাল লোক আনা হয়েছে।
এদিকে লঞ্চ মালিক সমিতির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, আজ যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। আশা করি কাল যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে। আমাদের ঈদের দুই-তিনদিনই কিছু যাত্রী হয়। সারাবছর অনেক কষ্টে আমাদের লঞ্চ চালাতে হয়।
এদিকে যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। নিরাপত্তায় সাদা পোশকের পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশ, আনসার সহ নৌ-পুলিশ। সেনাবাহিনীও টার্মিনাল এলাকার নিরাপত্তায় কাজ কাজ করছে।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরাম উল্লাহ বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। মানুষ যাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে এজন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থা কাজ করছে। সবাই সবার দায়িত্ব পালন করছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, আজ ভিড় বেড়েছে। যাত্রী সেবায় বিশেষ লঞ্চও চলছে। যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছে।