ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১৭:৪৩ পিএম
প্রবা ফটো
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই— প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ইনকিলাব মঞ্চ ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে পৃথক এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একটি নতুন প্লাটফর্ম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক সহ-সমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাবেক সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের এর নেতৃত্বে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ' নামক একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছে সমাবেশ থেকে। এই প্লাটফর্মের ব্যানারে নানা রকম কর্মসূচি পালিত হবে বলে জানান তারা।
ইনকিলাব মঞ্চের মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিন, শ্যাডো, সূর্য সেন হল, ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন, শ্যাডো, হলপাড়া, রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে গিয়ে শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের মিছিলটি হল পাড়া থেকে ভিসি চত্বর হয় রাজুতে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলে নানা স্লোগান দেন। পাশাপাশি ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদেও নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তারা ‘আওয়ামী লীগের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘ইউনূস সাহেবের বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই’, ‘আওয়ামী লীগের বিষদাঁত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শহীদের দিচ্ছে ডাক, আওয়ামী লীগ নিপাত যাক’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে' নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মিছিলে ‘খুনি লীগের পুনর্বাসন, রুখে দাও জনগণ’, ‘জুলাইয়ের বাংলায়, গণহত্যাকারীদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ডও আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলে, ইসরায়েল এবং এশিয়ার ইসরায়েল ভারতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না। আওয়ামী লীগ মানেই খুনি।’
হাদী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দিলে আড়াই থেকে তিন বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। তারপর ভারতের সাহায্যে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নিয়ে নেবে। তারপর দেশে আবার নারকীয় তাণ্ডব চালাবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা নেই’–প্রত্যাহারের দাবিতে এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহিদ আহসান বলেন, ’যারা জুলাই আগস্টের গণহত্যার বিরোধিতা করেনি তারা কখনো ভালো হতে পারে না। ভালো আওয়ামী লীগ বলতে কিছু হয় না।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পরে যে মাইনাস টু ফর্মুলা সে ফর্মুলা হলো সাউথ এশিয়ান মাইনাস টু। এখানে আমাদের ভারত এবং পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে বের হতে হবে। আমাদের নতুন বাংলাদেশের জন্য নতুন ডিপ্লোম্যাটিক জোন নির্ধারণ করতে হবে। নতুন ডিপ্লোম্যাটিক জোনের মাধ্যমে আমার দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। আমরা ভারত পাকিস্তানমুখি রাজনীতির শেষ করে ফেলেছি। আমরা আর ভারত পাকিস্তানমুখি রাজনীতি করতে চাই না। ভারতের প্রেসক্রিপশনে নতুন করে বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে, বাংলাদেশের ভাগ্য কি হবে সেটি আমরা কখনোই মেনে নেব না।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পররাষ্ট্র কাঠামোতে যে পরিবর্তন আশা করেছি তা হয়নি। ৫ আগস্টে রাজপথে যে আওয়ামীলীগের ফয়সালা হয়ে গেছে সে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে এখনো আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। আমাদের যেহেতু রাস্তায় নামতে হয়েছে আমরা বিচার নিশ্চিত করে ছাড়ব। এর আগে রাজপথ ছেড়ে যাব না।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মহির আলম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিনটা মৌলিক দাবি পূরণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সংস্কার, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের বিচার এ তিন লক্ষ্য পূরণের কথা ছিল। সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা এবং কাজ চলমান থাকলেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে রাজপথ ছাড়বে না।
এসময় এবি জুবায়ের বলেন, আজকে ওই আওমীলীগ নিষিদ্ধের জন্য কথা বলতে হচ্ছে যারা ২০০০ মানুষকে হত্যা করেছে ইন্টেরিমের উচিত ছিল গনহত্যার বিচার করা কিন্তু রক্তের উপর দাড়িয়ে তারা তা করতে ব্যার্থ হয়েছে আজকে অনেকে আলাদা করে গুড আওয়ামী লীগ ব্যাড আওয়ামী লীগ বলতে চান আরে যারা এখনো অনলাইনে হুমকি দিয়ে যায় তারা কিসের গুড আর কিসের ব্যাড। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমরা আপনার উপর আস্থা রাখতে চাই, আপনি আওয়ামীলীগ ইস্যুতে গনভোটের আয়োজন করে দেখুন মানুষ কি চায়। মানুষ রায় দিবে তারা চায়না। আপনি আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের ব্যখা দিবেন বলে আশা করছি। এ পর্যায়ে নতুন প্লাটফর্মের দরকার হয়ে পড়েছে এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে আজকে গনহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করন মঞ্চের ঘোষনা করছি আসুন আমরা আবার ঐক্যবদ্ধ হই জুলাইয়ের মতো
প্লাটফর্মের নতুন কর্মসুচি নিয়ে সাবেক সহ সমন্বয়ক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, আমাদের এই প্লাটফর্ম থেকে আগামীকাল (আজ) বিকাল ৫ টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে, গন ইফতার ও অবস্থান কর্মসুচি পালিত হবে। এটা দুঃখজনক যে, যেই প্লাটফর্ম আমাদেরকে জুলাইয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিল সেই রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ১৫-২৫ হাজার আহত রক্তের উপর দাঁড়িয়েও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলো। প্রতিটি মহল্লায়, পাড়ায় স্কুলে কলেজে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আসুন আমরা এক হই।