× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে রেলের টিকিট বাণিজ্য

ফয়সাল আহম্মেদ

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৫ ১০:৪৫ এএম

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ঈদ উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেনের টিকিট বিক্রির অসাধু চক্রের কার্যক্রম বেড়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে এই চক্রটি রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, একই টিকিট একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে এই চক্র। এতে করে ট্রেনযাত্রা অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন।

ফেসবুকে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট বিক্রির পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। জামান মাহমুদ আলিফ (সজীব) নামে একজন ব্যবহারকারী ‘অনলাইন ট্রেন টিকিট (টিকিট বাজার)’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ঈদের আগে ট্রেন টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখের ঢাকা থেকে যেকোনো রুটের এসি, নন-এসি ও কেবিন টিকিটের জন্য যোগাযোগ করুন। ঢাকা, কক্সবাজার, রাজশাহী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নাটোর, সান্তাহার, চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে বনলতা, পদ্মা, সিল্কসিটি, দ্রুতযান, নীলসাগর, পঞ্চগ্রাম ও কুড়িগ্রাম লালমণি ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। শতভাগ নিরাপত্তায় যাত্রীর নিজস্ব আইডি দিয়ে টিকিট কনফার্ম করা হয়।

এই প্রতিবেদক বৃহস্পতিবার জামান মাহমুদের দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার টিকিট কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জামান মাহমুদ জানান, এসি সিঙ্গেল টিকিটের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা এবং এসি সিট টিকিটের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, ঢাকা থেকে রাজশাহী পর্যন্ত এসি সিঙ্গেল টিকিটের দাম ৯৪৯ টাকা এবং এসি সিট টিকিটের দাম ১ হাজার ১৩৯ টাকা। দরকষাকষির একপর্যায়ে তিনি দাম ১০০ টাকা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। যদিও ফেসবুক প্রোফাইলে তার নাম জামান মাহমুদ আলিফ থাকলেও তিনি নিজেকে সিফাত নামে পরিচয় দেন এবং দাবি করেন যে, তিনি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বুকিং সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এই প্রতিবেদক সরাসরি টিকিট নেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি শুক্রবার সকাল ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে আসার কথা বলেন।

অন্যদিকে, হাফিজুর রহমান আকন্দ নামে একজন ব্যবহারকারী ‘ট্রেন টিকিট বায় অ্যান্ড সেলিং’ নামক ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, গতকাল এক প্রতারক তিস্তা ট্রেনের টিকিট দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার টাকা নিয়ে ফেসবুকে তাকে ব্লক করে দিয়েছে। তিনি প্রতারকের বিকাশ নম্বরও শেয়ার করেছেন।

ফেসবুকে টিকিটের বিজ্ঞাপন দেখে অসাধু চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোহরাব হোসেন নামে আরেকজন যাত্রী। দরদাম কষাকষির পর টিকিট মূল্য কিছুটা কম রাখার আশ্বাস দেওয়া হলে সোহরাব তাদের দেওয়া ঠিকানায় যান। সোহরাবের বর্ণনা অনুযায়ী, অসাধু চক্রটি প্রথমে নিজেদের নামে টিকিট কিনে নেয়। পরে ক্রেতার কাছে বিক্রির সময় তাদের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে টিকিটের গায়ে থাকা পূর্বের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর মুছে ফেলে ক্রেতার তথ্য যুক্ত করে দেয়।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত একজন টিকিট কালেক্টর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, টিকিটের সঙ্গে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের মিল আছে কি না, তা প্রাথমিকভাবে চেক করা হয়। যদি টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য না মেলে, তবে সেই যাত্রীকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহদাত হোসেন বলেন, প্রত্যেক ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে টিজি পার্টি (ট্রেন গার্ড) এবং জিআরপির সদস্যরা থাকেন। তারা প্রথম বগি থেকে শেষ বগি পর্যন্ত টহল দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। এবার রেলওয়ে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছে। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’Ñ এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি যাত্রীদের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে টিকিট কিনতে পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ছাড়া অন্য কোনোভাবে বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে টিকিট কিনে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলে যাত্রীদের জরিমানা এবং রেলওয়ে আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ থেকে শুরু করে ট্রেনে ওঠা পর্যন্ত কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান শাহদাত হোসেন। প্রথমত, স্টেশনের প্রবেশ পথে চেকিং করা হয়। এরপর ট্রেনে ওঠার সময় টিকিট ও জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়। এ ছাড়া ট্রেনে ট্রাভেল টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) পজ মেশিনের মাধ্যমে টিকিট স্ক্যান করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টিকিট কালোবাজারি বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পুলিশের একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, এই বিষয়টি আমাদের আওতায় পড়ে না। শুধু ট্রেনের মধ্যে এবং এর আশপাশে সংঘটিত অপরাধের দায়িত্বে আমরা থাকি। এই ধরনের অনলাইন প্রতারণার জন্য সাইবার ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশের সাইবার প্যাট্রলিং অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ ধরনের অনলাইন প্রতারণাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। জনগণ যাতে প্রতারণার শিকার না হয় এজন্য সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সর্বোপরি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে টিকিট কেনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন এবং নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা