প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫ ১০:৪৩ এএম
আন্তোনিও গুতেরেস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছেছেন। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বিকাল ৪টা ২৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তাকে স্বাগত জানান। গুতেরেসকে ফুলের তোড়া উপহার দেয় দুটি শিশু।
এই সফরের অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠকের পর গুতেরেস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন।
মহাসচিবের চার দিনের এই সফরে আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যকার সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।
জাতিসংঘ প্রধানের এই সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম সকালে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব তার রমজান মাসের সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন।’
এই সফরে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সহযোগিতা, সেই সঙ্গে অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল বিমানবন্দর থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যান। মূলত আজ থেকে শুরু হবে তার ব্যস্ত সূচি। শুক্রবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সকাল ৯টায় হোটেলে গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠক শেষে তারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখান থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাবেন তারা।
রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করবেন। শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা ও পবিত্র রমজানের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে তারা ইফতারে যোগ দেবেন। রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরসূচি উল্লেখ করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক তাদের স্বাগত জানাবেন।
এরপর জাতিসংঘ মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে পৌঁছবেন। পরিদর্শনের সময় একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আশ্রয় শিবিরের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন। পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ মহাসচিব বালুখালী আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, তরুণ ও নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
জাতিসংঘপ্রধানের সফরকে সামনে রেখে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্ধিত ২০ নম্বর এলাকার মাঠে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বসার জায়গা। মাঠের পুরোটাই ত্রিপল বিছানো হয়েছে। এই মাঠেই লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা। মাঠটির পাশেই আরেকটি অংশে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। আর এই পুরো এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার আশ্রয় শিবিরে আগমনকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গারা। উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জোহার বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান ড. ইউনূস সাহেব আমাদের দেখতে আসবেন এটা শুনে খুবই খুশি লাগছে। জাতিসংঘের প্রধান গুতেরেসও আসবেন সেটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এ কারণে আমরা সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। এবং অপেক্ষা করছি কখন তারা আসবেন।’ একই ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক আব্দু হামিদ বলেন, ‘আমি প্রথম ড. ইউনূসককে দেখতে পাব। আমার খুব ইচ্ছা আমাদের দুঃখদুর্দশার কথা, ক্যাম্পে আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা তাকে জানাব। তাদের আগমন আমাদের কতটা খুশি করেছে সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফিরে আসবেন গুতেরেস। শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের ভবন পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘের পতাকা উত্তোলন করবেন। বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী পর্যবেক্ষণ করবেন এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে একটি সভায় যোগ দেবেন।
বিকালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি তরুণদের সঙ্গে একটি সংলাপে অংশ নেবেন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর গুতেরেস হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে একটি যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভাষণ দেবেন। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন। রবিবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস। সাত বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে এটি তার দ্বিতীয় সফর।