ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫ ১০:৪২ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫ ১০:৪২ এএম
ফাইল ফটো
খুলনার দাকোপ উপজেলার কৃষক মনস কান্তি রায়। জীবনসায়াহ্নে এসে দাঁড়িয়েছেন। তার পিতৃপুরুষ ছিল কৃষক। নিজের জমিতে ধান, মরিচ, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ করতেন। জমিতে সেচের জন্য ব্যবহার করতেন পশুর নদের পানি। কিন্তু এখন সেই নদের পানি লবণাক্ত। নদের পাড়ের জমিগুলো লবণের খনিতে পরিণত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লবণাক্ততার কারণে এসব জমিতে বছরে মাত্র একবার ধান (আমন) চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ হলেও বাকি সময় পতিত থাকে। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে গত ৪ দশকে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর। জমিতে ফসলের উৎপাদন কম হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার বেশি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা খাদ্যনিরাপত্তা ও আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে বলে সতর্ক করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে মাটিতে অণুজীবের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের সহজলভ্যতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে মাটিতে কপার ও জিংকের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
বর্ষায় লবণাক্ততা কিছুটা কমলেও বছরের বাকি সময় জমিগুলো প্রায় পতিত থাকে। এ সময় শুধু কিছু শাকসবজি ও ডালজাতীয় ফসলের চাষ সম্ভব হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ ও মাটির স্বাস্থ্য উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতি আরও সংকটের মুখে পড়বে।
কী বলছেন কৃষকরা
সম্প্রতি খুলনা অঞ্চল ঘুরে কথা হয় মনস কান্তি রায়, সজীব মৃধা, রফিকুল ইসলাম মৃধা, এনকে কুণ্ডুসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে মনস কান্তি রায় বলেন, ‘এখন আর নদীর পানি দিয়ে সেচ দেওয়া যায় না। পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই আমরা মিনি পুকুর পদ্ধতিতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে চাষ করছি। বর্ষা মৌসুমে স্লুইসগেট দিয়ে খালে যে পানি ঢুকানো হয়, তা দিয়েও আবাদ করি।’ তিনি জানান, তাদের জমিগুলো শুকনো মৌসুমে (নভেম্বর-এপ্রিল) লবণাক্ততা বেড়ে যায়। খোলা জমিতে এপ্রিল বা মে মাসে মাটির দলা টাটকা লবণের মতো হয়ে যায়। এসব জমিতে লবণাক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তা দেখে বোঝা যায় এটা খাবার উপযোগী।
শুধু মনস কান্তি নয়; সজীব মৃধা, সমীরণ বিশ্বাসসহ অন্যান্য কৃষকও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে। নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। মাটিতে লবণাক্ততা, মাটির নিচের পানিতেও লবণ। আমরা যেন লবণের খনিতে বাস করছি।
কৃষকদের কথার উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, গত ৪ দশকে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীসহ সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ২৬.৭ শতাংশ বেড়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) সর্বশেষ (২০০৯ সাল) জরিপ অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর। ২০০০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার ৭৫০ হেক্টর এবং ২০০৯ সালে আরও বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২৬০ হেক্টর। অর্থাৎ ৪ দশকে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৮১০ হেক্টর। ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার বেশি।
নদীর পানিতে লবণাক্ততা কতটা বেড়েছে
সেচের জন্য নদীর পানিতে শূন্য দশমিক ৭ ডিএস পার মিটার এবং মাটিতে ২ ডিএস পার মিটারের নিচে লবণাক্ততা থাকতে হয়। তবে এসআরডিআইয়ের গবেষণায় বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর পানিতে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ ডিএস পার মিটার এবং মাটিতে ২৫ ডিএস পার মিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ১০ বা ১২ ডিএস পার মিটার অতিক্রম করলে চাষাবাদ করা যায় না।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিএম মোস্তাফিজুর রহমান বিগত বছরগুলোতে নদীর পানিতে কতটা লবণাক্ততা বেড়েছে; সে সম্পর্কে জানান, ২০০৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে পশুর নদের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ১৮.৫ ও ২৭.১ ডিএস পার মিটার। ২০২৪ সালের এ দুই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৩ ও ৩০ ডিএস পার মিটার। ২০২৩ সালের মে মাসে এটি ছিল ৩৭ ডিএস পার মিটার। রূপসা নদীর খুলনা ফেরিঘাটে ২০২৪ সালের এপ্রিলে লবণাক্ততা ছিল ২৩.৭ ডিএস পার মিটার, যা সেচের জন্য অনুপযোগী।
এ পানি সেচের উপযোগী নয়। তা ছাড়া শৈলমারির বটিয়াঘাটায় লবণাক্ততা ছিল ২৬ দশমিক ৪, ভদ্রার ডুমুরিয়ায় ৫.৭, শিবসার পাইকগাছায় ৩৫.৯, কাজিবাছার বটিয়াঘাটায় ২৬.২, পশুরের মোংলা খেয়াঘাটে ৩৩.৩, দড়াটানা বাগেরহাট ফেরিঘাটে ২২.৮, পানগুছির মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাটে ৬.১, কয়রার চাঁদআলী ব্রিজে ৪২.৯, রামপালের বাঁশতলীতে ছিল ২২ ডিএস পার মিটার। এখন ১১টি পয়েন্টের মধ্যে শুধু মধুমতী নদীর মোল্লাহাট ঘাটে লবণাক্ততা ছিল শূন্য দশমিক ৯৯ ডিএস পার মিটার। ১০টি পয়েন্টেই পানি সেচের অনুপযোগী।
তিনি জানান, গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে রূপসার খুলনা ফেরিঘাটে লবণাক্ততা ছিল শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ ডিএস পার মিটার, যা ছিল লবণাক্তা ও সেচের দিক থেকে নিরাপদ। তা ছাড়া শৈলমারির বটিয়াঘাটায় লবণাক্তা ছিল শূন্য দশমিক ৪৭, ভদ্রার ডুমুরিয়ায় ২.৭০ ক্ষতিকর, শিবসার পাইকগাছায় ৩.৯ অধিক ক্ষতিকর, কয়রার চাঁদআলী ব্রিজে ১২.৫ ডিএস পার মিটার।
মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ
ফসল চাষের জন্য মাটিতে লবণ সহনশীলতার সর্বোচ্চ মাত্রা ৪ থেকে ৮ ডিএস পার মিটার। মাটির লবণাক্ততা ৮ ডিএস পার মিটার ছাড়িয়ে গেলে তা ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর-মে) জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে লবণাক্ততা সবচেয়ে বেশি থাকে। বর্ষাকালে (জুন-আগস্ট) লবণাক্ততা কিছুটা কমে।
স্যালাইনিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার খুলনার প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, খুলনার ডুমুরিয়ায় ২০১৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে জমিতে লবণাক্ততা ছিল ৩.৯ ও ২.১ ডিএস পার মিটার। ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২ ও ৮.৩ ডিএস পার মিটার। অর্থাৎ ১০ বছরে জমিতে লবণাক্ততা বেড়েছে ৪.৩ ও ২.২ ডিএস পার মিটার।
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণ
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী দখল ও দূষণ, নদী ভরাট এবং উজানে বিভিন্ন দেশের অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সমুদ্রের পানি নদীতে প্রবেশ করে লবণাক্ততা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। নদীর পানি লবণাক্ত হওয়ায় সেচের উপযোগিতা হারাচ্ছে। নদীর পানি খাল-বিল দিয়ে চাষাবাদের জমিতে প্রবেশ করে জমিতেও লবণাক্ততা বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানত দুটি কারণে সমুদ্র উপকূলে লবণাক্ততা বাড়ছে। এক. বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পানি জমির দিকে আসছে। দুই. উজানের মিঠাপানির স্রোত লবণাক্ততাকে নিচের দিকে নিয়ে যায়, কিন্তু এর প্রবাহ ঘাটতি হচ্ছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে নদীতে পানিপ্রবাহ কম থাকায় সমুদ্রের পানি ওপরে চলে আসছে। এজন্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে হবে। এটি উন্নত দেশগুলো বলেছে, ২ ডিগ্রি আর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বলছি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বা অনেকটা বেড়ে যাবে। এতে লবণাক্ততা আরও বেড়ে যাবে। জমি চাষের উপযোগী থাকবে না।’
বিশিষ্ট পানি বিজ্ঞানী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর গড়ে ৩ মিলিমিটার করে বাড়ছে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে এই বৃদ্ধির হার আরও বেশি। খুলনায় প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ৩-৪ মিলিমিটার, বাগেরহাট ও বরগুনায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ মিলিমিটার, পটুয়াখালী ও ভোলায় ৬-৭ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রামে ৬-৭ মিলিমিটার। এই উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও বরগুনার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে লবণপানি প্রবেশের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এছাড়া উজান থেকে মিঠাপানির সরবরাহ কম থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। ড. নিশাত বলেন, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য উপকূলীয় বাঁধগুলোর উচ্চতা বাড়ানো জরুরি। বর্তমানে এসব বাঁধের উচ্চতা ১৫ ফুট, যা জোয়ারের পানিকে আটকে রাখতে সক্ষম। তবে ভাঙা বাঁধ দ্রুত মেরামত এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ফসল চাষে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
লবণাক্ত জমিতে ডাল, শিম, ধৈঞ্চা ও ভুট্টাসহ সমজাতীয় ফসল চাষ করতে হবে। সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে, যাতে সেই জমির সঙ্গে খাপ খায়। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের অ্যানালিটিক্যাল সার্ভিসেস উইংয়ের পরিচালক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে জলীয়বাষ্পের কারণে লবণের স্তর ওপরে চলে আসে। এক্ষেত্রে মালচিং পদ্ধতি (পলিমাচ, খড়-কুড়া দিয়ে জমি ঢেকে রাখা) ব্যবহার করা দরকার। দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হলো, যেকোনো পদ্ধতিতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যাতে ওপরে চলে আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা। লবণাক্ত জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ালে লবণাক্ততার পরিমাণ কমবে।’
খুলনা অঞ্চলে লবণাক্ত পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনতে কাজ করছে ‘ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন’ প্রকল্প। প্রকল্পটির পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি বলেন, ‘বোরোপিড বা ক্যানেলের মাধ্যমে চাষাবাদের জন্য ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। খুলনার দাকোপ, কয়রা, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, শ্যামনগরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় এসেছে। ৭০০ মিনি পুকুর খনন করা হয়েছে, যাতে ২ হাজার ৮০০ বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে। আগে যেখানে শুধু আমন চাষ করে ২৫ হাজার টাকা পেতেন কৃষক, সেখানে তরমুজসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে ৮০-৮৫ হাজার টাকা বিক্রি করছেন। এটি স্বল্প পরিসরে গ্রহণ করা হলেও কৃষকরা এসবে খুবই আগ্রহী। এদেরকে ভবিষ্যতে এসব উপকরণ দেওয়া গেলে তারা ব্যবহার করবেন।’
তিনি বলেন, আমরা পলিমাচ পদ্ধতির এক হাজার প্রদর্শনী করেছি। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২২ হাজার কৃষক ২২ হাজার বিঘায় এটি ব্যবহার করছেন। ফেব্রুয়ারি থেকে এসব অঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা ১০ ডিএসের ওপরে চলে যায়। তখন এসব পানি সেচে ব্যবহার করা যায় না। এজন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হয়। ১০ বছর আগেও মাটির নিচের পানি ও নদীর পানি ব্যবহার করা যেত, এখন তা ১৬-২০ ডিএস পার মিটারের বেশি হয়ে যাওয়ায় সেচে দেওয়া যায় না। এ অঞ্চলে ৬৪৬টি খাল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। তখন খালে পানিপ্রবাহ ছিল। খালের গভীরতা ৬ ফুট থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ৩-৪ ফুট। এগুলোর গভীরতা বৃদ্ধি করা গেলে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পরবর্তীতে চাষাবাদ করা যাবে।
লবণাক্ততা বৃদ্ধি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, নদী দূষণ ও দখল রোধ এবং লবণসহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। উপকূলীয় কৃষকদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারলে লবণাক্ততা সত্ত্বেও তারা তাদের জমিকে উৎপাদনশীল রাখতে সক্ষম হবেন।