× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস

পাঁচ মাসে দেশে সাড়ে ৩ হাজার প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত, মৃত্যু ৬৪

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:০২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

দেশে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৩০৪টি বন্য প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ৬৪টির। এ ছাড়া বন্য প্রাণী দ্বারা ৫ জন মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডিসেম্বরে, এই মাসে ১ হাজার ৭১৬টি প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগস্টে, এই মাসে ৪৪টি প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্তের দিক দিয়ে বিভাগভিত্তিক অবস্থানে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তের হার ২৬ শতাংশ। তার পরের স্থানে ঢাকা, ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। সেখানে ২ শতাংশ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

‘নতুন বাংলাদেশের নীরব শিকার : সংকটের মুখে বন্য প্রাণী’ শীর্ষক বেঙ্গল ডিসকভারের গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গত ১ মার্চ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। নিজস্ব জনবল, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, বন বিভাগ ও সামাজিক মাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও যাচাই করে গবেষণাটি করা হয়েছে।

দেশে যখন বন্য প্রাণীর এ অবস্থা, ঠিক সেই মুহূর্তে আজ সোমবার বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস-২৫। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’। দিবসটি উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বন অধিদপ্তর। আজ দুপুর দেড়টায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বন ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টে দেশে ক্ষতিগ্রস্ত বন্য প্রাণীর সংখ্যা ছিল ৪৪টি। তার মধ্যে ১৬টি প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮টির। সেপ্টেম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪৪৩টি; উদ্ধার করা হয়েছে ৩১৩টি, মৃত্যু হয়েছে ১২টি এবং তার মধ্যে মানুষের দ্বারা ৫টি। অক্টোবরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৬০৪টি। উদ্ধার করা হয়েছে ৫৬২টি, এসবের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮টি এবং মানুষের দ্বারা ৩টি। নভেম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯৭টি। তার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৯১টি, মানুষের দ্বারা মৃত্যু হয়েছে ১৪টির। ক্ষতিগ্রস্তের দিক দিয়ে ডিসেম্বরে সব রেকর্ড ভঙ্গ করে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭১৬টিতে। তার মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৭১২টি, মৃত্যু দুটির, সেখানে একটি মানুষের দ্বারা।

প্রতিষ্ঠানটি বন্য প্রাণী ক্ষতিগ্রস্তের কারণ হিসেবে জানিয়েছে, অবৈধ শিকার, বাসস্থান ধ্বংস, খণ্ডিত বনাঞ্চল, মানুষের দ্বারা প্রাণী হত্যা, পোষা প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য, ভুল ধারণা, বিনোদনমূলক শিকার ও প্রকৃতিতে অতিরিক্ত মানবহস্তক্ষেপ। এ অবস্থাকে বেঙ্গল ডিসকভার বাংলাদেশে বন্য প্রাণী অপরাধ ও সংঘর্ষের জন্য উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বন্য প্রাণীদের মধ্যে গড়ে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্তন্যপায়ী প্রাণী, ক্ষতিগ্রস্তের হার ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাখিজাতীয় প্রাণী, ক্ষতিগ্রস্তের হার ২৯ শতাংশ। সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর হার ২৫ ও জলজ প্রাণী ৯ শতাংশ।

গবেষণায় প্রজাতিভিত্তিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্তন্যপায়ী প্রাণীর হার ৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে হাতি ১২.৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম ও শেরপুরে হাতি হত্যার ঘটনা বেশি। চট্টগ্রামের কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে মানব-হাতি সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেপ্টেম্বরে সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু হলে স্থানীয়রা হাতি অপসারণের দাবি জানায়। অন্যদিকে পরিবেশবিদরা হাতির বাসস্থান রক্ষা ও টেকসই সমাধানের কথা বলেন। মুখপোড়া হনুমান সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাতির মধ্যে একটি। এটি মোট প্রজাতির ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত, মেছো বিড়াল ৬.২৫ শতাংশ, বানর ১১ শতাংশ।

পাখির মধ্যে টিয়া পাখির ক্ষতিগ্রস্তের হার সবচেয়ে বেশি। এটি ৩৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ময়না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯.৬ শতাংশ। সরীসৃপ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কচ্ছপ। এটি ৯৪ শতাংশ। তার পরে রয়েছে অজগর ও গুইসাপ। বাসস্থান ধ্বংস ও শিকারের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রাণী।

এসব বন্য প্রাণী রক্ষায় বেঙ্গল ডিসকভারের প্রধান নির্বাহী ও গবেষণা দলের প্রধান আমিনুল ইসলাম মিঠু জানান, বন্য প্রাণী অপরাধ ও সংঘর্ষের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়বে।

এ ব্যাপারে কিছু করণীয়ও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। তাতে বলা হয়েছে, বাসস্থান পুনরুদ্ধার : ধ্বংসপ্রাপ্ত বন্য প্রাণীর বাসস্থান পুনর্গঠন করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে; বৈজ্ঞানিক সচেতনতা : মানব-বন্য প্রাণী সংঘর্ষের কারণ, প্রভাব ও সমাধান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ : স্থানীয় জনগণকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং সংঘর্ষ প্রতিরোধ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; শক্তিশালী আইনপ্রয়োগ : বন্য প্রাণী পাচার ও শিকারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; সংঘর্ষ প্রতিরোধ : মানব-বন্য প্রাণী সংঘর্ষ কমানোর জন্য কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করতে হবে; নিয়মিত পর্যবেক্ষণ : বন্য প্রাণী অপরাধ এবং সংঘর্ষ নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের জন্য দক্ষ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা