× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রমজান মাসে গরম বেশি পড়বে না

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:১১ পিএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। রোজা রাখার ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রভাব পড়ে। এই অবস্থায় আবহাওয়া শীতল থাকলে রোজাদাররা কিছুটা স্বস্তি পান। এ বছর সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত রোজাদারকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করতে হবে। তাই আবহাওয়ার দিকে রোজাদারের আলাদা নজর থাকতেই পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) জানিয়েছে, মার্চ মাসে সার্বিকভাবে আবহাওয়া মোটামুটি সহনীয় থাকবে। এতে রোজাদারের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করবে। 

কেমন থাকবে মার্চের আবহাওয়া 

প্রতি মাসে দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিএমডির পরিচালকের সভাপতিত্বে। মার্চ মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের জন্য গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। 

সভাশেষে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি মার্চ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হবে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। এ মাসের শেষের দিকে পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে ১-২টি মৃদু ও মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকতে পারে। পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, দেশে ২-৩ দিন বজ্র ও শিলাসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি এবং এক দিন তীব্র কালবৈশাখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সাধারণত এপ্রিলে গরম বেশি থাকে। গত বছরের এপ্রিল ছিল বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এ বছর মার্চ মাসে রোজা শুরু হয়েছে। এবার গরমের আঁচ ধীরে ধীরে বাড়বে। এখন দিন বড় হচ্ছে, সেই আলোকে গরমের মাত্রাও বাড়বে। মার্চের প্রথম ৮-১০ দিন বৃষ্টির আভাস নেই। আর যেহেতু বৃষ্টি কম, ফলে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকবে। এ মাসের প্রথম ১৫ দিন গরম সহনীয় হবে। আর এ মাসে সেই অর্থে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তীব্র তাপমাত্রা হওয়ার আশঙ্কাও নেই। ড. মো. বজলুর রশিদ বলেন, তাপমাত্রার সঙ্গে যদি আর্দ্রতা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তা না হলে আবহাওয়া স্বাভাবিকভাবে মানানসই থাকবে। তাই বলা যায়, মার্চে আবহাওয়া সকলের জন্য সহনীয় থাকবে। বেশি গরম পড়বে না, এতে করে মানুষের মধ্যে মোটামুটি স্বস্তি বিরাজ করবে। 

প্রায় একই ধরনের আভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। তিনি বলেন, গত বছর রমজান ছিল এপ্রিলে। তখন গরম ছিল বেশি। এ বছর মার্চে রমজান চলে আসায় গত বছরের মত তত বেশি গরম পড়বে না। কেননা মার্চে হালকা বৃষ্টি হয়, থাকে কালবৈশাখীও। আমাদের দেশে জুন মাসে বেশি গরম থাকে। যেহেতু সেই জুন থেকে মার্চ অনেকটা দূরে, তাই আশা করা হচ্ছে অসহনীয় গরম থাকবে না। 

মার্চে কোথায় কেমন বৃষ্টিপাতের আভাস

মার্চ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় সিলেটে। বিভাগটিতে ৭ দিনে বৃষ্টিপাত হয় ১২০ মিলিমিটার। এ মাসে ৬-৮ দিনে ১১০-১৩০ মিমি বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে। সিলেটের পর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় চট্টগ্রাম বিভাগে। সেখানে ৩ দিনে বৃষ্টি হয় ৬০ মিলিমিটার। এবার ২-৪ দিনে ৫৫-৬৮ মিমি বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে। বিভাগ দুটির পর বেশি বৃষ্টি হয় ঢাকায়, ৪ দিনে ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ দিনে ৪৮ মিমি। চলতি মার্চে ঢাকায় ৩-৫ দিনে ৫০-৬০ ও ময়মনসিংহে ২-৪ দিনে ৪৫-৫০ মিমি বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা বিভাগে স্বাভাবিকভাবে ৩ দিনে ৪৩ মিমি বৃষ্টি হয়ে থাকে। চলতি মাসে ২-৪ দিনে ৩৫-৪৫ মিমি বৃষ্টির আভাস রয়েছে। বরিশালে ৩ দিনে ৩৯ মিমি বৃষ্টি হয়ে থাকে। চলতি মাসে ২-৪ দিনে ৫০-৬০ মিমি বৃষ্টি হতে পারে। রংপুরে ২ দিনে ৩২ মিমি বৃষ্টি হয় থাকে। এবারের মার্চে ১-৩ দিনে ২০-২৫ মিমি বৃষ্টির আভাস রয়েছে। 

কেমন ছিল ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। ৮-৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, মৌলভীবাজার ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পুবালি বায়ুপ্রবাহের সংযোগ ঘটায় ১২-১৩, ১৯-২০, ও ২২-২৩ তারিখে দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাসটিতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ও ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। তা ছাড়া সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি বেশি ছিল। ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি, কক্সবাজারে ২২ তারিখে ও সর্বনিম্ন ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ৮ ও ৯ তারিখে। 

খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

রমজানে স্বাস্থ্যগত খেয়াল রাখা, ইফতারি, সন্ধ্যা রাত ও সেহরি খাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, রোজা রেখে অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করাই ভালো। কোনো কাজ না থাকলে রোদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেসব শ্রমিকের রোদে কাজ করতে হয়, তারা যেন বিশ্রাম নিয়ে কাজ করেন। টানা না করে বিরতি দিয়ে দিয়ে কাজ করবেন। 

খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাইরের আজেবাজে জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। রাস্তাঘাটের ইফতারসামগ্রী টাটকা না ভেজাল তা চিহ্নিত করা কঠিন। এসব খাবার তৈরিতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার সম্পর্কেও বেশি একটা জানা যায় না, এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব এসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। খেলেও কম খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। যারা সুস্থ তারা যেকোনো খাবার খেতে পারে, তবে যতটা সম্ভব ঘরের খাবার খেতে হবে। দেখতে হবে এসব খাবার যেন টাটকা ও বিশুদ্ধ হয়। বাসি খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। 

বাইরের শরবত না খেতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাইরে যেসব শরবত তৈরি হয়, তাতে পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব শরবত না খাওয়ায় ভালো। তা ছাড়া এসব শরবতে নানা ধরনের কেমিক্যালও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব খেলে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যারা শরবত বিক্রি করেন, তাদেরও দায়িত্ববান হওয়া দরকার। কেননা অনেক মানুষ আগ্রহ আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে পান করে, তাই শরবত তৈরিতে যত্নশীল থাকতে হবে। 

প্রবীণ ও রোগীদের খাদ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, যারা বয়স্ক, কিডনি রোগী, লিভারের রোগী তারা যেন চিকিৎসকের নির্দেশনামতে খাবার খায়; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াবেটিস, হার্ট ও প্রেসারের রোগীদের ওষুধটা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। 

কী করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

রোজা উপলক্ষে ইফতারি ও অন্য খাদ্যসামগ্রী কতটা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি এবং বাজারজাত করা হচ্ছে তা নিয়ে তদারকি করছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএসএফএ)। এ ব্যাপারে বিএসএফএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া গতকাল বলেন, সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্যগ্রহণের বিকল্প নেই। রোজায় রাজধানীর ৬টি পয়েন্টে মোবাইল টিমের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। আজ (রবিবার) রোজার প্রথম দিন তিনটি টিম বের হয়েছে। ইফতারসামগ্রী তৈরির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব খাবারে ভেজাল কিছু আছে কি না, কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে কি না ইত্যাদি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া সারা দেশে আমাদের যেসব জেলায় কর্মকর্তারা রয়েছেন, তারাও একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। 

তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীকে সচেতন ও নিরাপদ খাদ্যগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে এসএমএস কার্যক্রম চালাচ্ছি। তা ছাড়া লিফলেট বিতরণ, গণমাধ্যমে সচেতনতা বিষয়ক পরামর্শ প্রচার করছি। আর মাসভিত্তিক যেসব নমুনা সংগ্রহ করা হতো তা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি রমজান সামনে রেখে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে জেলাপর্যায় থেকেও খাদ্যসামগ্রীর নমুনা পরীক্ষারের জন্য পাঠানো হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা