× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সচিব হিসেবে পদোন্নতিতেও এগিয়ে ‘সুবিধাভোগীরা’

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫ ০০:৪২ এএম

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫ ০০:৪৫ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার সাত কমকর্তাকে সম্প্রতি সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও একজন সচিবের দপ্তর বদল এবং ওএসডি হওয়া এক সচিবকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এসব পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী শাসনামলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। 

নতুন পদোন্নতি পাওয়া সাত সচিবের মধ্যে বঞ্চিত কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র তিনজন। বাকি চারজন পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে নিয়মিত পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন হওয়া সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। যদিও হাসিনার শাসনামলে নির্যাতিত ও বঞ্চিত হয়েছেন এমন শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সচিব হওয়ার যোগ্য।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ আলেয়া আক্তার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কামাল উদ্দিন, বিআরটিসির চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. তাজুল ইসলাম, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয়ের নিবন্ধক মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিজ জাহেদা পারভীন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান।

পদোন্নতি পাওয়া এসব কর্মকর্তার কর্মজীবন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নতুন সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন না হওয়ায় দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। প্রশাসন ক্যাডারের বিসিএস ১১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার শাসনামলের ১৫ বছরে কোনো পদোন্নতি পাননি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার তাকে ভূতাপেক্ষ উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে সম্প্রতি তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

পদোন্নতি তালিকার দুই নম্বরে থাকা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মিজ আলেয়া আক্তার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা। একই ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৫ সালে যুগ্ম সচিব এবং ২০১৮ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলেও তিনি কয়েকবার বঞ্চিত হয়ে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়েছেন যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২৪ সালে।

পদোন্নতি তালিকার তিন নম্বরে রয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম। আওয়ামী শাসনামলে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে ২০১০-এ উপসচিব, ২০১৬-এ যুগ্ম সচিব এবং ২০১৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হওয়ায় গ্রেড-১ পদোন্নতিও পান এই কর্মকর্তা। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন তাজুল ইসলাম। ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে সেখানে পাঁচ বছর কাজ করে তিনি রাজনৈতিক বিবেচনায় বিপুলসংখ্যক পদে নিয়োগ দেন। আগামী ২২ মার্চ এই কর্মকর্তা পিআরএল-এ যাবেন। মাত্র এক মাসের নিচে চাকরি থাকার কারণে বর্তমান প্রাকটিস অনুযায়ী তার সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা নয়। তারপরও এই কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

পদোন্নতি তালিকার ৪ নম্বরে রয়েছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। আওয়ামী সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় এই কর্মকর্তা নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে ২০১২ সালে উপসচিব, ২০১৮ সালে যুগ্ম সচিব এবং ২০২২ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় গত বছরের ১১ জানুয়ারি তাকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের নিবন্ধক হিসেবে পদায়ন করা হয়। নামে-বেনামে শত শত ভুয়া কোম্পানি গঠনের জন্যই তাকে ওই পদে পদায়ন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তালিকার ৫ নম্বরে থাকা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ২০১৫ সালে উপসচিব, ২০২০ সালে যুগ্ম সচিব এবং পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান।

পদোন্নতি তালিকায় ৬ নম্বরে থাকা মিজ জাহেদা পারভীন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা চাকরি জীবনে কখনও পদোন্নতি বঞ্চিত হননি। ২০১২ সালে উপসচিব, ২০১৮ সালে যুগ্ম সচিব এবং ২০২২ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরের ১০ বছরই তার পদায়ন ছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। এরপর দুই বছর ছিলেন মন্ত্রপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। তার স্বামীও আওয়ামী লীগের আরেক আস্থাভাজন কর্মকর্তা এএইচএম সফিকুজ্জামান।

২০২২ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘আমি তোমাদেরই লোক’ বই প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বইটি সম্পাদনা করেন এই কর্মকর্তা। সম্পাদনার পাশাপাশি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনীতি ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধও লেখেন এএইচএম সফিকুজ্জামান। এরপরও তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এই জুটির পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনে আলোচনার ঝড় বইছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব হওয়ার পর তারা দলবেঁধে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করেছেন উৎসমুখর পরিবেশে।’ 

তিনি বলেন, ‘শফিকুজ্জামান ইতঃপূর্বে সচিব হওয়ার আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নয় বছর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঁচ বছর একনাগাড়ে চাকরি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যখন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী দিয়ে সারা ঢাকা শহরে ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছিল সেই সময়ে ৩০ জুলাই মিজ জাহেদা পারভীন তার বাসায় স্বামী-স্ত্রী মিলে এবং ব্যাচমেটদের নিয়ে মহা উৎসবে মেতে ছিলেন। ৩০ তারিখের পরদিন থেকে তাদের ফেসবুকে এই ছবি শোভা পাচ্ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সেই ছবি ফেসবুক থেকে উধাও হয়ে যায়। এরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’

পদোন্নতি তালিকায় ৭ নম্বরে থাকা মাহবুবুর রহমান বিসিএস শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে ১৩তম ব্যাচে যোগদান করেন। এরপর ২০১০ সালে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান যথাক্রমে ২০১৭ ও ২০২২ সালে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে কাজ করেছেন তিনি।

একই দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রজ্ঞাপনে ওএসডি হওয়া সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে পুনরায় পদায়ন করা হয়। বদলি করা হয় আরেক সচিবকে।

ওএসডি থেকে পুনরায় পদায়ন হওয়া মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব) এই কর্মকর্তাকে ওএসডি করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে শেখ হাসিনার লুটপাটের ৩০ কোটি টাকার একটি কাজ গোপনে অনুমোদন করায় তাকে ওএসডি করা হয়েছিল বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। 

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা গত ১৫ বছর নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফের শিষ্য হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন ছিলেন ১১ বছর।

একই প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় ২০১৬ সালে এই কর্মকর্তাকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা