প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৫ ২১:১৬ পিএম
নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ থেকে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পদত্যাগ করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদ। এর কারণ হিসেবে তিনিÑসংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র বিরুদ্ধে শিল্পকলার বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক
দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ফোকাল পারসন হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের
বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান, বাজেট কর্তন, শিল্পকলার ভেতর থেকে ফাইল গায়েব
করে দেওয়া, একাডেমির অভ্যন্তরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত
করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কারণে আমি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক
পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’
এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (১ মার্চ) দুপুরে ফেসবুকে নিজের প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সৈয়দ জামিল আহমেদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা
তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘উনার (সৈয়দ জামিল আহমেদ) বলা অনেকগুলো কথা পুরো সত্য
নয়, অনেকগুলো কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারা জনিত হতাশা
থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে।’
নিজেকে সৈয়দ জামিল আহমেদের গুণমুগ্ধ ভক্ত উল্লেখ করে- মোস্তফা সরয়ার
ফারুকী লিখেছেন, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদের কাজের একজন গুণমুগ্ধ আমি। সম্ভবত উনার কাজ নিয়ে
বাংলাদেশে কোনো পত্রিকায় ছাপা হওয়া সবচেয়ে বিস্তারিত লেখাটা আমি লিখেছিলাম যায়যায়দিনের
এন্টারটেইনমেন্ট ম্যাগাজিন মৌচাকে ঢিলের জন্য। এরপরেও বাংলা-ইংরেজি অনেক কাগজে লিখেছি।
এখনো আমি তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের সবচেয়ে মেধাবী নির্দেশক মনে করি। কয় দিন আগেও জামিল
আহমেদের সামনেই একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছি উনাকে দিয়ে তাদের দেশে একটা
থিয়েটার প্রোডাকশন করাতে।’
একজন ভালো শিল্পী আর আমলাতন্ত্রকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চালানো দুই
রকম বিষয়ও উল্লেখ করেছেন দেশের গুণী নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারুকী। তিনি লিখেছেন,
‘কিন্তু ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো, দুইটা
দুই রকম আর্ট। দ্বিতীয় কাজটা করার জন্য লাগে ধৈর্য এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। সহকর্মীদের
বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি
প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা
দেওয়ার ধৈর্য এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে
আমি তা করতে পারি না।’
ফেসবুকে সৈয়দ জামিল আহমেদের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কিছু বলতে চান নাÑ উল্লেখ করে ফেসবুকে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমি জামিল ভাইয়ের নাটকীয় পদত্যাগ নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না। কারণ, তাতে আমাকে এমন কিছু উদাহরণ টানতে হবে, যেটা তার জন্য অস্বস্তিকর হবে। আমি চাচ্ছিলাম না, কারণ আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ফর রেকর্ডস আমাকে আসলে এগুলো বলতেই হবে। আজকে আমাদের অনেকগুলা কাজ আছে। এটা শেষ করে সময় পেলে লিখব।’
ফেসবুক পোস্টের এক পর্যায়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘শুধু এইটুকু আপাতত
বলে রাখি, উনার বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু
কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত
লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়
করিয়েছেন, যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।’
সবশেষে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘পরিশেষে, আমি উনার সর্বাঙ্গীণ
মঙ্গল কামনা করি। উনার সৃজনশীল কাজে যেকোনো ভাবে সহযোগিতা করতে পারলে মন্ত্রণালয় ধন্য
হবে। আর আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরও তার কোনো সাহায্যে আসলে আনন্দিত হবো, যদিও
আমাদের দুইজনের কাজের ক্ষেত্র আলাদা।’