প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:০৫ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৮ এএম
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ড. কামাল হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান সংবিধান বাতিল করা একদমই ভুল হবে। সংবিধান বাতিল নয়, বরং সংস্কার করতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ’৭২-এর সংবিধান ও প্রস্তাবিত সংস্কার শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, বিগত ৫৩ বছর বিচার করলে রাষ্ট্রধর্ম আর ধর্মনিরপেক্ষতা দুটি কথাই সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া উচিত। গণতন্ত্রের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা আসতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা ব্যবহার না করে অন্যভাবে এগোতে পারলে ভালো। সংবিধান পুনর্লিখন কোনো সংস্কার নয়, বরং সংবিধান ধ্বংস করার একটি পথ। আমি মনে করি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, তবে তা হতে হবে বিস্তর আলোচনার মাধ্যমে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এ ছাড়া অনির্বাচিত সরকার সংবিধান সংশোধন করতে পারে না।
তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান সংগ্রাম ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন ও সংশোধনে যেন দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন হয়। নিশ্চিত করতে হবে যেন সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে। সংবিধান পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ যেন কোনো সংকীর্ণ স্বার্থে নেওয়া না হয়। অন্যথায় সংবিধানের যেকোনো পরিবর্তন ও সংশোধন কোনো জাতীয় কল্যাণ বয়ে আনবে না।
ড. কামাল বলেন, পুরো সংবিধান বাদ দেওয়া ভুল হবে। কারণ এতদিন এটার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা হয়েছে, জনগণ এটা মেনে নিয়েছে। সেটা পুরোপুরি ফেলে দিয়ে সংবিধান নতুন করে পুনর্লিখন করা যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য না। এতদিন যে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দেশ পরিচালনা করেছি সেটার প্রতি আরও গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে যেখানে যেখানে বিশেষ কারণে সংস্কার প্রয়োজন আছে, সেটাকে বিবেচনার মধ্যে নিতে পারি, আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছালে সংস্কার করতে পারি। এতদিন যে সংবিধানকে ধরে দেশ ভালো ফসল পেয়েছে, তাকে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। সেই কথা বিবেচনা করে সংস্কার করি।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের ফলে ধীরে ধীরে ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তি বাড়ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি মনে করেন অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ছাড়া দেশে শান্তি ফিরবে না।
সভায় আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, এস এম এ সবুর ও আবু ইয়াহিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা।