× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীরা ভয়ংকর

সাইফ বাবলু

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:২১ এএম

প্রবা গ্রাফিক্স

প্রবা গ্রাফিক্স

পুলিশের পৃথক অভিযানের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের মধ্যেও রাজধানীসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যেই ঘটে চলেছে। পাশাপাশি চলছে টার্গেট কিলিং, দখল আর চাঁদাবাজি।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের তৎপরতা না থাকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পথেঘাটে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড। ছিনতাইয়ের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে চাপাতি বাহিনী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শুধু রাতে নয়, দিনদুপুরে মানুষকে কুপিয়ে জখম করে সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে। 

সম্প্রতি কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমনকি ডাকাতি করতে এসে গুলি ছুড়ে ভুক্তভোগীকে আহত করার ঘটনা সম্প্রতি রাজধানীতে ঘটে গেছে। সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিয়ে অসহায় সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে দেশের নানা স্থানে বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব কর্মসূচি থেকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগেরও জোর দাবি উঠছে। 

এদিকে অপরাধের লাগামহীনতায় গতকাল সোমবার থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন- ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী পেট্রলিং শুরু করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও পৃথক পেট্রলিং চালু করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে করে পুলিশ সদস্যরা টহল জোরদার করেছে গতকাল বিকাল থেকে। 

এর আগে আন্দোলনকারীদের পদত্যাগের দাবির মুখে রোববার গভীর রাতে (রাত ৩টায়) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাদের শাসনকালে পাচার করা বিপুল অর্থ ব্যয় করে দাগী অপরাধীসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে তারা।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাস পার হলেও এখনও দেশে আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, জেল পলাতক দাগী অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে না পারার কারণে অপরাধের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন ঢাকায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন নানা অপরাধে যুক্ত হয়েছে। 

অন্যদিকে ব্যাপক রদবদল, গণ হারে বরখাস্ত ও সংযুক্তির ঘটনায় পুলিশ এখনও পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। রুটিন ওয়ার্কের বাইরে পুলিশ কোনো কাজ করছে না। 

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগ পুলিশের ঘাড়ে থাকায় মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ আগের মতো সক্রিয় হতে পারছে না। এখনও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা। এ ছাড়া লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে তল্লাশি ও টহল কার্যক্রম এখনও জোরদার করতে পারেনি পুলিশ। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট উল্লেখ করে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে সাম্প্রতিক সময়ে সংযুক্ত, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর প্রভাব পুলিশের মাঠ পর্যায়েও পড়েছে। কেউ দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ করতে চাচ্ছেন না। অনেকেই আছেন চাকরি হারানোর আতঙ্কে। 

তবে পুলিশের এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন তুলে তারা বলছেন, মাঠে পুলিশের সঙ্গে যৌথ বাহিনী রয়েছে। তারপরও কেন এত অপরাধ বাড়ছে। পুলিশের অভিযানে যৌথ বাহিনী সার্বিকভাবে সহযোগিতা করলেও পুলিশ নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারেনি গত ছয় মাসেও। অভিযানে সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। অপরাধীর তালিকা এবং ক্রাইমজোন ভাগ করে সম্মিলিত অভিযান এখনও দৃশ্যমান নয়। ফলে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে অপরাধ করে চলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। 

গত রোববার মধ্যরাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানার তালতলা এলাকায় আরিফুল ইসলাম নামে ২৭ বছর বয়সী এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে বাসায় ফেরার পথে ওই যুবক ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। আবার পরিকল্পিত হত্যাও হতে পারে। 

একই রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে গুলি করে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দুইশ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা। রাতেই ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ জড়িতদের কাউকে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান আকন্দ বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই রাতে ধানমন্ডি শঙ্কর এলাকায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। পরে এলাকাবাসী মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করলে গ্রুপটি পালিয়ে যায়। 

এ ছাড়া সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন রিকশারোহী এক নারী। শিশু সন্তান সঙ্গে থাকা ওই নারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছিনতাইকারীরা কোপাতে এলে তিনি প্রাণ রক্ষার্থে সঙ্গে থাকা গহনা ও অর্থ ছুড়ে দেন। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে এই এলাকায় মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে ছিনতাইকারীরা এক যুবকের কবজি কেটে নিয়ে যায়। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে ৭১টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ঢাকা রেঞ্জে। দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনা ঘটেছে ১৭১টি। এখানেও সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা রেঞ্জে। গত মাসে সারা দেশে ২৩১ জন খুন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা রেঞ্জেÑ ৭৬টি। দ্বিতীয় অবস্থানে চট্টগ্রামে ৫১টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৪৪০টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ঢাকা রেঞ্জে। গত জানুয়ারি মাসে ১০৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ৩৪টি ঘটনায়। 

গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত ১৩ মাসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, ৫৬১টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫৮৩টি, হত্যকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৭৭২টি (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ), বিশেষ অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩৭১টি, সহিংসতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩৩টি, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় (ধর্ষণসহ) মামলা হয়েছে ১৯ হাজার ১১টি, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৮১টি, অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। আর দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩ হাজার। সব মিলিয়ে চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি। 

ডিএমপির পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ঢাকায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৭৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতির ঘটনায় ছিল ৪৯টি, দস্যুতার (ছিনতাই) হয়েছে ৩০২টি। সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৯০টি, অপহরণ ঘটেছে ১৬৩টি, পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে ১০৫টি ঘটনায়, দুর্ধর্ষ চুরি ও দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ১৩০০। 

মেট্রোপলিটনের মধ্যেÑ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন (সিএমপি), খুলনা মেট্রোপলিটন (কেএমপি), সিলেট মোট্রোপলিটন এসএমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিট (জিএমপি), রংপুর মেট্রোপলিটনে (আরপিএমপি) ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক।

গত ছয় মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী- সারা দেশে এই সময়কালে ডাকাতির ৩৭৩টি, ছিনতাইয়ের ৮৯৫টি, হত্যার ২৩৫৭টি, সহিংসতার ১০৪টি, অপহরণের ৪৬৬টি, নারী নির্যাতনের দশ হাজার ৩টি ও চুরির ছয় হাজার ২৮৮টি মামলা হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জুলাই-বিপ্লবের পর দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখনও সক্রিয় হতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ পুলিশের মনোবলে দুর্বলতা। দ্বিতীয় কারণ, পুলিশ আগে যেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারত এখন সেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রত্যেক দলের নেতাকর্মী যদি অপরাধে না জড়ায় এবং অপরাধ দমনে পুলিশের পাশে থাকে তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

তিনি বলেন, পুলিশে যেভাবে ঢালাওভাবে বদলি করা হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে একটি নির্দিষ্ট এলাকা সম্পর্কে এবং সেখানকারা অপরাধীদের সম্পর্কে জানা পেশাদার ও অপরাধ নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তাদেরও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের জায়গায় যারা আসছেন তাদের অনেকেই নতুন। অপরাধীরা এই সুযোগটা নিচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে মাঠে আছে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার পাশাপাশি এসব এলাকায় কারা অপরাধ করছে সেই তালিকা করে সে অনুযায়ী অভিযান জোরদার করতে হবে। পুলিশের পেট্রলিং বাড়াতে লজিস্টিক সাপোর্ট আরও বৃদ্ধি করতে হবে। 

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্ট রাজধানীসহ সারা দেশে থানা ও ফাঁড়িসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন। সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এলেও গণহত্যাসহ বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশ চরম সমালোচনার মুখে পড়ে। পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল। ধীরে ধীরে পুলিশ নিজেদের কাজে ফেরার চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। 

অপরাধ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে তারা বলেন, আন্দোলনের সময়ে দেশের কয়েকটি কারাগারে হামলার ঘটনার সময় অনেক অপরাধী পালিয়ে গেছে। পাশাপাশি সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পেশাদার অপরাধী জামিনে বেরিয়ে গেছে। জেল পলাতক ও জামিন পাওয়া অপরাধীরা এখন মাঠে নানা অপরাধ করছে। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয়ে নানা অপরাধে অভিযুক্তরা। এদের গ্রেপ্তারে নানারকম সীমাবদ্ধতাও পুলিশের মধ্যে কাজ করছে। 

মানবাধিকার কর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষক নুর খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুলিশকে বিগত সময়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ব্যাপক মারমুখী ছিল। এসব কারণে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাগুলো ঘটে এবং পুলিশের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতি পুলিশকে কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আর এ কারণে পুলিশ এখনও সক্রিয় হতে পারছে না। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সহিংসতায় অনেকে হতাহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

যা বলছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এদিকে সচিবালয়ে গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে আরও টহল বাড়ানো হবে ও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। তিনি দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে আরও উন্নত করার অবকাশ রয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট চলা অবস্থায় এমন পরিস্থিতি কেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ডেভিল হান্ট অপারেশন চালু করা হয়েছে যাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায় । 

এদিকে আইজিপি বাহারুল আলম গতকাল রাজশাহীতে পুলিশের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে র‍্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যৌথভাবে টহল দেবে। রাজধানীর বনশ্রীর রামপুরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু গত রাতে নয়, আগের রাতেও বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা শনিবার সকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছি র‍্যাব, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও ডিএমপি যৌথভাবে প্যাট্রল  প্রোগ্রাম করবে। এভাবে দেখি উন্নতি হয় কি না। নইলে আমাদের অন্য স্টেপ (পদক্ষেপ) নিতে হবে। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রশ্নে আইজিপি বলেন ‘একটা গোষ্ঠী চাচ্ছে না যে আমরা স্থিতিশীল হই। তারা চেষ্টা করছে। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’ 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় র‌্যাব বিশেষ টহল জোরদার করেছে। ইতোমধ্যে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন অপরাধের হটস্পট চিহ্নিত করে অপরাধীদের তালিকা তৈরির মধ্য দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা