× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সেনা সদরের ব্রিফিং

অপরাধের হটস্পটগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে সেনাবাহিনী

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৫৫ এএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:০৩ এএম

 অপরাধের হটস্পটগুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে সেনাবাহিনী

অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের অরাজক পরিস্থিতিতে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতায় মাঠে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী শুরু করে বিশেষ অভিযান। সোমবার সেই বিশেষ অভিযানের ৫০ দিন পার হয়েছে। এই সময়ে সেনাবাহিনী মব জাস্টিসে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি প্রতিহত করতে মাঠে সক্রিয় থেকেছে। সেনাবাহিনীর তৎপড়তায় ঢাকাসহ সারা দেশে মব জাস্টিস-চাঁদাবাজি-হত্যা আগের চেয়ে কমেছে। পাশাপাশি অপরাধের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে সেখানে অভিযান জোরদার করেছে সেনাবাহিনী।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঢাকাসহ সারাদেশের অপরাধের হটস্পট চিহ্নিত করেছি। হটস্পটগুলো সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের অস্থীতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে সেনাবাহিনী গত ৬ মাস মাঠে নিরলসভাবে কাজ করছে। সরকারকে সহযোগিতায় এটি সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাঠে থাকার নজির।’

সারাদেশে মব জাস্টিসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘শুধু মব জাস্টিস নয়, চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও হত্যা আগের চাইতে কমেছে। গত দুই মাস আগে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল ২৫০ কিন্তু বর্তমানে কমে ১২০ এ এসেছে। চুরি ৮৫০ এর মতো হতো বর্তমানে ৬০০ এর নিচে নেমে এসেছে। হত্যা সাড়ে তিনশ ছিল বর্তমানে ১২০ এ নেমে এসেছে। সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

বান্দরবানের লামায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক অপহরণ হয়েছে। তাদের উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী লামা থেকে ২০ জনের মতো শ্রমিককে গুম করা হয়েছে। দুষ্কৃতিকারী কোনো একটি দল অপহরণ করেছে। তাদেরকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীরও অভিযান চলমান। অপহরণকারীরা একটি নম্বর দিয়েছে, হয়তো টাকা চেয়েছে তারা। তাদেরকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম চলমান।’

পার্বত্য অঞ্চলে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পেট্রোলিংয়ের কারণে কুকি-চিনের দৌরাত্ম্য অবরোধ করতে পেরেছি। গতকালও (রবিবার) কুকি-চিনের দুটি ক্যাম্প (আস্তানা) ধ্বংস করেছি। এছাড়াও কুকি-চিনের অত্যাচারে বাড়িছাড়া ১১টি বম পরিবারকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সহয়তায় তাদের গ্রামে আনা হয়েছে। কুকি-চিনের বিরুদ্ধে আভিযানিক চলমান।’

ঢাকার মোহাম্মদপুর ও বনানীতে সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্য ও কিছু অপবসরপ্রাপ্ত অফিসার ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনের আওতায় তাদের বিচার করা হবে। যারা অপবসরপ্রাপ্ত সদস্য তাদের দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার করা হবে। কোনো অন্যায়কে সেনাবাহিনী কখনও প্রশ্রয় দেয় না। সেনাবাহিনী সব সময় সততার সঙ্গে আছে এবং থাকবে। জনগণের আস্থার জায়গায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পাশে পাবেন।’

সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার জায়গা অর্জন করতে কোন কোন পন্থা অবলম্বন করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী সব সময় নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করে কাজ করে। জনগণের আস্থার জায়গায় সেনাবাহিনী সব সময় কাজ করছে।’

সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করতে গিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী কোনো চ্যালেঞ্জ ফেস করছে না। তবে আমরা দীর্ঘ ছয় মাস বাইরে নিয়োজিত রয়েছি। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, এসব গুজব মনিটরিংয়ে সেনাবাহিনীর কোনো তৎপরতা আছে কি না- জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকারোর মত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। সবাই মত প্রকাশ করবে। সেনাবাহিনী কাউকে বাধা দিচ্ছে না। তবে কে, কেমন, কি মত প্রকাশ করছে তা কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ এর বিচারের দায়ভার সাংবাদিকদের উপর দিয়ে দিতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গত ৫০ দিনে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ১৭২টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৫২৭ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এই সময়কালে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে (মূলত গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকায়) ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং এ ধরণের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভুত ৩০ বার মূল সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে দেশের ২ হাজার ৯৭টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে গুটি কয়েক (বেক্সিমকো গ্রুপ, সাউদার্ন ডিজাইনারস লিমিটেড, স্বাধীন গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড এবং সেলফ ইননোভেটিভ ফ্যাশন লিমিটেড) ছাড়া সকল কারখানাই চালু রয়েছে।’

সেনা সদরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গত এক মাসে ৪২টি বিভিন্ন ধরণের বিশৃংখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ৩টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ছিল ১৬টি। গত এক মাসে যৌথ অভিযানে ৩৩৪ জন মাদক কারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত এক মাসে বিভিন্ন ধরণের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ২ হাজার ১৪২ জন ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসকল কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সার্বক্ষণিকভাবে পালন করে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৪১ জন এখনো চিকিৎসাধীন।’

দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা প্রদানসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে দেশের ৬২টি জেলায় সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা